ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

নিশ্চিহ্ন রোহিঙ্গা গ্রামের স্যাটেলাইট ছবি প্রকাশ করল এ্যামনেস্টি

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

 নিশ্চিহ্ন রোহিঙ্গা গ্রামের স্যাটেলাইট ছবি প্রকাশ করল এ্যামনেস্টি

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রাম পুড়িয়ে দেয়ার ছবি প্রকাশ করেছে এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবিগুলো প্রকাশ করে এ্যামনেস্টির পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশটির সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে বিতাড়নের চেষ্টা করছে’ এই ছবিগুলোই তার প্রমাণ। খবর বিবিসির। গত তিন সপ্তাহ ধরে সেখানে ‘খুবই পরিকল্পিতভাবে একটি নির্দিষ্ট ছকে গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দেয়ার’ ছবি এখানে উঠে এসেছে। এ্যামনেস্টির ক্রাইসিস রেসপন্স ডিরেক্টর তিরানা হাসান বলেন, ‘মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে দেশ থেকে বিতাড়নের লক্ষ্য নিয়ে যে গ্রামগুলোতে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছেÑ এগুলো তার অকাট্য প্রমাণ। এটা জাতিগত নির্মূল অভিযান, এ বিষয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।’ পশ্চিমের রাখাইন রাজ্যের প্রায় ৩০ শতাংশ রোহিঙ্গা গ্রাম এখন সম্পূর্ণ খালি, খোদ মিয়ানমার সরকার এ তথ্য দিয়েছে। রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে হামলার বর্ণনায় এ্যামনেস্টির পক্ষ থেকে বলা হয়, মিয়ামারের সেনাবাহিনী এক একটি গ্রাম প্রথমে ঘিরে ফেলছে, পলায়নরত গ্রামবাসীর উপর নির্বিচারে গুলি ছুড়ছে এবং তাদের বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। এটা নিশ্চিতভাবেই ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ।’ স্যাটেলাইটের ছবিতে ২৫ অগাস্টের পর লোকবসতি আছে এমন অন্তত ৮০টি জায়গায় বড় ধরনের অগ্নিকা- শনাক্ত হয়েছে বলে জানায় এ্যামনেস্টি। গত ২৪ অগাস্ট রাতে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) রাখাইন রাজ্যে একসঙ্গে ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ক্যাম্পে হামলা চালায়। হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ কয়েকজন নিহত হওয়ার পর থেকে রাখাইনে সেনা অভিযান চলছে। সেনাবাহিনী কীভাবে গ্রামে ঢুকে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মানুষ মারছে, ঘরের ভেতরে আটকে রেখে কীভাবে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, লুটপাট চালিয়ে কীভাবে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে, সেই বিবরণ পাওয়া যাচ্ছে প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কথায়। যদিও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দাবি তারা রাখাইনে জঙ্গী দমন অভিযান চালাচ্ছে এবং বেসামরিক নাগরিক তাদের লক্ষ্য নয়। দীর্ঘদিন ধরেই মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ‘অবৈধ অভিবাসী’ বর্ণনা করে তাদের নাগরিকত্ব দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে। সেনা অভিযান শুরু পর প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে। রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গন মিয়ানমারের কড়া সমালোচনা করেছে। বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন বলেন, ‘আমি মনে করি, এই জনগোষ্ঠীর পাশে এখন বিশ্ববাসীকে দাঁড়াতে হবে। একটি জাতিগোষ্ঠী হিসেবে তাদের সঙ্গে কী আচরণ করা উচিত, সেই কথা বলতে হবে। এই সহিংসতা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে, এই নির্মমতা বন্ধ করতেই হবে।’ রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান না করলে মিয়ানমারের উপর অবরোধ আরোপের হুমকি দিয়েছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। রাখাইনে সেনা অভিযান স্থগিত এবং রোহিঙ্গাদের উপর সহিংসতা বন্ধের জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস। বুধবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলনে গুতেরেস বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কটে মানবিক পরিস্থিতি বিপর্যয়কর অবস্থায় পৌঁছেছে। দেশান্তরী রোহিঙ্গাদের ত্রাণ সহায়তা দিতে তিনি সব দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদও মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযান নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে।
×