ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের অবস্থান হাড়ে হাড়ে টের পেল স্মিথরা

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ৩১ আগস্ট ২০১৭

বাংলাদেশের অবস্থান হাড়ে হাড়ে টের পেল স্মিথরা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ‘আমরা যে আগের জায়গায় নেই সেটা ওরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে। এ জয়ের পর তারা আমাদের আরও মর্যাদা দেবে- এমনটাই দাবি করলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। সফরকারী অস্ট্রেলিয়াকে দুই টেস্টের সিরিজের প্রথম ম্যাচেই ২০ রানে হারিয়ে দিয়ে ঐতিহাসিক ঘটনার জন্ম দিয়েছে বাংলাদেশ দল। এরপর এটিকে ঐতিহাসিক বলেই জানালেন মুশফিক। তিনি জানিয়েছেন ম্যাচের প্রতিটি পরিস্থিতিতেই জয়ের বিশ্বাস সব ক্রিকেটারের মধ্যে ছিল। ঈদের আগে এটিকে দেশের জন্য বড় একটি অর্জন উপহার বলেই দাবি করলেন তিনি। অপরদিকে, বাংলাদেশ নিজেদের কন্ডিশনে ভয়ঙ্কর একটি দল সেটা উপলব্ধি করতে পেরেছে অস্ট্রেলিয়া এমনটাই জানালেন সফরকারী দলের অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ। তবে পরের টেস্টে ঘুরে দাঁড়িয়ে সিরিজে সমতা আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি। মাত্র সাড়ে ৩ দিনে মিরপুর টেস্ট শেষ হওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন দুই অধিনায়ক। গত বছর অক্টোবরে প্রথম ঐতিহাসিক এক অর্জন যোগ হয় বাংলাদেশের ক্রিকেটে। ইংল্যান্ডের মতো ক্রিকেট খেলার জন্মদাতা ও শক্তিশালী, অভিজাত দলকে টেস্ট ক্রিকেটে হারিয়ে দিয়েছিল স্বাগতিকরা। সেটাই অনেক বড় অনুপ্রেরণা হয়ে এসেছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। তাদেরও একই ভেন্যু মিরপুরে প্রথমবার টেস্ট ক্রিকেটে পরাভূত করেছে বাংলাদেশ দল। বিজয়টা এমন একটা সময় এসেছে যখন বাংলাদেশের ক্রিকেট পাগল সমর্থকরা সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে অন্যতম ঈদ-উল-আযহার উদযাপনের অপেক্ষায় আছে। তবে সেই ঈদ এবার ক্রিকেটাররা নিজ পরিবারের সঙ্গে উপভোগ করতে পারবেন না। কারণ ঈদের একদিন পরই আবার দ্বিতীয় টেস্ট। এসব নিয়ে মুশফিক বলেন, ‘ঈদে বাবা-মাকে মিস করব। আমি না শুধু, খেলার কারণে সবাই মিস করবে। এই ত্যাগ করে যদি দেশকে কিছু দিতে পারি, সেটা অনেক বড় ব্যাপার। ইংল্যান্ড অনেক শক্তিশালী দল ছিল। সম্প্রতি উপমহাদেশে অস্ট্রেলিয়ার রেকর্ড খুব একটা ভাল না হলেও ওরা কিন্তু এখানে প্রায় সবাইকেই নিয়ে এসেছে। আমার মনে হয় চারদিন লড়াই করেছি, সব সময় ওদের সঙ্গেই ছিলাম। আমি বলব, আজকে ওরা একটু এগিয়ে ছিল। এই ধরনের উইকেটে ওদের খেলার অভিজ্ঞতা কমই আছে তাতে এতটুকু বিশ্বাস আমাদের ছিল। এই জয়গুলো আমাদের মতো দলকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলে।’ সিরিজের আগেই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ও প্রধান কোচ চান্দিকা হাতুরাসিংহে জানিয়েছিলেন ২-০ ব্যবধানে অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে চায় দল। প্রায় ঘোষণা দিয়েই প্রথম টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দেয়ার পর সে পথে অনেকখানিই এগিয়ে গেছে টাইগাররা। এ বিষয়ে মুশফিক বলেন, ‘আসলে এটা তো ঘোষণা না। আমরা বলেছি সম্ভব। শুধু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নয়, যেকোন দলের বিপক্ষেই ঘরোয়া সিরিজে এটা বলার চেষ্টা করব। কারণ যত বড় দলই হোক না কেন, এই কন্ডিশনে আমরা যেকোন পরিস্থিতিতে জিততে পারি। কেউ হয় তো বলতে পারে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আমরা কোনমতে জিতে গেছি। কিন্তু এখন আর সেটা বলতে পারবে না। কারণ দুইটা বিশ্বমানের দলের সঙ্গে এটা সম্ভব নয়। অবশ্যই এটা অনেক বড় অর্জন। এখন বলতে পারি এই ম্যাচটা ঐতিহাসিক ছিল।’ জয়ের এ ম্যাচে শুধু একটা সময়ই শঙ্কা ভর করেছিল সবার মনে। তৃতীয় দিন শেষে যখন অসিরা ২৬৫ রানের জয়ের লক্ষ্যে নেমে ২ উইকেটে ১০৯ রান তুলেছিল তখন অনেকেই ভেবেছিলেন ম্যাচটা হাত ফসকে বেরিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের কাছ থেকে। কিন্তু বিশ্বাস হারাননি ক্রিকেটাররা। এ বিষয়ে মুশফিক জানালেন, ‘এমন উইকেটে ৮ উইকেট হাতে নিয়ে ১৫৬ রান করা যাবে না এটা সব সময় বিশ্বাস ছিল। শেষে কামিন্স যখন দুইটা ছয় মারল তখনও আমার বিশ্বাস ছিল। আউট হতে লাগে এক বল আর তখনও দরকার ২০ রান। অর্থাৎ আরও ২০টা স্কোরিং শট খেলতে হবে বা চেষ্টা করতে হবে। সেদিক থেকে বিশ্বাসটা ছিল। শুধু আমার না আমাদের পুরো দলের ভেতরে ছিল। এই জয় আমাদের জন্য অনেক দরকার ছিল।’ শুরু থেকেই বলা হচ্ছিল অস্ট্রেলিয়া বেশ আক্রমণাত্মক মেজাজের দল। কিন্তু বাংলাদেশও কম আক্রমণাত্মক নয় দাবি মুশফিকের, ‘ওদের মধ্যে আক্রমণাত্মক মনোভাব তো অবশ্যই ছিল। তবে ওরাও বুঝেছে বাংলাদেশও কতটা আগ্রাসী হতে পারে। শুধু ব্যাট-বল না শারীরিক ভাষাতেও ওরা সেটা টের পেয়েছে। আজ যদি লক্ষ্য করে থাকেন দেখবেন, লাঞ্চের আগে ৬ মিনিট ছিল। তখন ম্যাক্সওয়েল প্রায় ৫ মিনিট সময় নিচ্ছিল যেন ওই ওভারের পর আর কোন ওভার না হয়। যেখানে অস্ট্রেলিয়া বিশ্ব ক্রিকেটকে শাসন করতে চায় তারা এমন ব্যাকফুটে চলে গেছে যে, তারা চাচ্ছে না যে আরেকটা ওভার খেলি। এমনকি আমাদের টেলএন্ডার যারা ব্যাটিং করতে গেছে তাদের পর্যন্ত ওরা কথা বলেছে। আমরা যে আগের জায়গায় নেই সেটা ওরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে।’ বাংলাদেশ ভয়ঙ্কর দল সেটা সত্যিই উপলব্ধি করছেন এখন অসি অধিনায়ক স্মিথ। মিরপুর টেস্ট হারের পর তিনি বললেন, ‘তারা অবশ্যই গত কয়েক বছরে দীর্ঘ পথ পেরিয়েছে। আমার মনে হয় তারা খুবই ভয়ঙ্কর দল, বিশেষ করে ঘরের মাটিতে সেটা আমরা দেখলাম। তারা আমাদেরই শুধু হারাল না, খুব বেশিদিন হয়নি তারা ইংল্যান্ডকেও হারিয়েছে। এই কন্ডিশনে তারা অবশ্যই আত্মবিশ্বাসী। তাদের বেশ কয়েকটা ভাল খেলোয়াড় আছে। তামিম ইকবাল টপঅর্ডারে খুবই ভাল, একবার সুযোগ দিলে তিনি অনেক আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলেন। সাকিব প্রথম ইনিংসে অনেক ভাল খেলেছে এবং বল হাতে উভয় ইনিংসে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। তাদের অভিজ্ঞতা অবশ্যই কাজে লেগেছে বাংলাদেশের জন্য এবং দলগতভাবেই তারা অনেক ভাল খেলেছে।’ তবে চট্টগ্রাম টেস্টে জিতে সিরিজে সমতা আনার প্রত্যয় জানালেন স্মিথ। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই এটা বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ ছিল। সাকিব-তামিমের বড় জুটি তাদের জন্য সবকিছু করে দিয়েছে। আমরা ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে। অবশ্যই প্রচুর চাপে পড়ে গেছি ভাল পারফর্ম করার ক্ষেত্রে। আশা করছি চট্টগ্রামে আমরা সিরিজে সমতা আনতে পারব। কিন্তু সেটা আমাদের দলের জন্য আরেকটি কঠিন চ্যালেঞ্জ হতে যাচ্ছে।’
×