ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

কমে যাচ্ছে প্রেক্ষাগৃহ

প্রকাশিত: ০৩:১৮, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

কমে যাচ্ছে প্রেক্ষাগৃহ

চলচ্চিত্র শক্তিশালী গণমাধ্যম হলেও সিনেমা হলের আবেদন বাংলাদেশ থেকে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। আকাশ সংস্কৃতির ডামাডোলে দর্শকরা সিনেমা হল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। ফলে দর্শক উপস্থিতি আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ায় একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সিনেমা হল। দর্শক ধরে রাখতে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত কোন হল গড়ে উঠছে না। খোদ রাজধানীতে এখন হাতেগোনা কয়েকটি সিনেমা হল চালু আছে। ফলে দিন দিন সঙ্কুচিত হয়ে আসছে সাধারণের বিনোদন সুযোগ। প্রায় দুই কোটি মানুষের তিলোত্তমা ঢাকায় প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা ৩৩টি থেকে কমে ঠেকেছে তিন ভাগের এক ভাগে। বাংলাদেশের অধিকাংশ সিনেমা হল বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশ দশকে নির্মিত হয়। ষাট, সত্তর এবং আশির দশকে এ সিনেমা হলগুলো পূর্ণোদমে সচল ছিল। পরবর্তী সময়ে নব্বই দশকের শেষদিকে ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হতে থাকে। বেশিরভাগ সিনেমা হল ভেঙ্গে তৈরি করা হচ্ছে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন ও মার্কেট। পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশের ১৩শ’ সিনেমা হলের মধ্যে বর্তমানে সংখ্যা কমে ২শ’টির নিচে এসে দাঁড়িয়েছে। গত দেড় দশকে দেশের কোথাও নতুন কোন সিনেমা হল হয়নি। এখন স্যাটেলাইট টিভি, ইন্টারনেট আর পাইরেসির যুগে দর্শক প্রেক্ষাগৃহে যেতে চান না। কারণ তারা আজকের বাংলাদেশী সিনেমা দেখে ‘মজা’ পান না। আর দর্শক না গেলে ছবির ব্যবসা সফল হয় না। এ যেন দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রের মতোই। চলতি শতকের শুরুতে মাল্টিপ্লেক্স মুভি থিয়েটারের ধারণা বাংলাদেশের সিনেমার বাঁচার আশা জাগালেও গত এক দশকে সেই পথে বেশি দূর এগোনো যায়নি। বসুন্ধরা শপিং মলের অংশ হিসেবে ২০০৪ সালে চালু হওয়া স্টার সিনেপ্লেক্স এখন রাজধানীর রুচিশীল বহু লোকের অন্যতম পছন্দের বিনোদন কেন্দ্র। সম্প্রতি চালু হয়েছে যমুনা ফিউচার পার্কের ‘ব্লক বাস্টার’। পুরনো ‘শ্যামলী’ হল ভেঙ্গে ‘শ্যামলী স্কয়ার’ শপিং মলের অংশ হিসেবে চালু হয়েছে ‘শ্যামলী সিনেমা’। তবে আধুনিক এসব মুভি থিয়েটারে দর্শকদের আরাম-আয়েশের ব্যবস্থা থাকলেও দেখানো হয় আমদানি করা বিদেশী সিনেমা। এ কথা সত্য যে, আমাদের দেশে এখন বেশিরভাগ সিনেমা ভারত-বাংলা বা তামিল সিনেমার কপি। নকল গল্প ও গান, একঘেয়েমি কাহিনীনির্ভর সিনেমা নির্মাণ করা হচ্ছে। দর্শক হলে গিয়ে দেখে প্রতিটি চলচ্চিত্রই কোন না কোন ভারতীয় তথা বলিউড ও টালিউডের ছবির আদলে তৈরি। মৌলিক সিনেমা খুব কমই রিলিজ হয়। মৌলিক সিনেমা চালালে দর্শক কিছু বাড়ে। এসব নকল সিনেমা দেখতে সব শ্রেণীর দর্শক হলে আসে না। হল মালিকদের দাবি, দেশে ভাল মানের চলচ্চিত্র তৈরি না হওয়ায় দর্শক হলবিমুখ হয়ে পড়েছেন। এখন ভিডিও পাইরেসির পরিমাণ এতটাই বেড়েছে যে, নতুন কোন সিনেমা মুক্তি পাওয়ার পরদিন থেকেই দর্শকদের হাতে নকল হয়ে চলে যাচ্ছে। অন্যদিকে স্যাটেলাইট চ্যানেলের বদৌলতে হলে গিয়ে সিনেমা দেখার প্রবণতাও কমে গেছে। রয়েছে ভাল মানের শিল্পীর অভাবও। এসব কারণেই দর্শক সিনেমা হল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। আর এভাবেই ধ্বংস হচ্ছে সিনেমা ব্যবসা। সিনেমা হলের অতীত অবস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে ভাল মানের শিল্পী যেমন দরকার, তেমনি মানসম্মত কাহিনী ও পাশাপাশি প্রত্যেক জেলা শহরে একটি করে সিনেপ্লেক্স তৈরি করতে হবে। উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। মহিলাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকতে হবে। চলচ্চিত্রের সুদিন ফিরিয়ে আনতে ভাল মানের চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে হবে, দক্ষ নির্মাতা ও ভাল অভিনয় শিল্পী তৈরি করতে হবে, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত সিনেপ্লেক্স নির্মাণ করতে হবে। এই শিল্পকে বাঁচাতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং সরকারকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।
×