ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যুত বিক্রিতে আরইবির ইউনিটপ্রতি লোকসান ২ টাকা ১৬ পয়সা

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বিদ্যুত বিক্রিতে আরইবির ইউনিটপ্রতি লোকসান ২ টাকা ১৬ পয়সা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ইউনিটপ্রতি বিদ্যুত বিক্রিতে দুই টাকা ১৬ পয়সা লোকসান করছে। দেশের সব থেকে বড় বিতরণ সংস্থার ৮০টি পল্লী বিদ্যুত সমিতির (পিবিএস) মধ্যে মাত্র ১১টি লাভ করছে বাকি সব সমিতি লোকসান গুনছে। টাকার অঙ্কে গত অর্থবছরে (২০১৬-১৭) এই ঘাটতির পরিমাণ ৮৮০ কোটি টাকা। বিদ্যুতের মূল্যহার বৃদ্ধি শুনানির আগেই আরইবি নিজেদের লোকসানি অবস্থার কথা সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছে। আরইবি প্রেরিত একটি বার্তায় জানানো হয় এখন আরইবির বিদ্যুত সরবরাহ ব্যয় ৬ দশমিক ৭৮ টাকার বিপরীতে বিক্রয়মূল্য ৪ দশমিক ৬২ টাকা। ফলে গ্রাহকদের নিকট প্রতিইউনিট বিদ্যুত বিক্রিতে লোকসান হচ্ছে ২ দশমিক ১৬ টাকা। আরইবি বলছে দেশের ভৌগোলিক এলাকার ৭৫ ভাগ এবং গ্রিডের বিদ্যুতের আওতায় এসেছে। ইতোমধ্যে ৬১টি উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়িত হয়েছে। পরিকল্পনা বলছে, ২০১৮ সালের মধ্যে ৪৬০টি উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়ন করা হবে। আরইবির প্রায় দুই কোটি গ্রাহকের মধ্যে এক কোটি ৮০ লাখ অর্থাৎ ৯০ ভাগই আবাসিক গ্রাহক। যাদের মধ্যে অর্ধেক গ্রাহক লাইফ লাইন ট্যারিফে বিদ্যুত সুবিধা ভোগ করেন। আরইবি যে হিসাব দিয়েছে তাতে বলা হচ্ছে, এসব গ্রাহক মাত্র ১৬০ টাকায় ৩৫ ইউনিট বিদ্যুত কিনছে। সরকার প্রান্তিক মানুষকে সহায়তা করতে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারীদের ভর্তুকি মূল্যে বিদ্যুত দিয়ে থাকে। এই শ্রেণীর গ্রাহকের বিদ্যুতের মূল্যহার ইউনিটপ্রতি ৩ দশমিক ৩৩ টাকা। এছাড়া আরইবি সেচ গ্রাহকেরও কম দামে বিদ্যুত দিয়ে থাকে। আরইবিতে ৩ লাখ ২৫ হাজার সেচ পাম্প রয়েছে। সেচের গ্রাকরা বিদ্যুত কিনে থাকেন ৩ দশমিক ৮২ টাকা ইউনিটপ্রতি। পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমের ইতিবাচক প্রভাব দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সরাসরি ভূমিকা রাখছে। পল্লী অঞ্চলে বিদ্যুতায়নের ফলে কৃষিসেচের মাধ্যমে দেশ আজ খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। ইতোমধ্যে ১৬ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক, সাড়ে ৪ হাজার ইউনিয়ন পরিষদে ডিজিটাল তথ্য কেন্দ্র, ৬৪ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়, ক্ষুদ্র শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বিদ্যুতায়নের আওতায় এসেছে। আরইবি দাবি করছে, ৫৩টি ছিটমহলে মাত্র তিন মাসের মধ্যে বিদ্যুত সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। একটি বাড়ি- একটি খামার প্রকল্প, আশ্রয়ণ প্রকল্প ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিদ্যুত সংযোগের মাধ্যমে ছিন্নমূল মানুষগুলোর মৌলিক চাহিদা পূরণে সরকারের জনবান্ধব কর্মসূচীগুলোতে আরইবি বিদ্যুত সরবরাহ করেছে। এতে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও কর্মক্ষম হচ্ছে। দেশের ৬টি বিতরণ সংস্থার মধ্যে আরইবি জাতীয়ভাবে উৎপাদিত বিদ্যুতের প্রায় ৫০ ভাগ আরইবি বিক্রি করে থাকে। প্রতিমাসে এক হাজার ২৫০ কোটি টাকার বিদ্যুত ক্রয়-বিক্রয় করে আরইবি। ২০০৮ সালে বাপবিবো’র সিস্টেম লস ছিল ১৫ দশমিক ৫৬ ভাগ যা ৪ দশমিক ১২ ভাগ হ্রাস পেয়ে বর্তমানে ১১ দশমিক ৪৪ ভাগে। এছাড়াও আরইবির বিদ্যুত বিল আদায়ের হার ৯৯-এর বেশি। বিল আদায় এবং সিস্টেম লস হ্রাসের পরও লোকসান গুনতে হচ্ছে। আরইবি বলছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে নীট ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৫১১ কোটি টাকা এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নীট ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮৮০ কোটি টাকা। দুই অর্থবছরে নীট ঘাটতির পরিমাণ মোট আট হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। আগে ২২টি সমিতি সচ্ছল ছিল, বর্তমানে এ সংখ্যা ১১টিতে নেমে এসেছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ঘাটতির পরিমাণ হতে পারে প্রায় এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা। আরইবির কর্মকর্তারা জানান, খুচরা বিদ্যুত বিক্রয় মূল্য বৃদ্ধি করা না হলে সরকারের পাওনা পরিশোধ, কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদান এবং বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের বিদ্যুত বিল পরিশোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
×