ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় টেস্ট শুরু

সাগরিকা টেস্টের আগে ফুরফুরে মেজাজে টাইগাররা

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

সাগরিকা টেস্টের আগে ফুরফুরে মেজাজে টাইগাররা

মিথুন আশরাফ ॥ কোথায় বৃহস্পতিবার প্রথম টেস্টের পঞ্চমদিনের খেলা হতো। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সুনসান নীরবতা। অস্ট্রেলিয়াকে যে সাড়ে তিনদিনেই হারিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে জয় এসে পড়েছে। এবার বাংলাদেশের সামনে চট্টগ্রাম টেস্টের মিশন অপেক্ষা করছে। যে টেস্টটি ৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুরু হবে। এ টেস্টটি খেলতে আজ চট্টগ্রামে যাবে দুই দলই। বেলা পৌনে চারটায় চট্টগ্রামের হযরত শাহ আমানত বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে দুই দলের ক্রিকেটারদের। শনিবার থেকেই অনুশীলন শুরু করে দেবে দুই দলই। দুপুর ১টা থেকে অনুশীলন করবে দুই দলের ক্রিকেটাররা। শনিবার ঈদের দিন বাংলাদেশের অনুশীলন ছিল না। কিন্তু এখন জানা গেছে ঈদের দিন দুপুরে অনুশীলন করবে ক্রিকেটাররা। মিরপুর টেস্টে জিতে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় টেস্টে জিতলে অস্ট্রেলিয়াকে হোয়াইটওয়াশ করবে মুশফিকবাহিনী। আর হারলেও সমস্যা নেই। সিরিজ হার হবে না। সিরিজ ১-১ ড্র হয়ে যাবে। বাংলাদেশ পারবে চট্টগ্রাম টেস্ট জিতে নিতে? বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাটে-বলে যে আগের জায়গায় নেই যে কোন অবস্থান থেকে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার মতো কিছু খেলোয়াড় আছে, সেটা ওরা (অস্ট্রেলিয়া) বুঝেছে। ভাল একটা ম্যাচ গেছে। এখন আত্মতুষ্টিতে না ভুগে আমাদের সিরিজ জয়ের সম্ভাবনা আছে। যা আমরা করতে চাই। এমন সুযোগ সবসময় আসে না। এমন চাপে অস্ট্রেলিয়া দল সবসময় থাকে না।’ মুশফিক ঠিকই বলেছেন। এখন অস্ট্রেলিয়া দল যে চাপে আছে তা সবসময় থাকে না। এই চাপ তাদের ভাল খেলায় প্রভাব ফেলবে। সেই সুযোগ বাংলাদেশ দলকে নিতে হবে। অস্ট্রেলিয়াকে দ্বিতীয় টেস্টেও হারানোর চেষ্টা করতে হবে। তাহলে ২-০ ব্যবধানে হারানোর যে স্বপ্ন তা পূরণ হবে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া দল কী চট্টগ্রামেও এমন মুখ থুবড়ে পড়বে? অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ দ্বিতীয় টেস্টেই ঘুরে দাঁড়ানোর কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ‘আমরা এখন ১-০তে পিছিয়ে আছি। দুই ম্যাচের সিরিজ এটি। আশা করছি চট্টগ্রামে সিরিজের ব্যবধান সমান করতে পারব। আমাদের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জ সামনে। ফল না আসলে হতাশা লাগবেই। তবে আমরা সামনের দিকে তাকিয়ে থাকব। যেসব স্থানে ভুল হয়েছে সেসব ঠিক করে চট্টগ্রামে খেলব।’ বাংলাদেশ দল যখন গত বছর অক্টোবরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জিতেছিল তখন সবাই ঐতিহাসিক জয় বললেও অনেকেই বলেছিলেন, সেই জয়টি আকস্মিক মিলে গেছে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জেতার পর আর তা বলার উপায় নেই। মিরপুর টেস্টে দুই দলই ভাল খেলেছে। কিন্তু প্রথম ইনিংসে তামিম-সাকিবের ১৫৫ রানের জুটিই ব্যাটিংয়ে পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। ১০ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর যে এ দুই ব্যাটসম্যান নিজেকে ৫০তম টেস্টে মেলে ধরেছেন সেখানেই পিছিয়ে পড়েছে অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়া পিছিয়ে পড়েছে স্পিন বিভাগেও। ব্যাট হাতে দুই দল ভাল করেছে। অস্ট্রেলিয়া চেষ্টা করেও ২৬৫ রানের টার্গেট অতিক্রম করতে পারেনি। ২০ রানে হেরেছে। অসাধারণ একটি টেস্ট ম্যাচ দেখার মিলেছে। দুই দলে দুইজন করে চার পেসার খেলেছেন। অসি পেসার কামিন্স ৪ উইকেট নিয়েছেন। স্পিনার লিয়ন (৯টি), এ্যাগার (৫টি) ও ম্যাক্সওয়েল (১টি) মিলে ১৫টি উইকেট নিয়েছেন। তার মানে স্পিনে অস্ট্রেলিয়াও দুর্দান্ত বল করেছে। বাংলাদেশ দলের পেসাররা নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি। চতুর্থদিন তো পেসাররা এক ওভারও বল করতে পারেননি। অস্ট্রেলিয়ার ২০ উইকেটের মধ্যে ১৯ উইকেটই বাংলাদেশ স্পিনাররা নিয়েছেন। একটি রান আউট হয়েছে। সাকিব দুই ইনিংস মিলিয়ে ১০ উইকেট শিকার করেছেন। ম্যাচ সেরাও হয়েছেন। মিরাজ ৫টি ও তাইজুল ৪টি উইকেট নিয়েছেন। স্পিনে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। সিরিজ শুরুর আগে সাকিব আল হাসান বলেছিলেন, ‘স্পিনে আমরাই এগিয়ে।’ তা শুনে নাথান লিয়ন এমন ভাব করেছিলেন যেন দেখিয়ে দেবেন। লিয়ন এক হিসেবে দেখিয়েও দিয়েছেন। সাকিবকে দুইবার আউট করেছেন। আর সাকিব একবার আউট করেছেন লিয়নকে। আবার দুই ইনিংসেই লিয়ন বোলিং দ্যুতি ছড়িয়েছেন। কিন্তু পুরো টেস্ট সিরিজজুড়ে তো বাংলাদেশ স্পিনাররাই দাপট দেখিয়েছেন। সাকিব আবার লিয়নের চেয়ে একটি উইকেট বেশিও নিয়েছেন। এখন অস্ট্রেলিয়াও ভালভাবে বুঝে গেছে বাংলাদেশের মাটিতে বাংলাদেশকে হারানো এখন আর সহজ নয়। এগারো বছর পর বাংলাদেশের মাটিতে টেস্ট খেলতে এসে তারা বুঝে গেছে বাংলাদেশ এখন কতটা শক্তিশালী দল। ২০০৬ সালে বাংলাদেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হওয়া টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্টেও বাংলাদেশ জেতার সম্ভাবনা জাগিয়েছিল। কিন্তু অভিজ্ঞতার জন্য জিততে পারেনি। এবার জিতেই গেছে। ২০০৬ ও ২০০৩ সালে দুইবার দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হেরে এবার জিতেছে বাংলাদেশ। এরআগে প্রতিবারই হোয়াইটওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ। এবার উল্টো অস্ট্রেলিয়া সেই শঙ্কায় পড়ে গেছে। টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে কোচ হাতুরাসিংহে, সাকিব, তামিম, অধিনায়ক মুশফিক বলেছিলেন, ২-০তে জেতা সম্ভব। একথা শুনে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক বিস্মিত হয়েছিলেন। এমন ভাব ধরেছিলেন, যেন এটা সম্ভবই না। প্রথম টেস্টেই তারা বুঝে গেল এটা সম্ভব। চট্টগ্রাম টেস্টেও যদি মিরপুর টেস্টের ধারাবাহিকতা ধরে রাখে বাংলাদেশ তাহলে চট্টগ্রামেও অস্ট্রেলিয়ার হার হয়ে যেতে পারে। তখন সিরিজের ফল ২-০ হয়ে যাবে। আর যদি অস্ট্রেলিয়া জিতে সিরিজ হবে ১-১ ড্র। এখন চট্টগ্রাম টেস্টের মিশনই অপেক্ষা করছে।
×