ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বাসে বেশি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ ফিরতি যাত্রীদের

ঢাকা ফাঁকা - যানজট নেই দোকানপাট খোলেনি, জমেনি বাজার

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ঢাকা ফাঁকা - যানজট নেই দোকানপাট খোলেনি, জমেনি বাজার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এখনও জমে ওঠেনি রাজধানী ঢাকা। ফিরে পায়নি পুরনো চেহারা। বেশিরভাগ সড়ক ফাঁকা। যানজটমুক্ত। নেই ট্রাফিক সিগন্যাল। সব সড়কেই চলছে পরিচিত বাহন রিক্সা। মার্কেট ও বিপণী বিতানগুলো খোলা হয়নি। হোটেল রেস্টুরেন্টও বন্ধ। কাঁচাবাজারও জমেনি। আছে টার্মিনালমুখী মানুষের ভিড়। নানা ঝক্কি নিয়ে এবার কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন সবাই। সড়কপথের যাত্রীরা বাসে বাড়তি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ করেছেন। রাজধানী ফেরা লোকজন জানিয়েছেন, কেউ কর্মব্যস্থতার কারণে ঈদে বাড়ি যেতে পারেননি। আবার কেউ রাস্তার ভোগান্তির কথা চিন্তা করে ঢাকায় থেকেছেন। উৎসব শেষে নিরিবিলি যাবার চেষ্টা। কিন্তু বিধি বাম। কারণ ঈদ শেষে ট্রেনে যারা বাড়ি যাবার চেষ্টা করছেন তাদের মানুষের ভিড় সামলাতে হচ্ছে। বাসেও ঘরমুখো মানুষের চাপ রয়েছে। মহাখালী আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক জানান, ঈদ শেষে ঢাকায় ফেরার চাপ যেমন রয়েছে তেমনি ঘরমুখো মানুষের ভিড়ও আছে। তবে আগামী সপ্তাহে বেশি মানুষ কর্মস্থলে ফিরতে পারে বলে জানান তিনি। বাড়তি ভাড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোন বাস কোম্পানি যেন বাড়তি ভাড়া আদায় না করে সেজন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ঈদের আগে এমন অভিযোগে একাধিক পরিবহন কোম্পানিকে জরিমানা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। এদিকে ঈদ শেষে মঙ্গলবার ছিল দ্বিতীয় কর্মদিবস। এখনও জমে ওঠেনি অফিসপাড়া মতিঝিল। কর্মব্যস্থতা দেখা যায়নি সচিবালয়েও। দ্বিতীয় দিনেও শুভেচ্ছা বিনিময় আর দাফতরিক কিছু কাজকর্ম করেই কেটেছে। এখন ভিন্ন আবহ রাজধানী শহরে। কোলাহলমুক্ত পরিবেশ। কোরবানির বর্জ্যরে দুর্গন্ধও খুব একটা নেই। সব সড়কেই চলছে রিক্সা। ভ্রমণপিপাসুরা ইচ্ছেমতো ছুটছেন। সিনেমাহল, পার্ক, হাতিরঝিল থেকে শুরু করে সবখানেই মানুষের ভিড়। কোন রকম সিগন্যাল ছাড়াই চলছে সব ধরনের যানবাহন। ঈদ কাটিয়ে যারা টার্মিনালে নামছেন তাদের রয়েছে নানা রকমের অভিযোগ। প্রথম অভিযোগ হলো গণপরিবহন সঙ্কট। এরপর বাড়তি ভাড়া, স্বল্প দূরত্বে যেতে না চাওয়ার সমস্যা তো রয়েছেই। যদিও এর কোন সমাধান কারও হাতে নেই। ঢাকা মহানগর পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা জানিয়েছেন, ঈদ শেষে গণপরিবহনের অনেক চালক ছুটিতে আছেন। তাই পরিবহন সঙ্কট আছে। এই সুযোগে অটোরিক্সা চালক ও রিক্সা চালকরা যাত্রীদের থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করে যাচ্ছেন। কমলাপুরের স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, ঈদের মতোই এখনও মানুষ বাড়ি যাচ্ছেন। সবকটি ট্রেন বাড়তি যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি ঝুঁকিমুক্ত ভ্রমণ নিশ্চিত করতে। কিন্তু কারও কথাই যাত্রীরা শোনেন না। তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ট্রেনের ছাদে গেলে টিকেট লাগে না। তাই ছাদভর্তি মানুষ। তাছাড়া ভিড়ের সময় সবার টিকেট নিশ্চিত করা আমাদের জন্য খুবই কঠিন বিষয়। তিনি জানান, আগামী ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঈদ ফিরতি অগ্রিম টিকেট বিক্রি হয়েছে। বিশেষ ব্যবস্থাপনায় বেশ ক’টি বিভাগীয় ও বড় জেলা শহর থেকে অগ্রিম টিকেট বিক্রি হয়। মঙ্গলবার থেকে চলাচল শুরু করেছে মৈত্রী এক্সপ্রেস। মঙ্গলবার ঢাকার বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত মতিঝিলের চিত্র দেখা গেছে অনেকটাই নীরব। এখনও হকারদের হাঁকডাক শুরু হয়নি। অফিস পাড়াও নীরব। ইত্তেফাক মোড়, দৈনিক বাংলা, পুরানা পল্টন, নয়া পল্টন, কাকরাইল, প্রেসক্লাব, শাহবাগ, বাংলামোটর, শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক, খিলগাঁও, ফার্মগেট, মোহাম্মদপুর, আসাদগেট, মিরপুর, এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেট, গুলশান, বনানী, ধানম-ি, নীলক্ষেত, খিলক্ষেত, রাইফেলস স্কয়ারসহ বিভিন্ন এলাকায় পরিবহন সঙ্কট দেখা গেছে। অটোরিক্সা কিংবা বাসের জন্য যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। শেষ পর্যন্ত দ্বিগুণের বেশি ভাড়ায় বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে গেছেন যাত্রীরা। এদিকে সিটিং সার্ভিসের নামে বাড়তি ভাড়া তো নিচ্ছেই বাসগুলো। এরমধ্যে ইচ্ছেমতো যাত্রীও তোলা হচ্ছে। এ নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বাসের লোকজনের তর্ক বিতর্কও চলছে হরদম। বাস শ্রমিকরা জানিয়েছেন, চার ভাগের এক ভাগ বাসও ঢাকার রাস্তায় নামেনি। আগামী সপ্তাহ থেকে পরিবহন চলাচল স্বাভাবিক হওয়ার কথা জানান তারা। এদিকে রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ভূগর্ভস্থ জাদুঘর, জাতীয় জাদুঘর, শিশু পার্ক, বোটানিক্যাল গার্ডেন, চিড়িয়াখানাসহ সবক’টি বিনোদন কেন্দ্রেই মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। মঙ্গলবার কমলাপুর রেলস্টেশন, সায়েদাবাদ, মহাখালী, গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে কর্মস্থলে ফেরা মানুষের ভিড় বাড়ছে। যে যেভাবে পারছেন ঢাকা আসছেন। বিশেষ করে চাকরিজীবীরা আগে ভাগেই চলে আসছেন।
×