ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাম ফেস্টিভ্যালে ‘গেস্ট অব অনার’ করা হয়েছে বাংলাদেশকে

দক্ষিণ কোরিয়ায় বাঙালী সংস্কৃতির বর্ণাঢ্য উপস্থাপনা

প্রকাশিত: ০৫:০১, ১ অক্টোবর ২০১৭

দক্ষিণ কোরিয়ায় বাঙালী সংস্কৃতির বর্ণাঢ্য উপস্থাপনা

মোরসালিন মিজান, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ॥ কী যে সুন্দর দেশ দক্ষিণ কোরিয়া! আশ্চর্য পরিপাটি! বিশেষ করে ছাংওউন শহরটি পাহাড়ের। সাগরের। এই শহরে পাহাড়ের সবুজ আর সাগরের নীল একে অন্যকে আলতো করে ছুঁয়ে দিয়েছে। দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। ঘরের মেঝের মতো ঝকঝকে তকতকে রাস্তা। সেই রাস্তার দুই পাশ তাজা রঙিন ফুলে সাজানো। আর আকাশের দিকে তাকাতেই মন আপনি গেয়ে ওঠে ‘নীল আকাশে কে ভাসালে সাদা মেঘের ভেলা রে ভাই সাদা মেঘের ভেলা।’ হ্যাঁ, বাংলাদেশের শরতের আকাশ যেন পকেটে ভাঁজ করে এখানে নিয়ে এসেছে বাঙালীরা। দক্ষিণ কোরিয়ায় বর্তমানে প্রায় ১৫ হাজার বাংলাদেশীর বাস। বড় অংশটি শ্রমিক। সংখ্যায় ১২ হাজার। বিভিন্ন শহরে বাস করলেও, এখন অনেকেই ছাংওউন শহরে অবস্থান করছেন। অন্যান্য দেশের শ্রমিকরাও এখানে সমবেত হয়েছেন। কারণ বন্দর নগরী এখন উৎসব মুখর। এখানে চলছে বর্ণাঢ্য বর্ণিল বহুজাতিক সাংস্কৃতিক উৎসব। অভিবাসীদের নিয়ে আয়োজিত উৎসবটি মাইগ্রেন্ট আড়িরাং মাল্টি কালচারাল ফেস্টিভ্যাল নামে পরিচিত। ছোট করে বলা হয় মাম ফেস্টিভ্যাল। কেউ কেউ বলেন এমএএমএফ বা মাম্ফ। ব্যতিক্রমী এই উৎসবের আয়োজক গিয়ংনাম মাইগ্রেন্ট লেবার এ্যান্ড ওয়েলফেয়ার সেন্টার। বাইরের দেশগুলো থেকে কাজ করতে আসা শ্রমিকদের সঙ্গে কোরিয়ান নাগরিকদের সম্পর্ক উন্নয়ন ও পাস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে চমৎকার ভূমিকা রেখে চলেছে এই সেন্টার। নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে প্রতিবছর তারা আয়োজন করে মাম ফেস্টিভ্যালের। শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে এবারের উৎসব। ইপিএস ভুক্ত ১২টি দেশ এতে অংশগ্রহণ করছে। দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে শ্রীলঙ্কা নেপাল পাকিস্তান ইন্দোনেশিয়া ভিয়েতনাম কম্বোডিয়া মঙ্গোলিয়া উজবেকিস্তান থাইল্যান্ড চীন ও ফিলিপিন। আর রয়েছে বাংলাদেশ। তবে এবার শুধু অংশগ্রহণ নয়, উৎসবের ‘গেস্ট অব অনার’ করে বিরল সম্মান দেখানো হয়েছে বাংলাদেশকে। ফলে আয়োজনের মূল আকর্ষণ হয়ে উঠেছে আমার সোনার বাংলা। মাল্টি কালচারাল ফোরামে অন্য ১১ দেশ তাদের সংস্কৃতি তুলে ধরতে যে সময় পাচ্ছে, তার থেকে কয়েকগুণ বেশি সময় ও সুযোগ দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশকে। বহু দূরের ভিন্ন সংস্কৃতির দেশ দক্ষিণ কোরিয়া। নিজের ভাষায় প্রতি প্রেম। এমনকি ইংরেজী জানার কোন আগ্রহ তাদের নেই। ইপিএসভুক্ত অন্য দেশগুলোর অভিবাসীরাও বাংলা জানে না। অথচ মঞ্চ থেকে ভেসে আসা ভাওয়াইয়ার সুরে যে কান্না, তাদের ছুঁয়ে দিচ্ছে! তাকডুম তাকডুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল...। সেই ঢোলের সঙ্গে নেচে উঠছেন সবাই। করতালিতে ফেটে পড়ছেন। বাঁশের বাঁশি নিয়ে সে কী আগ্রহ! নিজের বাঁশিটি বাজিয়ে মঞ্চ থেকে নেমে আসার পর শিল্পীর কাছে ছুটে যাচ্ছেন ভিনদেশী শ্রোতা। বাঁশিতে ফুঁ দিচ্ছেন। রহস্যটা ধরে ফেলতে চাইছেন এখনই! বিভিন্ন রঙের, স্বতন্ত্র ভাষা ও সংস্কৃতির মানুষের পাশে বসে দাঁড়িয়ে এমন দৃশ্য দেখার পর চোখের জল কি ধরে রাখা যায়! বাঙালী সংস্কৃতির এই জাগরণের সুযোগ করে দিয়েছে মাম ফেস্টিভ্যাল ২০১৭। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া উৎসব চলছে একাধিক মিলনায়তন, কালচারাল পার্ক ও বাইরের খোলা প্রাঙ্গণে। জমজমাট উৎসবের প্রথম দিন দুইটি মঞ্চে পারফর্ম করেন বাংলাদেশের শিল্পীরা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে লাল-সবুজের বাংলাদেশ তিন দিনব্যাপী উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয় শহরের ইওংজি কালচারাল পার্কে। এখানে প্রবেশ করে দেখা যায়, চমৎকার খোলা মাঠ। সবুজ কার্পেটে মোড়ানো। উঁচু স্থায়ী মঞ্চের সামনের অংশ সমতল। আর একবারে পেছনের অংশে দেয়াল তুলে দাঁড়িয়ে আছে ছোট ছোট টিলা। সর্বত্রই অভিবাসীদের সরব উপস্থিতি। সমতল অংশে কয়েক হাজার চেয়ার পাতা। প্রতিটি দেশের জন্য দর্শক সারিতে আলাদা আলাদা করে জায়গা সংরক্ষণ করা হয়েছে। তারও আগে থেকে প্রস্তুত ছিল মঞ্চ। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় উৎসব উদ্বোধন করার কথা। দু এক মিনিট আগে পরে হবে? বাঙালীরা কেউ কেউ ভাবছিলেন বৈকি! কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়াতে নির্দিষ্ট সময়ের এক মিনিটও হের ফের হয় না। তাই দেখা গেল ঘড়ির কাঁটা ৭টার ঘরে স্থির হতেই মঞ্চের বাতিগুলো জ্বলে উঠল একসঙ্গে। শুধু আলোর খেলা আর ডিজিটাল ব্যাকড্রপের কল্যাণে বদলে যেতে থাকল মঞ্চের ছবি। দুই উপস্থাপক এসে স্বাগত জানালেন সবাইকে। একজন কোরিয়ান। সঙ্গত কারণেই সুন্দর স্মার্ট তরুণী। কিন্তু পাশে যিনি দাঁড়িয়ে তিনি আরও বেশি জনপ্রিয় বলে জানা গেল। নাম খান। হ্যাঁ, বাংলাদেশের যুবক। চমৎকার শুরু করলেন তারা। প্রথমে ছিল স্থানীয় একটি স্কুলের ছেলে মেয়েদের দলীয় সঙ্গীত পরিবেশনা। কোরিয়ার ভাষায় গান। ফলে কথা বোঝার কোন সুযোগ নেই। তবে অনুমান করা গেল, পুতুলের মতো চেহারা আর ইউনিফর্ম পরা ছেলে মেয়েরা ছড়া গান করছে। গান শেষে খুব সুশৃঙ্খলভাবে তারা মঞ্চ ছেড়ে গেল। রং বদলে যাওয়া মঞ্চে এর পর একক নৃত্য। একলা এক নারী এত বড় একটি মঞ্চকে পূর্ণতা দিলেন। তার ধ্রুপদী নৃত্য মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করলেন দর্শক। এর পর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। মঞ্চে আমন্ত্রণ জানানো হলো আয়োজক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের। দুজন করে মোট ছয়জন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে উদ্বোধন ঘোষণা করলেন মাম ফেস্টিভ্যালের। ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে আতশবাজি। সন্ধ্যার আকাশ মুহূর্তেই রঙিন হয়ে উঠল। এ সময় উৎসবে বাংলাদেশকে গেস্ট অব অনার করার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়। সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরকে সকলের সঙ্গে পরিচিত করিয়ে দেন আয়োজকরা। একইভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউল থেকে উৎসব উপলক্ষে আসা রাষ্ট্রদূত জুলফিকার রহমানসহ অন্যদের। বাংলাদেশকে গেস্ট অব অনার করায় আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বাঙালীর মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসটি ছোট পরিসরে সুন্দর তুলে ধরে তিনি বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘকালের বন্ধুত্ব। স্বাধীনতার পর থেকেই দুটি দেশ পরস্পরের বন্ধু হয়ে আছে। কোরিয়া প্রসঙ্গে বাঙালীর কবি রবীন্দ্রনাথ থেকে উদ্ধৃত করেন তিনি। বলেন, দুটি দেশই সাংস্কৃতিকভাবে ভীষণ সমৃদ্ধ। দক্ষিণ কোরিয়ার লোক সঙ্গীতের প্রতি মুগ্ধতার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমাদের বাউল সঙ্গীত ইউনেস্কোর ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। একই স্বীকৃতি অর্জন করেছে বাঙালীর বর্ষবরণ উৎসবের অনুষঙ্গ ঐতিহ্যবাহী মঙ্গল শোভাযাত্রা। তিনি বলেন, উৎসবে বিশেষভাবে উপস্থাপন করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক শক্তির স্বীকৃতি দিলো মাম ফেস্টিভ্যালও। ছোট একটি সাংস্কৃতিক দল নিয়ে উৎসবে যোগ দিলেও বাংলাদেশ তার সমৃদ্ধ সংস্কৃতিকেই সবার সামনে তুলে ধরবে বলে জানান মন্ত্রী। বক্তব্য শেষ হলে বর্ণাঢ্য পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসেন বাংলাদেশের শিল্পীরা। আলোকোজ্জ্বল মঞ্চ। ততোধিক আলো ছড়ায় বাংলাদেশ থেকে আসা নৃত্যশিল্পীদের একটি দল। মডেল হিসেবে পরিচিত হলেও মৌ যে নাচেরই শিল্পী, সেটা বোঝা যায়। তাকে সামনে রেখেই শুরু হয় পরিবেশনা। সিনিয়র শিল্পী আব্দুর রশিদ, ফারহানা চৌধুরী তাকে সঙ্গ দিয়েছেন। দলে আরও ছিলেন ফারহানা খান, লুৎফর রহমান ফারুকী, হেনা হোসেন, সুপ্রিয়া ও নঈম। শিল্পীরা বাংলাদেশকে তুলে ধরতে বেছে নেন ‘মাটির সবুজ থেকে সূর্যের লাল/বাংলাদেশের বুক এতই বিশাল’ গানটিকে। খুব ভালো সিলেকশন না হলেও, গানের কথার সঙ্গে মিলিয়ে চিরায়ত বাংলাকে তুলে ধরার সুযোগ ছিল। সেটি কাজে লাগান নৃত্য শিল্পীরা। নদী নৌকো মাঝি কুলা কলসি মাছ ধরাসহ গ্রামীণ জীবন ও লোক সংস্কৃতির ছবি বিদেশের মঞ্চে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেন তারা। এ সময় বিভিন্ন দেশের দর্শকদের অভিভূত হয়ে নাচ উপভোগ করতে দেখা যায়। পরের গানটি ছিলÑ চলো বাংলাদেশ/চলো বিশ্ব উঠানে চলো...। এই গানে একটা আহ্বান আছে। উৎসবের আমেজ পাওয়া যায় সুরে। শিল্পীরা নাচেনও সুন্দর। হাত পা আঙ্গুলে চোখের এক্সপ্রেশনে ছন্দ ছিল। ভাষা ছিল। বিদেশী দর্শকদের অনেকে পুরোটা সময় করতালী দিয়ে তাদের ভাল লাগার কথা জানান। আদিবাসী দুই শিল্পীর নৃত্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পর্ব শেষ হয়। পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী বিজু উৎসবকে নাচের ভাষায় তুলে ধরেন শিল্পীরা। পরে অন্য দেশের শিল্পীরা নিজ দেশের সঙ্গীত নৃত্য পরিবেশ করেন। ১৮০০ শিশুর সামনে বাংলাদেশ এর আগে স্থানীয় সময় দুপুর দেড়টায় ছ্যাংওউন কালচারাল ফাউন্ডেশনের বড় মিলনায়তনটি ছেড়ে দেয়া হয় কেবল বাংলাদেশর জন্য। বিশাল এই মিলনায়তনে ১৮০০ আসন। ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায়, প্রতিটি আসন পরিপূর্ণ! দর্শক সারিতে বসে থাকা সবাই শিশু কিশোর। শিশু কিশোর কেন? জানতে চাইলে আয়োজকরা বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার আগামী প্রজন্মকে বাইরের দেশগুলোর সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দিতে চাই আমরা। অন্যের দেশের প্রতি তাদের রেসপেক্ট তৈরি হোক, চাই। এ কারণেই উৎসবে তাদের এত অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হয়েছে। বাচ্চারাও খুব মজা করছিল। বাচ্চা? নাকি পুতুল? বার বার দেখে সন্দেহ দূর করতে হয়। উৎসবে এসে আনন্দ আর ধরে না তাদের। অন্য একটি দেশের মানুষ, দেখলেই ওরা চিনে ফেলে। এবং সঙ্গে সঙ্গে হাত বাড়িয়ে দেয় হ্যান্ডশেক করার জন্য। বাংলাদেশ থেকে আসা সবাইকে তুমুল করতালির মাধ্যমে বরণ করে নেয়। সব দেখে অভিভূত সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর মঞ্চে ওঠে বলেন, আমি এখানে গুরুগম্ভীর কিছু বলার কথা ভেবে এসেছিলাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, তোমাদের সঙ্গে নাচি আর গাই শুধু। মন্ত্রীর বক্তব্য বাংলা থেকে কোরিয়ান ভাষায় অনুবাদ করে শুনানো হলে ভীষণ খুশি হয় বাচ্চারা। তুমুল করতালি দিয়ে মন্ত্রীর ইচ্ছার প্রতি সমর্থন জানায়। এরপর মঞ্চে পরিবেশনা নিয়ে আসেন বাংলাদেশের শিল্পীরা। ভূপতি ভূষণ বর্মাকে বাংলাদেশে ক’জন চেনেন, জানা নেই। তবে তার কণ্ঠে ভাওয়াইয়া যে কী যতেœ লালিত হচ্ছে মঞ্চে ওঠার পর জানা হয় সবার। কুদ্দুছ বয়াতির পরিবেশনার ধরনই আলাদা। প্রাণবন্ত। তার লোকগান। আকর্ষণীয় উপস্থাপনা। কখনও বালিশকে ঘোড়া বানালেন। কখনও নিজেই হয়ে গেলেন লাজুক বউটি। গানের কথায়ও কিছু পরিবর্তন আনলেন। ‘গ্রামের নওজুয়ান হিন্দু মুসলমান’ গাইতে গাইতেই বদলে গেল কথা। একই সুরে গাইলেনÑ কোরিয়ার নওজুয়ান... বঙ্গবন্ধুর নওজুয়ান...। উৎসবে একেবারে নবীন গায়িকাটি সোনিয়া খাতুন। তার গায়কী দেখে অভিভূত হয়েই লালনের দেশ থেকে তুলে আনা হয়েছে কোরিয়ায়। ভাল গান করেছেন তিনিও। ছেউটিয়ার লালনকেই পাওয়া গেল তার কণ্ঠে। এখানেও ছিল নৃত্যের পরিবেশনা। তাকডুম তাকডুম বাজে, আজি বাহাহাল করিয়া ও নাও ছাড়িয়া দেÑ এই তিন গান দিয়ে যেন বাংলাদেশ নামের মালাটি গেঁথে নেন মৌ ও তার দলের সদস্যরা। নাচের নিখুঁত মুদ্রা মিলনায়তনের পরিবেশটিকে দারুণ উৎসব মুখর করে তুলে। দ্বিতীয় নাচটিতে ফিউশন করার চেষ্টা করেন তারা। কত্থক, ভরত নাট্যম ও মনিপুরী নাচের সুন্দর একটি কম্পোজিশন। ফলে ভিন্ন একটা স্বাদ পাওয়া হয় দর্শকের। শেষ নাচের জন্য বেছে নেয়া হয় ‘পুবের আকাশে সূর্যের হাসি’, ‘চল চল চল’, ‘ও পৃথিবী এবার এসে বাংলাদেশ চিনে নাও’ গান তিনটিকে। বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার পতাকা প্রদর্শন করে শেষ হয় অনন্য সাধারণ কোরিওগ্রাফি। তবে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশকে আর সবার থেকে আলাদা করে দেয় ঢোল বাঁশি ও দোতরা। নয়ন মিয়ার ঢোলের সঙ্গে পুরো মিলনায়তন যেন নেচে ওঠে। তার লম্বা চুল বাজানোর ভঙ্গী খুঁটিয়ে দেখে শিশুরা। নির্মল দাসের দোতরা শুনে মনেই হয় না, বিদেশের মাটি! তবলার মাস্টার এনামুল হক ওমর। তার বাজানোটাও উপভোগ করেন শ্রোতা। আর শহীদুল ইসলামের হাতে ছিল বাঁশি। সুরের মায়ায় ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। যেন হ্যামিলনের সেই বাঁশিওয়ালা! মিলনায়তনের বাইরে খোলা মঞ্চেও বাংলাদেশের শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এ সময় শহীদুল ইসলামের বাঁশি শুনে ছুটে আসেন এক কোরীয় শ্রোতা।
×