ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বানভাসিদের সংসার চলে শামুক বিক্রি করে

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বানভাসিদের সংসার চলে শামুক বিক্রি করে

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ ‘বাড়ি-ঘর থেইকে পানি ন্যামে গেলিউ ঘরে খাবার নেই। বাড়িতি আছে ছোট্ট ছোট্ট ২ ছেলে ও এক মেয়ে। এহনো বিল-খালে পানি থাহাই কোন কাজও নেই। গ্রামের নাস্তা ভাইঙ্গে খানা-খন্দ হইয়ে গিছে তাই ভ্যান গাড়ি নিয়ে চালাতি পারতিছে না স্বামী। ছেলেমেয়েদের মুহি দুই মুঠো খাবার তুলে দিতিই বাধ্য হইয়ে কাক ডাহা ভোরে হলিই চলি যায় পাশের বিলে শামুক কুড়াতে। এই শামুক বিক্রি করেই কোন রহম চলছে সংসার।’ কথাগুলো বলছিলেন, মনিরামপুরের জলাবদ্ধকবলিত শ্যামকুড় গ্রামের রহিমা বেগম। শুধু রহিম বেগম নন, তার মতো নাজমা বেগম, সখিন, সুফিয়া, রোকেয়া, আকলিমাসহ অসংখ্য নারী বিল থেকে শামুক কুড়িয়ে বিক্রি করেই চলছে তাদের সংসার। এ গ্রাম ছাড়াও হাসাডাঙ্গা, নাগোরঘোপ, চাপাকোনা, কুলটিয়া, হাটগাছাসহ মনিরামপুরে বানভাসি কয়েকশ’ পরিবারের সংসার চলছে শামুক বিক্রি করেই। আমিনপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পার্শ্ববর্তী বিল থেকে বস্তা, ব্যাগভর্তি শামুক নিয়ে রাস্তায় উঠছে বিভিন্ন বয়সী নারী। ওই শামুক কেনার জন্য নছিমন-করিমন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শামুকের ব্যাপারীরা। এ সময় কথা হয় সখিনা বেগম নামের এক গৃহবধূর সঙ্গে। তিনি বলেন, কি করবো বাপ, বন্যায় সব শেষ করে দিয়েছে। ছেলে-পুলেদের মুখে দু’মুঠো খাবার দিতেই বাধ্য হয়ে বিলের পচা পানিতে নেমে শামুক কুড়িয়ে বিক্রি করছি। আর তাতেই কোন রকম চলছে সংসার। রেশমা নামের আরেক গৃহবধূ বলেন, সকালে ও বিকেলে দু’বেলা শামুক কুড়িয়ে কেজিপ্রতি ৫ টাকা বিক্রি করে প্রতিদিন প্রায় এক থেকে দেড়শ’ টাকা আয় হয়।তাই বাধ্য হয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে শামুক কুড়াতে যায়। শামুক কিনতে আসা ব্যাপারী উজ্জ্বল মন্ডল, আলমগীর হোসেন বলেন, তাদের কাছ থেকে শামুক কিনে তা খুলনা জেলার বর্ণী, শৈলগাতি, কপালিয়াসহ বিভিন্ন মোকামে তারা বিক্রি করেন। এ শামুক মাছের খামারের জন্য কিনে মালিকরা। এ থেকে তারা খরচ বাদ দিয়ে প্রতিদিন পনেরশ’ থেকে দুই হাজার টাকা লাভ করে থাকেন।
×