ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জাল টাকার বিস্তার রোধে পশুরহাটে নোট যাচাই সেবা দেবে ব্যাংকগুলো

নতুন টাকাকে পুঁজি করে তৎপরতা বাড়ে প্রতারক চক্রের

প্রকাশিত: ০৫:০২, ৩০ আগস্ট ২০১৭

নতুন টাকাকে পুঁজি করে তৎপরতা বাড়ে প্রতারক চক্রের

রহিম শেখ ॥ ঈদ উপলক্ষে প্রতিবছর বাজারে নতুন টাকা ছাড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই নতুন টাকাকে পুঁজি করে জালকারী চক্রের অপতৎপরতা বাড়ে; বিশেষ করে কোরবানির পশু কেনাবেচাকে ঘিরে জালটাকা ছড়িয়ে দেয়ার আশঙ্কা থাকে। এমন বাস্তবতায় আসন্ন কোরবানির ঈদে পশুর হাটে জালনোট প্রতিরোধে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন ও দুই সিটি কর্পোরেশনকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পৃথক চিঠি পাঠানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে নোট জালকারী চক্রের অপতৎপরতা প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও কার্যক্রম জোরদারের অনুরোধ জানানো হয়েছে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে দেশের সব টিভি চ্যানেল যাতে আসল নোট চেনার উপায় সম্বলিত ভিডিও চিত্র প্রচারের ব্যবস্থা করে সেই অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা জেলা প্রশাসন, ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের কাছে পাঠানো চিঠিতে পশুর হাটের তালিকা এবং হাটগুলোতে ব্যাংকের বুথ স্থাপনে সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া শীঘ্রই দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকে ব্যাংকিং কর্মদিবস চলাকালীন তাদের শাখার টিভি মনিটরে আসল নোটের নিরাপত্তা সম্বলিত ভিডিওচিত্র প্রচারের নির্দেশনা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। একইসঙ্গে কিছু কিছু জায়গায় কেবল টিভি নেটওয়ার্কে এবং দেশের সকল জেলা তথ্য অফিসের আওতায় জনসমাগমস্থলে আসল নোটের ভিডিও চিত্র প্রচারের অনুরোধ করা হয়েছে। কোরবানির পশুসহ অন্যান্য কেনাকাটায় বাড়তি খরচের কথা মাথায় রেখে এবার নতুন-পুরনো মিলে ২০ হাজার কোটি টাকার নোট সরবরাহের ব্যবস্থা রাখছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ২৭ আগস্ট থেকে নতুন টাকার এই বিনিময় শুরু হয়েছে। নতুন টাকার এ বিনিময় কার্যক্রম চলবে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। রাজধানীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসের পাশাপাশি বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের ১৪টি শাখায় নতুন নোট পাওয়া যাচ্ছে। আর এই সুযোগে বাজারে জাল নোট ছেড়ে দিচ্ছে প্রতারক চক্র। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের সুবিধা নিয়ে তারা এমন নিখুঁত নোট তৈরি করছে যে, সাধারণভাবে সেগুলোকে জাল বলে ধরার উপায় নেই। ফলে পশুর হাটসহ ঈদবাজারের অন্যান্য কেনাকাটার ক্ষেত্রে এ ধরনের নোট হাতবদল হতে পারে খুব সহজে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, পশু কেনাবেচা বা অন্য যে কোন লেনদেনে সাধারণ মানুষ যাতে প্রতারণার শিকার না হয় সেজন্য ইতোমধ্যেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নানা প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এবারও সারাদেশের পশুর হাটে জালনোট যাচাই সেবা দেবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। ইতোমধ্যেই ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদিত ২১টি হাটে ৪৩টি ব্যাংকের বুথ স্থাপনে ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ঢাকার বাইরের সকল সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদিত পশুর হাটেও জালনোট যাচাই সেবা দেবে বাণিজ্যিক ব্যাংক। এছাড়া ব্যাংকগুলোর শাখার টিভি মনিটরে আসল নোটে ভিডিও প্রচার করা হবে। জলনোটের অপতৎপরতা রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যাদের মাঠে থাকতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েকে অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জালনোট যাচাইয়ে তাদের চাহিদা অনুযায়ী মেশিন সরবরাহ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র আরও জানায়, শুধু টিভি মনিটরে ভিডিওচিত্র প্রচারই নয়, ব্যাংকিং লেনদেন ও এটিএম বুথে টাকা ঢোকানোর আগে ব্যাংকগুলোকে জালনোট শনাক্তকরণ মেশিনের ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। এছাড়া এবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চাহিদা অনুযায়ী রাজধানীসহ সারাদেশের পশুর হাটগুলোতে প্রায় ২ শতাধিক জালনোট শনাক্তকরণ মেশিন সরবরাহ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। আসল নোট চেনার সহজ উপায় সম্প্রতি জাল টাকা প্রতিরোধে আসল নোটের বৈশিষ্ট্য-সংবলিত বিজ্ঞাপন প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি সম্বলিত ১০০, ৫০০ ও ১ হাজার টাকার নোট লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রধান চারটি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে বিজ্ঞপনটিতে। ১। প্রত্যেক প্রকার নোটেই মূল্যবান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের লগো সম্বলিত নিরাপত্তা সুতা রয়েছে। নোটের মূল্যমান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের লগো নিরাপত্তা সুতার ৪টি স্থানে মুদ্রিত আছে। নোট চিত করে ধরলে নিরাপত্তা সুতায় মূল্যমান এবং লোগো দেখা যাবে। কিন্তু কাত করে খাড়াভাবে ধরলে তা কালো দেখা যাবে। এ নিরাপত্তা সুতা অনেক মজবুত বা নোটের কাগজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। নখের আঁচড়ে বা মুচড়িয়ে উক্ত নিরাপত্তা সুতা কোনক্রমেই উঠানো সম্ভব নয়। জালনোট নিরাপত্তা সুতা সহজেই নখের আঁচড়ে বা মুচড়ানোতে উঠে যায়। ২। প্রত্যেক প্রকার নোটের ওপরের ডানদিকে কোনায় ইংরেজী সংখ্যায় লেখা নোটের মূল্যমান রং পরিবর্তনশীল কালিতে মুদ্রিত রয়েছে। ১০০ ও ১০০০ টাকা মূল্যমানের নোট আস্তে আস্তে নড়াচড়া করলে নোটের মূল্যমান লেখাটি সোনালী হতে ক্রমেই সবুজ রং-এ পরিবর্তিত হয়। একইভাবে ৫০০ টাকা মূল্যমানের নোটে ৫০০ মূল্যমান লেখাটি লালচে হতে পরিবর্তিত হয়ে সবুজ হয়। জালনোটে ব্যবহৃত এ রং চকচক করলেও তা পরিবর্তিত হয় না। ৩। প্রত্যেক প্রকার নোটের সম্মুখ ও পশ্চাৎ পৃষ্ঠের ডিজাইন, মধ্যভাগের লেখা, নোটের মূল্যমান এবং ৭টি সমান্তরাল সরলরেখা উঁচু-নিচু (খসখসে) ভাবে মুদ্রিত আছে। তাছাড়া, নোটের ডানদিকে ১০০ টাকার নোটে ৩টি, ৫০০ টাকার নোটে ৪টি এবং ১০০০ টাকার নোটে ৫টি ছোট বৃত্তাকার ছাপ আছে যা হাতের স্পর্শে উঁচু-নিচু (খসখসে) অনুভূত হয়। ৪। প্রত্যেক প্রকার নোটে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি, বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম এবং নোটের মূল্যমান জলছাপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
×