ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

সৈয়দ শামসুল হককে নিবেদিত মিলন কান্তির আবৃত্তিসন্ধ্যা

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

সৈয়দ শামসুল হককে নিবেদিত মিলন কান্তির আবৃত্তিসন্ধ্যা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কবিতার শিল্পিত উচ্চারণে স্মরণ করা হলো সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হককে। বাংলার আলপথ ধরে চলা এই কবিকে জানানো হলো তার প্রথম প্রয়াণবার্ষিকীর প্রণতি। তাকে নিবেদন করে পাঠ করা হলো রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দসহ বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি কবিদের কবিতা। দুই হাজার পঙ্ক্তিমালায় সাজানো এসব কবিতা পাঠ করলেন খ্যাতিমান যাত্রাশিল্পী মিলন কান্তি দে। শুক্রবার ছুটির দিনে শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত হলো এ আবৃত্তিসন্ধ্যা। দেশ অপেরা পরিবেশিত এ আবৃত্তিসন্ধ্যার আয়োজন করে প্রকাশনা সংস্থা জ্যোতিপ্রকাশ। কবিতায় সাজানো এ অনুুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন সৈয়দ শামসুল হকের সহধর্মিণী কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক। প্রধান অতিথি ছিলেন নাট্যজন আতাউর রহমান। সভাপতিত্ব করেন জ্যোতিপ্রকাশের উপদেষ্টা ও গবেষক মোহসীন হোসাইন। ব্যতিক্রমী এ আবৃত্তি সন্ধ্যায় পাঠ করা হয় সৈয়দ শামসুল হকের ৮টি কবিতা। এগুলোর মধ্যে ছিল ‘আমার পরিচয়’, ‘নুরলদীনের সারাজীবন’, ‘মুছে ফেল মিছে অশ্রু তোমার’, ‘নিজেকে ঠিক তোমার জন্য’, ‘পরানের গহিন ভিতর’ ও ‘মধুসূদন রূপে অমলেন্দু বিশ^াসকে দেখে’। এই আবৃত্তিশিল্পীর উচ্চারণে উঠে আসে মাইকেল মধূসুদন দত্তের ‘মেধনাদ বধ মহাকাব্যের প্রথম সর্গ’ ও ‘বঙ্গভাষা’। বিশ^কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে আশ্রয় করে পাঠ করেন ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’, ‘সোনার তরী’, ‘দেবতার গ্রাস’, ‘১৪০০ সাল’, ‘দুই বিঘা জমি’ ও ‘সামান্য ক্ষতি’। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের পঠিত কবিতাগুলোর মধ্যে ছিল ‘বিদ্রোহী’, ‘খেয়াপারের তরণী’, ‘মানুষ’ ও ‘সিন্ধু’। রূপসী বাংলা কবি জীবনানন্দ দাশকে আশ্রয় করে পাঠ করেন ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি’ ও ‘বনলতা সেন’। শিল্পীর কবিতাপাঠের ধারাবাকিতায় উচ্চারিত হয় সুকান্ত ভট্টাচার্যের দুটি কবিতা। এগুলো হলোÑ ‘ছাড়পত্র’ ও ‘উদ্যোগ’। মিলন কান্তির এই কবিতা পরিবেশনায় উপস্থাপিত হয় শামসুর রাহমানের কবিতা ‘অভিশাপ দিচ্ছি’ ও ‘ধন্য সেই পুরুষ’। পাঠ করেন নির্মলেন্দু গুণের কবিতা ‘আমি আজ কারও রক্ত চাইতে আসিনি’ ও ‘স্বাধীনতা এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো’। শিল্পীর পরিবেশনায় ছিল আতাউর রহমানের তিনটি কবিতা ‘নাটকের সংসার’, ‘মহাযাত্রা-১’ ও ‘জীবনের প্রতিভাস’। এছাড়াও পঠিত হয় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা ‘কেউ কথা রাখেনি’, ভাস্কর চৌধুরীর ‘আমার বন্ধু নিরঞ্জন’, পূর্ণেন্দু পত্রীর ‘সেই গল্পটা’ ও রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ‘বাতাসের লাশের গন্ধ’। সব শেষে সৈয়দ হককে নিবেদন করে শিল্পী পাঠ করেন নিজ রচিত কবিতা ‘হে বাংলার কবি’। হ্যামলেট নাটকের পঞ্চম মঞ্চায়ন উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের বিশ্বব্যাপী সমাদৃত নাটক ‘হ্যামলেট’। সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক মৃত্যুর আগে এই নাটকটির অনুবাদ করেছিলেন। প্রযোজনাটি মঞ্চে এনেছে শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা বিভাগ। নির্দেশনা দিয়েছেন নাট্যজন আতাউর রহমান। শুক্রবার ছুটির দিনের সন্ধ্যায় নাটকটির পঞ্চম মঞ্চায়ন হলো শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে। প্রযোজনাটিতে উঠে এসেছে মানুষের সমষ্টিগত জীবনের ইতি ও নেতির দ্বন্দ্ব। নাট্যকাহিনীর সূচনা হয় ডেনমার্কের রাজা হ্যামলেটের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে, যিনি ছিলেন তরুণ যুবরাজ হ্যামলেটের জনক। রাজার মৃত্যুর পর তার কনিষ্ঠ ভ্রাতা ক্লডিয়াস, যুবরাজ হ্যামলেটের পিতৃব্য সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং তার অগ্রজের স্ত্রী ও যুবরাজ হ্যামলেটের জননী গারট্রুডের সঙ্গে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। জনককে হারানোর ব্যাখ্যা, জননীর সঙ্গে পিতৃব্যের পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হওয়া এবং সর্বোপরি পিতৃব্যের সিংহাসনে আসীন হওয়া, যুবরাজ হ্যামলেটের জীবনের মর্মমূলে নাড়া দেয়। যুবরাজ প্রায় শোকে-দুঃখে পাগল হয়ে পড়েন। তিনি কিছুতেই এই দুর্বিষহ অন্যায় মেনে নিতে পারেন না। হ্যামলেটের পিতার প্রেতাত্মা জীবনের এই দুঃসহ সময়ে তার সামনে আবির্ভূত হয়ে জানিয়ে দেন যে, প্রচারিত হয়েছে তিনি সর্প দংশনে নিহত হয়েছেন। প্রকৃত সত্য হলো তার কনিষ্ঠ ভ্রাতা ক্লডিয়াস কানে বিষ ঢেলে তাকে হত্যা করেছে। মন্ত্রী পলোনিয়াস হ্যামলেটের জননী রানী গারট্রুডের ঘরে মাতা-পুত্রের কথোপকথন শোনার জন্যে আড়ি পাততে গিয়ে যুবরাজ হ্যামলেটের তরবারির আঘাতে নিহত হয়। হ্যামলেট তাকে রাজা ক্লডিয়াস ভেবে ভুলবশত হত্যা করে। পলোনিয়াসের কন্যা এবং যুবরাজ হ্যামলেটের প্রেমিকা ওফেলিয়া পিতার মৃত্যুতে মনোবেদনায় ভেঙ্গে পড়ে এবং জলে ডুবে আত্মহত্যা করে জীবনের জ্বালা মেটায়। পিতা ও ভগ্নির মৃত্যুতে মন্ত্রীপুত্র লেয়ার্তেস প্রায় পাগল হয়ে যান। রাজা ক্লডিয়াস ষড়যন্ত্র করে হ্যামলেট ও লেয়ার্তেসের মধ্যে তরবারির দ্বৈত ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। লেয়ার্তেসের তরবারির মাথায় বিষ মাখানো ছিল। হ্যামলেট লেয়ার্তেসেরই বিষাক্ত তরবারি দিয়ে তাকে প্রত্যাঘাত করে। রানী গারট্রুড তৃষ্ণার্ত হয়ে বিষাক্ত পানীয় পান করে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন, যা হ্যামলেটের পান করার কথা ছিল। পাত্রে বিষ মেশানোটাও ছিল রাজা ক্লডিয়াসের ষড়যন্ত্র। রাজার সব ষড়যন্ত্র প্রকাশিত হয় মৃত্যুপথযাত্রী লেয়ার্তেসের স্বীকারোক্তির মাধ্যমে। এরপর যুবরাজ হ্যামলেট রাজা ক্লডিয়াসকে তরবারি দিয়ে আঘাত করে এবং বিষ মেশানো পানীয় পান করতে বাধ্য করলে তিনি প্রাণত্যাগ করেন। এভাবে চার চারটি জীবনের অবসান ঘটে তরবারির ক্রীড়া প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে। প্রযোজনাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন মাস্উদ সুমন, আমিনুর রহমান মুকুল, শফিকুল ইসলাম, শামীম সাগর, বাপ্পি আমীন, তৃপ্তি রানী মন্ডল, শামীম শেখ, মেরিনা মিতু, ফারজানা কামাল, শামীম শেখ প্রমুখ।
×