ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

দুদকের শুভেচ্ছা দূত সাকিব

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

দুদকের শুভেচ্ছা দূত সাকিব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত রোল মডেল দেশ হিসেবে গড়তে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সঙ্গে একত্রে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। একই সঙ্গে দুুর্নীতি প্রতিরোধে কমিশনের অনুরোধে শুভেচ্ছা দূত হিসেবে কাজ করতেও সম্মত হয়েছেন তিনি। সোমবার বেলা ১১টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধে বিভিন্ন ক্যাম্পেনিং কৌশল নিয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এ মতামত প্রকাশ করেন। সংস্থার চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের বিশেষ আমন্ত্রণে তিনি সেখানে যান। এ সময় দুদকের পক্ষ দুদক চেয়ারম্যান টেস্ট, টি-২০ ও ওয়ানডে ক্রিকেটে আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ে শ্রেষ্ঠ ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে ক্রেস্ট এবং ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। মতবিনিময় সভায় কমিশনের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুর্নীতি প্রতিরোধে বিভিন্ন ক্যাম্পেনিং কৌশল নিয়ে সাকিব আল হাসান তার অভিমত প্রকাশ করেন। দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুর্নীতি আমাদের দেশের মানুষের জন্য একটি লজ্জার বিষয়। এই লজ্জা থেকে মুক্তির জন্যই দুর্নীতি দমন কমিশন কাজ করছে। কমিশনের অন্যতম কাজ হচ্ছে মানুষকে দুর্নীতি প্রতিরোধের বিভিন্ন বার্তা পৌঁছে দেয়া। যাতে দুর্নীতি হওয়ার আগেই মানুষ সচেতন হয়। কমিশন চেষ্টা করছে দুর্নীতি হওয়ার আগেই তা প্রতিরোধ করতে। গত বছর দুর্নীতির সূচকে বাংলাদেশ দুই ধাপ এগিয়েছে উল্লেখ করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এর অর্থ হচ্ছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কিছু ইতিবাচক কার্যক্রম হচ্ছে। চেয়ারম্যান বলেন, এখন ঘুষ নিতে ঘুষখোর কর্মকর্তারা ভয় পাচ্ছেন। অনেক রাঘববোয়াল এখন দুদকের জালে। এ ক্ষেত্রে কমিশন ব্যক্তির পদ-পদবি, সামাজিক মর্যাদা, রাজনৈতিক পরিচয় কোন কিছু দেখছে না। কমিশন শুধু দেখছে অভিযোগের ব্যাপকতা ও গুরুত্ব। মূলত, আমরা বিশ্বের প্রতিটি মানুষকে জানাতে চাই, আমরা দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের নাগরিক নই। তিনি বলেন, আমরা জাতিগতভাবে আবেগপ্রবণ ও সহানুভূতিশীল। তাই আমরা বন্যা, ঘূর্ণিঝড় কিংবা অন্য যে কোন দুর্যোগে যেমন মানুষের পাশে দাঁড়াই, তেমনি আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে বিজয় অর্জন করি। ইকবাল মাহমুদ, ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রতিটি আন্দোলনে দেশের তরুণ প্রজন্ম এগিয়ে এসেছে। দুর্নীতি প্রতিরোধেও তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে। তাই কমিশন প্রতিটি কর্মসূচীতে তরুণদের সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করছে। এই দেশ আমার, আপনার আমাদের সকলের। দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান বা কমিশনারের পদটি কোন চাকরির পদ নয়, এটি একটি মিশন। আমরা দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধে একটি মিশন নিয়ে কাজ করছি। সাকিব আল হাসানের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা বিশেষ করে আপনি বাংলাদেশকে একটি বিশেষ মাত্রায় নিয়ে গেছেন। বিশ্বে বাংলাদেশকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এ জন্য আমরা গর্বিত। আপনি তরুণÑদেশকে কিছু দেয়ার জন্য এখনই উত্তম সময়। আপনার কারণে যদি দেশের দশজন তরুণ সৎ জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ হয় সেটাও বিশাল প্রাপ্তি। চেয়ারম্যান বলেন, আপনি দেশের কোটি কোটি তরুণ-তরুণীর আইকন। তাই আপনাকে দুর্নীতি প্রতিরোধে কমিশনের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে তরুণদের মাঝে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। তিনি বলেন, কমিশনকে ভয় পাবে শুধু দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তিরা, সাধারণ মানুষ কমিশনকে ভয় পায় না, পাবেও না। তিনি বলেন, একটি গবেষণায় দেখা গেছে, একুশ শতকে বিশ্বের অর্থনীতির চালিকাশক্তির ১১ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ হবে অন্যতম। আমরা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য উত্তম ভবিষ্যত বিনির্মাণ করতে চাই। তিনি জানান, বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি, জার্মান উন্নয়ন সংস্থা জিআইজেড, ইউএনডিপিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা দুর্নীতি দমন কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে এবং অনেকে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করছে। আমরা সম্মিলিতভাবে দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধক চেষ্টা করছি। অনুষ্ঠানে সাকিব আল হাসান দুদকের কার্যক্রমকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত রোল মডেল দেশ হিসেবে গড়তে আমি কাজ করতে চাই। তাই দুর্নীতি দমন কমিশনের যে কোন কর্মসূচীতে আমি আসব। তিনি দুদক চেয়ারম্যানের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, আমরাও চাই দুর্নীতিমুক্ত দেশ। আমরা যখন কোন দেশের অভিবাসন দফতরে আমাদের পাসপোর্ট জমা দেব, তখন তারা যেন মনে করে, বাংলাদেশের মানুষ দুর্নীতিমুক্ত এবং বিশ্বের রোল মডেল। দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে দুদকের শুভেচ্ছাদূত হতেও আমি রাজি আছি। সমাজ থেকে দুর্নীতি দূর করতে তিনি সবাইকে একসঙ্গে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
×