ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খুচরা বাজারে চালের দাম কমছে ধীরে

প্রকাশিত: ০৪:৫৫, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭

খুচরা বাজারে চালের দাম কমছে ধীরে

এম শাহজাহান ॥ পাইকারির তুলনায় খুচরায় চালের দাম কমছে খুব ধীরগতিতে। খুচরা ব্যবসায়ীদের মধ্যে যারা নতুন চালান আনছেন তারাই ১-৩ টাকা কমে চাল বিক্রি করতে পারছেন। আর যারা দোকানে মজুদ রাখা পুরান চাল বিক্রি করছেন তাদের লোকসান এড়াতে বাড়তি দামেই চাল বিক্রি করতে হচ্ছে। এজন্য রাজধানীর খুচরা বাজারে এলাকা ও বাজারভেদে চাল বিভিন্ন দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে। তবে চালকল মালিকদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকায় পাইকারি বাজারে সরবরাহ বাড়ায় দাম কমেছে চালের। বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিকৃত মোটা চাল কেজিতে কমেছে ৩-৫ টাকা পর্যন্ত। শীঘ্রই খুচরা বাজারে চালের দাম আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ও বাবুবাজার-বাদামতলীর পাইকারি বাজার ঘুরে চালের দরদামের এসব তথ্য পাওয়া গেছে। জানা গেছে, খুব দ্রুত চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবার খুচরা পর্যায়েও বিপুল পরিমাণ চাল মজুদ রেখেছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। এসব ব্যবসায়ী বেশি দামে পাইকারি বাজার থেকে চাল সংগ্রহ করেছেন। অন্যদিকে এখন পাইকারি বাজারে দাম কমলেও খুচরা ব্যবসায়ীরা আগের দামে চাল বিক্রি করছেন। এ কারণে বাজারে চালের দাম কমছে ধীরগতিতে। তবে দাম খুব বেশি না কমলেও চালে স্বস্তি ফিরে এসেছে। নতুন করে চালের দাম আর বাড়েনি এটাই বড় স্বস্তি। শুক্রবার পুরান ঢাকার কাপ্তানবাজার থেকে চাল কিনছিলেন, আকতার হোসেন। প্রতিকেজি ৬৫ টাকা দরে মিনিকেট জাতের সরু চাল কিনেন তিনি। খুচরা বিক্রেতা কাঞ্চন তখন বলছিলেন, এই চাল একদিন আগেও ৬৬-৬৭ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাইকারি বাজারে দাম কমায় তাদের এখন কিছুটা কমে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে দাম আর না বাড়ায় আকতার হোসেন স্বস্তির কথা জানান, তিনি বলেন, ভাল লাগছে এজন্য যে, যেভাবে চাল নিয়ে ব্যবসায়ীদের চালবাজি শুরু হয়েছিল সরকারী বিভিন্ন পদক্ষেপে তা বন্ধ হয়েছে। এ কারণে চালের দাম আর বাড়েনি। তবে পাইকারি বাজারে যেহেতু চালের দাম কমছে, একটু দেরিতে হলেও খুচরা বাজারে দাম কমবে। এদিকে, সরকারী সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, উন্নতমানের মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৬২-৬৮, মাঝারি মানের মিনিকেট ও নাজিরশাইল ৬২-৬৫, উন্নতমানের পাইজাম ও লতা চাল ৫৪-৫৮, মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা ৫৪-৫৬ এবং মোটা চাল চায়না ইরি ও স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫২ টাকায়। গত এক মাসের ব্যবধানে এসব চালের দাম বেড়েছে গড়ে ১৪-১৮ শতাংশ পর্যন্ত। তবে চালকল মালিকদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখা এবং আমদানি বাড়ানোর ফলে শীঘ্রই দাম কমে আসবে বলে মনে করেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাবু বাজারের খন্দকার আফচার রাইছ এজেন্সীর স্বত্বাধিকারী খন্দকার আফছার উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি কমেছে আমদানিকৃত চালের দাম। প্রতিকেজিতে ৩-৫ টাকা পর্যন্ত কমেছে। তবে দেশীয় মিনিকেট, পাইজাম, লতা ও নাজিরশাইলের মতো চালের দাম খুব একটা কমেনি। তবে চালের সরবরাহ বাড়ায় শীঘ্রই এসব চালের দামও কমে আসবে। এদিকে, দেশের বেশ কয়েকটি বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী দীর্ঘ সময় পর চাল আমদানি শুরু করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তারা চাল আমদানিতে নেমেছেন বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠান থাইল্যান্ড, মিয়ানমার ও ভারত থেকে চাল আমদানির ঋণপত্র খুলেছে। এর আগে গত মঙ্গলবার সারা দেশের চালকল মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ও খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। এ বৈঠকে চালকলের মালিকেরা দাম কেজিপ্রতি ২ থেকে ৩ টাকা কমানোর আশ্বাস দেন। ওই বৈঠকের পর চালের বাজারে সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের আগে চালকলের মালিকরা বেশ কিছুদিন চালের সরবরাহ আদেশ নেয়া প্রায় বন্ধ রেখেছিলেন। এতে বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল যে দাম অনেক বাড়বে। এ কারণে বিভিন্ন পর্যায়ে চাল কিনে রাখার একটা প্রবণতা তৈরি হয়েছিল, যা বাজারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। এবার বড় শিল্পগ্রুপ দেশবন্ধু, এস আলম গ্রুপ, বিএসএম গ্রুপ ও পারটেক্স গ্রুপ চাল আমদানির জন্য ঋণপত্র খুলেছে। এছাড়া সরকারী পর্যায়ে ৯ লাখ মেট্রিক টন চাল আসবে নবেম্বর মাসের মধ্যে। এসব কারণে চালের দাম আর বাড়ার কোন সুযোগ নেই। সরকারী উদ্যোগে চাল আনা হচ্ছে আপদকালীন সঙ্কট মেটাতে দ্রুত জিটুজি বা সরকার টু সরকার পদ্ধতিতে ৯ লাখ টন চাল আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এছাড়া সরকারী ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি নতুন করে আরও ৫০ হাজার মেট্রিকটন সিদ্ধ চাল আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে। আন্তর্জাতিক কোটেশনের মাধ্যমে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্যাকেজ-৪ এর আওতায় এই চাল কেনা হবে। হাওড়ে আগাম বন্যায় ফসলহানির পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দুই দফার বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া রোগবালাইয়ের কারণেও এবার ধানের ফলন অনেক কম হয়েছে। হাওড়ে ফসলহানির পর থেকে চালের দাম বাড়তে শুরু করে। এর মধ্যে চালের সরকার মজুদ তলানিতে নেমে আসায় বাজার কার্যত নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারণে দেশে চালের দাম সকলকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বাজার সামাল দিতে চাল আমদানির শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে দুই শতাংশে নামিয়ে আনে সরকার। সরকারী মজুদ বাড়াতে চলতি অর্থবছরে সরকারীভাবে মোট ১৫ লাখ টন চাল ও ৫ লাখ টন গম আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সম্প্রতি ভারত বাংলাদেশে চাল রফতানিতে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়লে চালের দাম ফের বাড়তে শুরু করে। গরিবের মোটা চালের কেজিও ৫০ টাকায় পৌঁছায়। এ প্রসঙ্গে খাদ্য সচিব মোঃ কায়কোবাদ হোসাইন বলেন, আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মধ্যে অনেক সময় অনেক কোম্পানি চাল আমদানি করে দেয়ার জন্য চুক্তিভুক্ত হলেও পরে আমদানি করে না। তাই সমস্যার সৃষ্টি হয়। কিন্তু জি টু জি-তে চুক্তি হলে চাল আমদানি কনফার্ম থাকে এবং অবশ্যই চালে মান ভাল হয়।
×