ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যুতের অপচয় রোধে প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করুন ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:০১, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বিদ্যুতের অপচয় রোধে প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করুন ॥ প্রধানমন্ত্রী

বিদ্যুত ব্যবহারে জনগণকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার সারাদেশে বিদ্যুতের অপচয় রোধে প্রিপেইড মিটার অন্তর্ভুক্ত করবে। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুত একটি দেশ ও জনগণের সম্পদ। কাজেই আমি সবাইকে এটি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার অনুরোধ জানাব।’ প্রধানমন্ত্রী রবিবার দুপুরে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ১০ উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমের উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন। খবর বাসস’র। বিদ্যুতের অপচয়রোধে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে প্রিপেইড বিদ্যুতের মিটার ব্যবহারের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আমি সবাইকে বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার ব্যবহারের অনুরোধ জানিয়ে বলব, এটা হলে সিস্টেম লস হবে না।... আপনি যেটুকু বিদ্যুত ব্যবহার করবেন শুধু সেটুকুরই বিল আপনাকে পরিশোধ করতে হবে। ...আর প্রয়োজন শেষে নিজের ঘরের বৈদ্যুতিক বাতি এবং ফ্যানের সুইচটি নিজ হাতে বন্ধ করে দিন। ...এ ব্যাপারে আমি সকলের সহযোগিতা কামনা করি।’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আশুগঞ্জ ৪৫০ মে.ও. নর্থ কম্বাইন্ড সাইকল, সিম্পল সাইকল প্লান্ট (উত্তর) এবং ১০৮ মে.ও. ক্ষমতাসম্পন্ন কেরানীগঞ্জ ফার্নেস অয়েল ভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র উদ্বোধন করেন। এছাড়া তিনি অনুষ্ঠানে ভারতের ত্রিপুরা থেকে রেডিয়াল মোডে অতিরিক্ত ৬০ মে.ও. বিদ্যুত সরবরাহ কার্যক্রমও উদ্বোধন করেন। যেসব উপজেলা শতভাগ বিদ্যুত সরবরাহের আওতায় এসেছে সেগুলো হচ্ছেÑ বাঘেরহাটের মোল্লাহাট এবং ফকিরহাট, দিনাজপুরের হাকিমপুর, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ এবং সিলেট সদর, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা, কিশোরগঞ্জের ভৈরব, চট্টগ্রামের সীতাকু- এবং নরসিংদী জেলার নরসিংদী সদর। এছাড়া কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া। প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুত ও জ্বলানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী এবং বিদ্যুত ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন এবং বিদ্যুত বিভাগের সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস একটি উপস্থাপনার মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক বিদ্যুত পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরেন। মুখ্য সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় শ্রেণী পেশার জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তার সরকার বিদ্যুত খাতে ভর্তুকি দিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ অনেক বেশি, এরজন্য সরকারকে শতকরা ২২ ভাগ ভর্তুকি প্রদান করতে হয়। সরকারকে প্রতিবছর এইজন্য একটি বড় অংকের টাকা গচ্চা দিতে হলেও জনগণের জীবনমানের উন্নয়নের জন্যই বিদ্যুতের প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী নিজে বিদ্যুত সাশ্রয়ের বিষয়ে সচেতন উল্লেখ করে বলেন, নিজের ঘরের বাতিটা, ফ্যানের সুইচটা মনে করে বন্ধ করে দেয়ার মধ্যে কোন লজ্জা নেই। তিনি বলেন, তার নিজেরত বিদ্যুত বিল দিতে হয় না। সরকারই তার বিল পরিশোধ করে। কিন্তু এই সরকার কারা, সরকারই জনগণ। কাজেই জনগণের সম্পদ কোনভাবেই অপচয় করা ঠিক নয়। কেন আমি জনগণের সম্পদ নষ্ট করব প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি প্রয়োজন শেষে নিজ হাতেই নিজ ঘরের ফ্যান এবং লাইটের সুইচ বন্ধ করেন। অফিস-আদালতে বিদ্যুত অপচয়ের সমালোচনা করে তিনি বলেন, দেশে অনেক বড় বড় কর্মকর্তাই রয়েছেন যারা কখনও নিজ হাতে ঘরের ফ্যান ও লাইটের সুইচটি বন্ধ করেন না। তারা ভাবেন এ জন্য তো লোক রয়েছে, এতে করেই বিদ্যুতের অপচয় হয়। তার সরকার সারাদেশে বিদ্যুতের অপচয়রোধে প্রিপেইড মিটার চালু করছে যাতে করে বিদ্যুত বিল নিয়ে কারসাজি বন্ধ হয়। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সরকারী সম্পদের অপচয়রোধে সবাইকে সচেষ্টা হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আগে একটি ধারণাই ছিল ‘সরকার কা মাল দরিয়া মে ঢাল’। এর থেকে সকলকে বেরিয়ে আসতে হবে। সরকারের সম্পদকে নিজের সম্পদ বলে ভাবতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার পর্যায়ক্রমে দেশের সব উপজেলাতেই শতভাগ বিদ্যুত সরবরাহের ব্যবস্থা করবে। তিনি বলেন, এখন দেশের শতকরা ৮০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুতের সুবিধা পাচ্ছে ইনশাল্লাহ দেশের সকল জনগণকে এই বিদ্যুতের সুবিধার আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে দেশের উত্তরাঞ্চলের রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়াতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলেও এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৯৬ সালে তার সরকার ক্ষমতায় এসেই বিদ্যুত খাতকে বেসরকারী খাতে উন্মুক্ত করে দেন ফলস্বরূপ মেঘনাঘাট এবং হরিপুরে দুটি বড় বড় বিদ্যুত কেন্দ্র এবং দেশের ভেতরে বেসরকারী খাতেও অন্যান্য বিদ্যুত কেন্দ্র গড়ে ওঠে। যদিও কাজটা অত সহজ ছিল না। এজন্য ব্যাপক সমালোচনাও সরকারকে সহ্য করতে হয়। এখন বাংলাদেশ, ভুটান এবং নেপালের মধ্যে জলবিদ্যুত আমদানি নিয়ে আলোচনা চলছে। এছাড়াও ভারত থেকে পাইপ লাইনে ডিজেল আমদানিরও পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। জনগণের গৃহস্থালি ব্যবহারে এলপি গ্যাসকে সহজলভ্য করায় তার সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এটিকে বেসরকারী খাতে উন্মুক্ত করে দিয়েছি... ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল এবং স্থায়ী এলএনজি ডিপো নির্মাণেরও পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, তার সরকারের আমলে বিদ্যুতের উৎপাদন বেড়ে বর্তমানে ১৫ হাজার ৭৫০ মে.ও. হয়েছে। যা অতীতে ছিল ৩২শ’ মে.ও.। বর্তমানে দেশের শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ বিদ্যুতের সুবিধা পাচ্ছে যা ২০০৯ সালেও ছিল মাত্র ৪৭ ভাগ। শেখ হাসিনা বলেন, যেসব এলাকায় বিদ্যুতের গ্রিড পৌঁছেনি এমন এলাকায় তার সরকার ৪৫ লাখ সোলার প্যানেল বসিয়েছে। বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে মানুষ কেবল খাবার চাইত। এখন খাবারের চাহিদা মেটার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চাহিদারও পরিবর্তন এসেছে, তারা এখন বিদ্যুত চায়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার এবং পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশের বিদ্যুত খাতের সম্প্রসারণে কোন পদক্ষেপই নেয়নি। এই দুটি সরকারের ৭ বছরের মেয়াদে দেশে ১ মে.ও. বিদ্যুতের উৎপাদনও বৃদ্ধি পায়নি। দেশের গ্যাস রফতানি করার চুক্তিতে প্রধানমন্ত্রীর সায় ছিল না বলে ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যেতে পারেনি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী সে সময়ে তার প্রদত্ত বক্তব্য তুলে ধরে বলেন, এই গ্যাস জনগণের সম্পদ। দেশে গ্যাসের মজুদ কত আছে তা আগে নির্ধারণ করতে হবে। ৫০ বছরের ব্যবহার উপযোগী গ্যাস রিজার্ভ রেখেই তারপর হতে পারে রফতানি। তার আগে নয়। বিএনপি নেতৃত্ব গ্যাস বিক্রির জন্য বিদেশীদের সেই প্রস্তাবে সায় দিয়েছিল বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
×