ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এতে অপচয় ও চুরি বন্ধ হবে

সেনা ও নৌবাহিনীকে দিয়ে জ্বালানি তেল পরিবহন পাইপ লাইন তৈরি হবে

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

সেনা ও নৌবাহিনীকে দিয়ে জ্বালানি তেল পরিবহন পাইপ লাইন তৈরি হবে

রশিদ মামুন ॥ দীর্ঘদিন নানা জটিলতায় আটকে থাকা জ্বালানি তেল পরিবহন পাইপলাইন নির্মাণের কাজ সেনা এবং নৌবাহিনীকে দিয়ে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে তাদের আগ্রহের প্রেক্ষিতে পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন প্রস্তাব চেয়েছে জ্বালানি বিভাগ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সময়কাল থেকে জ্বালানি তেল পরিবহনে পাইপলাইন নির্মাণের বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে। পরবর্তীতে সকল সরকারই অভ্যন্তরীণ তেল পরিবহনে জাহাজ বা ট্যাংক লরির পরিবর্তে পাইপলাইন নির্মাণের ওপর জোর দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে পাইপলাইন নির্মাণের বিষয়টি অদৃশ্য কারণে খুব বেশিদূর আগায়নি। অথচ পাইপলাইনে তেল পরিবহন করা সম্ভব হলে জ্বালানি তেল পরিবহন ব্যয় কমার সঙ্গে সঙ্গে অপচয় এবং চুরি বন্ধ হবে। যাতে বিপুল পরিমাণ সাশ্রয় হবে বলে মনে করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। প্রথম পর্যায়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জ থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত তেল পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে। চট্টগ্রাম-ঢাকা পাইপলাইন নির্মাণের জন্য সেনাবাহিনী এবং নারায়ণগঞ্জ-বিমানবন্দর পাইপলাইন নির্মাণ করবে নৌবাহিনী। চট্টগ্রাম-ঢাকা পাইপলাইন দিয়ে চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ডিপোতে ডিজেল সরবরাহ করা হবে। আর শুধু জেটফুয়েল সরবরাহ করার জন্যই ব্যবহার করা হবে বিমানবন্দরের পাইপলাইনটি। বলা হচ্ছে বিভিন্ন সময়ে জ্বালানি বিভাগ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব চেয়েছে। কিন্তু প্রস্তাবগুলোতে সরকারের প্রাক্কলিত ব্যয়ের অতিরিক্ত খরচের কথা বলা হয়েছে। যাতে করে উদ্যোক্তা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে কাজ করানো সম্ভব হয়নি। জ্বালানি বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা পাইপলাইন নির্মাণের সব থেকে জটিল কাজ ভূমি অধিগ্রহণ করা। এসব প্রকল্পর জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে জ্বালানি বিভাগের অভিজ্ঞতা বিশেষ ভাল না। এছাড়া সেনা এবং নৌবাহিনী ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রকল্পর নির্মাণে বিশেষ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। সঙ্গত কারণে আশা করা হচ্ছে এই দুই প্রকল্প তাদের দেয়া হলে যথা সময়ে শেষ হবে। বিপিসি সূত্র জানায়, দেশের মোট ডিজেল চাহিদার বড় অংশ ঢাকায় ব্যবহার হয়। এজন্য চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় নৌপথে অয়েল ট্যাংকারে করে ডিজেল আনা হয়। একটি অয়েল ট্যাংকার ঢাকায় আসতে সর্বোচ্চ সময় লাগে ৩৬ ঘণ্টা পর্যন্ত। একদিকে অর্থ অন্য দিকে বাড়তি সময় ব্যয় হয়। বিপিসির পরিকল্পনায় বলা হচ্ছে চট্টগ্রাম থেকে পাইপলাইনে তেল আনা সম্ভব হলে বছরে অন্তত ১৩০ কোটি পাকা সাশ্রয় হবে। আর পুরো প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে ব্যয় হবে এক হাজার ২০০ কোটি টাকা। বছরে রাজধানীর মোট চাহিদা ৩০ লাখ টনের বেশি ডিজেল আনা সম্ভব হবে এই পাইপলাইন দিয়ে। এতে করে ১০ বছরের মধ্যে এ ধরনের প্রকল্প ব্যয়ের পুরোটা উঠেও আসবে। ধারণা করা হচ্ছে ২৩৭ কিলোমিটারের এই পাইপলাইনের প্রতি কিলোমিটারের নির্মাণ ব্যয় দাঁড়াবে পাঁচ কোটি টাকার মতো। দরপত্রের বাইরে গিয়ে প্রকল্পটি নির্মাণে এর আগে চীনের একটি কোম্পানি আগ্রহ দেখিয়েছিল। তবে জ্বালানি বিভাগ তাদের প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। আর আগ্রহীদের কাছ থেকে পাওয়া প্রস্তাবগুলোও এখন যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। বিপিসির প্রকল্পটি বাস্তবায়নে তেল বিপণন কোম্পানি পদ্মা অয়েল লিমিটেড অর্থ সরবরাহ করবে। এদিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বছরে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টন জেটফুয়েল সরবরাহ করে পদ্মা অয়েল। বর্তমানে জেটফুয়েল আমদানির পর চট্টগ্রাম থেকে ট্যাংকারে করে জলপথে নারায়ণগঞ্জের গোদলাইন ডিপোতে আনা হয়। এরপর গোদলাইন থেকে প্রতিদিন গড়ে ১২০টি ট্যাংকলরির মাধ্যমে এই জ্বালানি শাহজালাল বিমানবন্দর এলাকায় অবস্থিত কুর্মিটোলা এভিয়েশন ডিপোতে (কেএডি) নেয়া হয়। এতে বছরে বিপিসির ব্যয় হয় ৩০ কোটি টাকা। পাইপলাইনটির দৈর্ঘ্য হবে মোট ১৭ কিলোমিটার। শীতলক্ষ্যা নদীর কাঞ্চনব্রিজ থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত এই পাইপলাইন নির্মিত হবে। এই প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে এর ২৫০ কোটি টাকা। ধারণা করা হচ্ছে এতে প্রতি কিলোমিটারের নির্মাণ ব্যয় দাঁড়াবে ১৪ কোটি ৭০ লাখ টাকায়। তবে জমি অধিগ্রহণের ব্যয় বাড়লে পাইপলাইনের ব্যয়ও বাড়তে পারে। দেশে এখন জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রায় ৫৫ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ৫০ লাখ টন আমদানি করা হয়। গভীর সমুদ্রের মাদর ভেসেলে থেকে জ্বালানি তেল ছোট অয়েল ট্যাংকার দিয়ে ডিপোতে আনা হয়। মোট চাহিদার মধ্যে ১৫ লাখ মেট্রিক টন ইস্টার্ন রিফাইনারিতে পরিশোধন করা হয়। বাকি অংশ পরিশোধিত তেল আমদানি করা হয়। অয়েল ট্যাংকারের পাশাপাশি সারাদেশে ৩০ হাজার বেশি ট্যাংকলরি এবং ১০০টির মতো রেলওয়ে ওয়াগান দিয়ে সারাদেশে তেল পরিবহন করা হয়। এই দুটি পাইপলাইন ছাড়াও ভারত বাংলাদেশ ডিজেল পরিবহনে পাইপলাইন এবং সাগরে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং টার্মিনালে পাইপলাইন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে করে তেল পরিহনের বড় অংশ ভবিষ্যতে পাইপলাইনের মাধ্যমে করা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
×