বিশেষ প্রতিনিধি ॥ শারদোৎসবে মাতোয়ারা চারদিক। মহাসপ্তমীতেই জনজোয়ার পূজাম-পগুলোতে। ঢাক-ঘণ্টার বাদ্যি-বাজনা আর ভক্তদের পূজা-অর্চনায় মুখর হয়ে উঠেছে মন্দিরগুলো। শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে সারাদেশেই আনন্দমুখর পরিবেশ। জমে উঠেছে বাঙালীর শারোদৎসব।
পাঁচদিনের এ উৎসবের ™ি^তীয় দিন বুধবার মহাসপ্তমীতে ভক্ত, পূজারী ও দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়ে জমজমাট হয়ে উঠেছিল সারাদেশের পূজাম-পগুলো। মণ্ডপে মণ্ডপে এদিন ছড়িয়ে পড়েছিল উৎসবের বারতা। তৃতীয় দিন আজ বৃহস্পতিবার মহাষ্টমী, সন্ধিপূজা। রামকৃষ্ণ মিশনসহ দেশের বিভিন্ন পূজাম-পে মহাষ্টমীতে কুমারী পূজাও অনুষ্ঠিত হবে।
মহাসপ্তমীর দিনে বুধবার সকালে মণ্ডপে মণ্ডপে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হয়। সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটের মধ্যে শুরু হয় দেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ, স্থাপন ও সপ্তমাদি কল্পারম্ভ। এরপর দেবীর সপ্তমীবিহীত পূজা আয়োজন করা হয় পুষ্পাঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও ভোগ আরতি। অনেক ম-পেই ছিল আরতি, স্বেচ্ছায় রক্তদান, দরিদ্রের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ, নৃত্যনাট্য, ভক্তিমূলক সঙ্গীত, নাটক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন ধর্মীয় আয়োজন।
সারাদেশের মতো রাজধানী ঢাকার পূজামন্ডপগুলোও সাজানো হয়েছে অপরূপ সাজে। মনোলভা ডিজাইন আর নানা বৈচিত্র্যের আলোকসজ্জার রোশনাইয়ে উদ্ভাসিত চারদিক। মহাসপ্তমীর দিন সকাল থেকে অনেক রাত অবধি ঢাক-ঢোল, কাসর-মন্দিরা আর ঘণ্টার বাদ্যি-বাজনা আর ভক্তদের পূজা-অর্চনায় মুখর ছিল পূজাম-পগুলো।
সরেজমিন রাজধানীর বেশ কয়েকটি ম-প ঘুরে সর্বত্র উৎসবের ছোঁয়া দেখা গেছে। ম-পে ম-পে মহাসপ্তমীর পূজা দেখতে আসা নানা বয়সী দর্শনার্থী, পূজারী ও ভক্তদের ভিড় ছিল ব্যাপক। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর এ ভিড় ছিল উপচেপড়া। উৎসবে যোগ দিয়েছেন অন্য ধর্মের মানুষরাও। এতে ম-পগুলো বাঙালীর সার্বজনীন উৎসবের মেলাঙ্গনে রূপ নেয়। আজ মহাষ্টমীর দিন দর্শনার্থী, পূজারী ও ভক্তদের এ ভিড় আরও বাড়বে বলে আয়োজকরা মনে করছেন। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বিকেলে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে মহানগর কেন্দ্রীয় পূজা মন্ডপ এবং রামকৃষ্ণ মিশন পূজা ম-প পরিদর্শন করেন। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন সিকদার তার সঙ্গে ছিলেন।
মহাষ্টমীতে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটের মধ্যে দেবী দুর্গার মহাষ্টমী কল্পারম্ভ ও মহাষ্টমীবিহিত পূজা শুরু হবে। এরপর পুষ্পাঞ্জলি ও প্রসাদ বিতরণ শেষে সন্ধ্যা ৭টা ৩৫ মিনিট থেকে রাত ৮টা ২০ মিনিটের মধ্যে সন্ধিপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হবে। রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠসহ কয়েকটি পূজাম-পে বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকামতে দুর্গাপূজা আয়োজনের কারণে এসব ম-পে পূজার সময়ের হেরফের ঘটবে কিছুটা।
তবে আজকের দিনের প্রধান আকর্ষণই থাকবে কুমারী পূজা। সকালে রাজধানীর গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ পূজাম-পে এ কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য অল্পবয়সী একটি মেয়েকে কুমারী হিসাবে মনোনীত করা হয়েছে, যাকে দেবী দুর্গার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা অনুসারে তার একটি নামকরণও করা হবে।
শাস্ত্রমতে, এক বছর বয়সে সন্ধ্যা, দুইয়ে স্বরস্বতী, তিনে ত্রিধামমূর্তি, চারে কালিকা, পাঁচে সুভগা, ছয়ে ঊমা, সাতে মালনী, আটে কুব্জিকা, নয়ে কালসন্দর্ভা, দশে অপরাজিতা, এগারোয় রুদ্রানী, বারোয় ভৈরবী, তেরোয় মহালক্ষ্মী, চৌদ্দতে পীঠনায়িকা, পনেরোয় ক্ষেত্রজ্ঞা এবং ষোল বছরে অল্পদা বলা হয়ে থাকে। আজ দেবীর প্রতীক হিসেবে যে কুমারী মেয়েটিকে পূজা করা হবে, প্রথা ও নিরাপত্তার কারণে তার নাম ও পরিচয় পূজা শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রকাশ করা হয় না বলে জানিয়েছেন রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজরা। কুমারী পূজা ছাড়াও আজ রামকৃষ্ণ মিশনে পূজারী ও দর্শনার্থীর মধ্যে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হবে। রাজধানী ছাড়াও রামকৃষ্ণ মিশনের নারায়ণগঞ্জ ও দিনাজপুরসহ কয়েকটি মঠ এবং কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী পূজাম-পেও আজ কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
কেন্দ্রীয় পূজাম-প হিসেবে পরিচিত ঢাকেশ^রী মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির ম-পে বুধবার মহাসপ্তমী পূজার আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াও কয়েকশ’ দুস্থ মানুষের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ করা হয়। আজ মহাষ্টমীর দিনে সেখানে ১০ হাজার ভক্তের মধ্যে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হবে।
এছাড়া রাজধানীসহ সারাদেশের গুরুত্বপূর্ণ পূজাম-পগুলোতে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ রাজনৈতিক নেতারা ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশ নেবেন। বড় বড় পূজাম-পগুলোতে পূজার পাঁচ দিনই নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ধর্মীয় নাটক, ধূপ আরতীসহ নানা কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়েছে। আগামী শনিবার বিজয়া দশমীর পূজা শেষে বিজয়া শোভাযাত্রা ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।
