ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হেডিংলি টেস্টে ৫ উইকেটের হার স্বাগতিক ইংল্যান্ডের

উইন্ডিজের স্মরণীয় জয়ে ‘নায়ক’ শাই হোপ

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ৩১ আগস্ট ২০১৭

উইন্ডিজের স্মরণীয় জয়ে ‘নায়ক’ শাই হোপ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এ জন্যই ক্রিকেট গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। প্রতিপক্ষকে তিন শতাধিক রানের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে ইংলিশ অধিনায়ক জো রুট হয়তো নিশ্চিন্ত ছিলেন। ভেবেছিলেন একদিনের একটু বেশি সময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো ছন্নছাড়া দলের পক্ষে ৩২২ রান করা সম্ভব নয়। বড় জোর ড্র হতে পারে। কিন্তু হেডিংলিতে অবিশ্বাস্য কীর্তি গড়লো ক্যারিবীয়রা। ৫ উইকেটের বড় জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে সমতা (১-১) ফেরাল জেসন হোল্ডারের দল। দুই ইনিংসে অসাধারণ দুই সেঞ্চুরি (১৪৭, ১১৮*) হাঁকিয়ে ‘নায়ক’ শাই হোপ। ১৯৭৬ সালে গ্রেট গর্ডন গ্রিনিজের পর কোন ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যান ইংল্যান্ডের মাটিতে দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি পেলেন। আর ২০০০ সালের পর এই প্রথম ইংল্যান্ডে টেস্ট জিতল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মজার বিষয় টেস্ট তো বটেই প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটেও প্রথমবারের মতো জোড়া সেঞ্চুরি পেলেন হোপ। স্কোর ইংল্যান্ড ২৫৮/১০ ও ৪৯০/৮ (ডিক্লেঃ), ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪২৭/১০ ও ৩২২/৫। ৭ সেপ্টেম্বর লর্ডসে শুরু সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ও শেষ টেস্ট। দীর্ঘ ১৭ বছরে ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রথম সাফল্যে হোল্ডারদের চোখেমুখে ছিল ‘বিশ্বজয়ের’ আনন্দ। ম্যাচসেরা হোপ বলেন, ‘এজবাস্টনের বাজে হারের পর একটা জয় খুব বেশি দরকার ছিল। আমরা জানি আমরা ভাল ক্রিকেটার। অনেক কথাই হয়েছে আমাদের নিয়ে। একটা কিছু করে দেখাতে হতো। নিজেদের সবটুকু দিয়েই চেষ্টা করেছি এই ম্যাচে। ফলাফলটাও আমাদের পক্ষে এসেছে।’ প্রথম ইনিংসে তার সঙ্গে দারুণ এক জুটি গড়ে দলকে ভাল অবস্থানে নিয়ে গেছেন কার্লোস ব্রেথওয়েট (১৩৪ ও ৯৫)। হোপ বলছেন, তরুণ ব্রেথওয়েটের থেকে অনেক কিছু শেখার আছে, ‘আমাদের সবারই তার থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। সে ব্যাটিংয়ের সময় দারুণ ধৈর্যের প্রমাণ দিয়েছে। সে কম বয়সী হলেও এরই মাঝে অনেক জায়গায় খেলার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। তার মতো দলের অন্যদেরও ধৈর্য ধরতে হবে, ব্যাটিং-বোলিং দুই ক্ষেত্রেই।’ প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি পাওয়া ব্রেথওয়েটের ৯৫ রানের আরেকটি চমৎকার ইনিংসের আছে বড় অবদান। মঙ্গলবার যথেচ্ছ সুযোগ হাতছাড়া করেছে ইংলিশরা। তার সবটুকু সুবিধা নিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অবশ্য হোল্ডারের দলও কম ক্যাচ ছাড়েননি এই টেস্টে। বিনা উইকেটে ৫ রান নিয়ে পঞ্চম ও শেষদিনের খেলা শুরু করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জয়ের জন্য তাদের প্রয়োজন ছিল আরও ৩১৭ রান। ৫৩ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া দলকে পথ দেখান ব্রেথওয়েট, হোপ। তাদের ১৪৪ রানের জুটিতে দৃঢ় ভিতের ওপর দাঁড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দেশটির মাত্র চতুর্থ জুটি হিসেবে দুই ইনিংসেই তিন অঙ্কের দুটি জুটি গড়েন তারা। মঈন আলির বলে বেন স্টোকসকে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় ব্রেথওয়েটের ইনিংস। ১৮০ বলে খেলা ৯৫ বলের ইনিংসটি গড়া ১২টি চারে। রোস্টন চেসের সঙ্গে ৪৯ ও জার্মেইন ব্ল্যাকউডের সঙ্গে ৭৪ রানের জুটিতে হোপ দলকে নিয়ে যান জয়ের দ্বারপ্রান্তে। ৪৫ বলে ৪১ রান করে ব্ল্যাকউডের বিদায়ের পর বাকি কাজ সহজেই সেরেছেন হোপ। প্রথম টেস্টে একদিনে ১৯ উইকেট হারিয়ে বিব্রতকর হারের স্বাদ পাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ সমতা ফিরিয়েছে তার ব্যাটেই। ২১১ বলে ১৪টি চারে ১১৮ রানে অপরাজিত ছিলেন হোপ। আগের ১১ টেস্টে ছিল মাত্র একটি অর্ধশতক। হেডিংলিতে পেলেন জোড়া সেঞ্চুরি, দলকে এনে দিলেন মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর মতো জয়। এটি যেন হোপের ক্যারিয়ারেরই পুনর্জন্ম। সর্বশেষ পাঁচ বছরে টেস্টে ক্যারিবিয়ানরা সর্বোচ্চ ১৯৪ রান তাড়া করে জিতেছে। সেটিও ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই ২০১৫ সালে ব্রিজটাউনে। কিন্তু হেডিংলিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে নতুন গল্প লিখলেন ব্রেথওয়েট ও শাই হোপরা। এর আগে ইংল্যান্ডের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সর্বশেষ টেস্ট জিতেছিল ২০০০ সালে। এজবাস্টনে ইনিংস ও ৯৩ রানে জেতা ওই টেস্টের নায়ক ছিলেন বাংলাদেশের এখনকার বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ। ১৭ বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আবার ভুলে যাওয়া সেই জয়ের স্বাদ এনে দিলেন শাই হোপ। প্রতিপক্ষ অধিনায়ক রুট থেকে শুরু করে সাবেক গ্রেটরাও হোপের এমন উদ্ভাসিত ব্যাটিং নৈপুণ্যে মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন।
×