ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সিস্টেম দায়ী বলছেন অনেকেই

প্লেগারিজমের অভিযোগ ঢাবির পাঁচ শিক্ষকের বিরুদ্ধে

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ৩ অক্টোবর ২০১৭

প্লেগারিজমের অভিযোগ ঢাবির পাঁচ শিক্ষকের বিরুদ্ধে

সোহেল তানভীর ॥ ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের (ঢাবি) পাঁচ শিক্ষকের বিরুদ্ধে সম্প্রতি প্লেগারিজমের অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে গত সিন্ডিকেট সভায় তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে দুই শিক্ষক ও শিকাগো প্রেস। প্লেগারিজমের জন্য বিশ^বিদ্যালয়ের সিস্টেমকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা। তারা বলেছেন, বিদেশের বিশ^বিদ্যালয়ে প্লেগারিজমকে খুবই গুরুত্ব দেয়া হয়। কিন্তু আমাদের বিশ^বিদ্যালয়ে নেই কোন পলিসি। নেই কোন সচেতনতা। প্লেগারিজম বিষয়টি কি সেটা জানে না অনেক শিক্ষক। আর এই অবহেলার জন্যই পিএইচডি থিসিস ও প্রবন্ধে প্লেগারিজম হচ্ছে। থিসিসের নিরীক্ষককে দায়ী করে সংশ্লিষ্ট অনেক শিক্ষক বলেছেন, সার্বিক থিসিস পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে যে নিরীক্ষক থাকেন তিনি কি করেন? মূল দায়িত্ব তার। তিনি যদি বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেন তাহলে সেখানে প্লেগারিজম হয় কিভাবে? নিরীক্ষায় অবহেলার জন্যই প্লেগারিজম হচ্ছে। তাই নিরীক্ষককে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে। তাহলে প্লেগারিজম হবে না। সূত্র জানায়, বিশ^বিদ্যালয়ে অধিকাংশ প্রবন্ধে প্লেগারিজমের সমস্যা রয়েছে। কারণ এখানে কোন পলিসি নেই। তাছাড়া লবিংয়ের মাধ্যমে প্রবন্ধ প্রকাশ করা হয় বলে জানান তারা। টার্নিটিং সফটওয়্যার সবার জন্য উন্মুক্ত করতে পারলে প্লেগারিজম হবে না বলে অনেক শিক্ষক মত দিয়েছেন। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে যত প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় তা সম্পাদনার কাজ করে থাকেন ‘সমাজবিজ্ঞান অনুষদ সম্পাদনা পরিষদ’। বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যানদের সমন্বয়ে এই পরিষদ গঠিত। কোন প্রবন্ধ ছাপানো হবে আর কোনটা ছাপানো হবে না সেটা সম্পাদনা পরিষদের মিটিংয়ে নির্ধারণ হওয়ার কথা। কিন্তু বিগত সাড়ে আট বছরে সমাজবিজ্ঞান গবেষণা সম্পাদনা পরিষদের কোন মিটিং হয়নি বলে জানা গেছে। বিগত এ সময়ে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিনের দায়িত্বে ছিলেন অধ্যাপক ফরিদউদ্দিন আহমেদ। অধ্যাপক ড. এ জে এম শফিউল আলম ভূঁইয়া ভারপ্রাপ্ত ডিন হওয়ার পরে বিগত তিন মাসে দুইবার মিটিং হয়েছে বলে অনুষদ সূত্রে জানা গেছে। আর্টিক্যাল প্রকাশের এক বছর পর গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক সামিয়া রহমান ও ক্রিমিনোলজি বিভাগের সৈয়দ মাহফুজুর রহমান মারজানের বিরুদ্ধে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ আনা হয়। এতদিন পর হঠাৎ করে কেন এমন অভিযোগ আনা হয়েছে এমন প্রশ্ন এখন অনেক শিক্ষকের। উদ্দেশ্যমূলকভাবে অনেক শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্লেগারিজমের অভিযোগ আনা হয়েছে বলেও প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে বিশ^বিদ্যালয়ে আলোচনা-সমালোচনা এখন তুঙ্গে। ব্যবসা শিক্ষা অনুষদভুক্ত ট্যুরিজম এ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার পিএইচডি থিসিসে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ আনে একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। একাডেমিক লেখায় চৌর্যবৃত্তি শনাক্তকারী সফটওয়্যার টার্নিটিংয়ে পরীক্ষা করে থিসিসটিতে সার্বিকভাবে ৪৯ শতাংশ চৌর্যবৃত্তি আছে বলে সংশ্লিষ্টদের কাছে অভিযোগপত্র প্রদান করেন তিনি। চৌর্যবৃত্তির প্রমাণস্বরূপ মূল থিসিস পেপারের স্ক্রিনশট এবং যেসব উৎস থেকে কপি করা হয়েছে সেগুলোর শতকরা হারও তুলে ধরা হয় অভিযোগপত্রে। সম্প্রতি ‘সোসিও ইকোনমিক ইমপ্যাক্ট অব ট্যুরিজম ইন কক্সবাজার : এ্যা স্টাডি অব লোকাল রেসিডেন্টস এটিচিউড’ শিরোনামে অধ্যাপক মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া পিএইচডি থিসিস সম্পন্ন করেন। থিসিসটিতে মূল রচনার রেফারেন্স না দেয়া এবং অন্যের রচনা থেকে হুবহু কপি করাসহ থিসিসের প্রত্যেকটি পৃষ্ঠায় চৌর্যবৃত্তি করা হয়েছে বলে অভিযোগ আনা হয়। চৌর্যবৃত্তির অভিযোগের সত্যতা সম্পর্কে জানতে চাইলে অধ্যাপক মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া জনকণ্ঠকে বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। কেন এবং কোন উপায়ে অভিযোগ করা হয়েছে জানি না। এদিকে, ট্যুরিজম এ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষক রুহুল আমিন ও নুসরাত জাহানের বিরুদ্ধে সেল্ফ প্লেগারিজমের অভিযোগ আনে একই বিভাগের অধ্যাপক ড. আফজাল হোসেন। ব্যর্থ ও অযোগ্য চেয়ারম্যান হিসেবে আখ্যায়িত করে তার অপসারণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল বিভাগটির প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগে কুষ্টিয়া ইসলামিক বিশ^বিদ্যালয় থেকে তাকে অপসারণ করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে। গণমাধ্যমে এই নিয়ে একাধিক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। যার বিরুদ্ধেই রয়েছে এমন অভিযোগ, বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন তার অভিযোগ আমলে নেয়ায় ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। জানতে চাইলে অধ্যাপক আফজাল হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, আমি রুহুল আমিন ও নুসরাত জাহানের আর্টিক্যালগুলোতে প্লেগারিজম পেয়েছি। আশা করি, বিশ^বিদ্যালয়ের আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আপনার বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ আছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি এখন আর কথা বলতে রাজি না। আমার বিরুদ্ধে নানান ষড়যন্ত্র হয়েছে। চৌর্যবৃত্তির অভিযোগকে ভিত্তিহীন হিসেবে আখ্যায়িত করে শিক্ষক রুহুল আমিন জনকণ্ঠকে বলেন, আমার যাবতীয় লেখায় যথাযথভাবে তথ্যসূত্র উল্লেখ করা হয়েছে। লেখায় কোন ধরনের কপি করা হয়নি। অভিযোগ নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির ওপর আমার যথেষ্ট আস্থা আছে। আশা করি, অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত হবে। প্লেগারিজমের ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে হবে বলে মনে করেন বিশ^বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে সেমিনার আয়োজন করার দাবিও জানিয়েছেন অনেকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, কোনটা প্লেগারিজম সেটা তদন্ত করার পরে জানা যাবে। অভিযোগ প্রমাণের আগে যারা মিডিয়া ট্রায়াল তৈরি করছেন তারা ঠিক করছেন। কে প্লেগারিজম করছে আর কে করে নেই সেটা তদন্ত কমিটির রিপোর্টের পরে দেখা যাবে। সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, বিশ^বিদ্যালয়ে প্লেগারিজম আগেও ছিল এখনও আছে। আর প্লেগারিজমের জন্য স্পষ্ট ব্যাখ্যা রয়েছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত কমিটি বিষয়টি দেখবে।
×