ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিলাতি গাব

সিঁদুরমাখা রং, রয়েছে ক্যালসিয়াম ও আয়রন

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২৪ আগস্ট ২০১৭

সিঁদুরমাখা রং, রয়েছে ক্যালসিয়াম ও আয়রন

খোকন আহম্মেদ হীরা ॥ যুগ যুগ ধরে গ্রাম বাংলার আনাচে-কানাচে সিঁদুরমাখা রঙের মতো বিলাতি গাবের ব্যাপক উৎপাদন হচ্ছে। এ ফল বিক্রি করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করছেন মৌসুমী বিক্রেতারা। কোন ধরনের চাষাবাদ কিংবা যত্ন ছাড়াই বাড়ির আনাচে-কানাচে অবহেলায় বেড়ে ওঠে এ বিলাতি গাবের গাছ। সারাদেশে এক নামে বরিশালের বিলাতি গাবের পরিচিতি রয়েছে। তবে নাম বিলাতি হলেও এর উৎপত্তি স্থল বিলাত কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। প্রতিবছর এ গাছে প্রচুর ফল ধরে। মিষ্টি এ ফল বাদুরের কাছে খুবই প্রিয় খাবার। কিন্তু বাদুর গাবের মিষ্টি সাদা অংশটুকু মানুষের মতোই শুধু খেতে পারে। মানুষ কিংবা বাদুর কারোই গাবের বিচি খাওয়ার সাধ্য নেই। তাই বাদুরে খাওয়ার পর গাবের বিচি বাগানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকে। সেখানেই বিলাতি গাব গাছের জন্ম হয়। প্রতিবছর গাছ জন্মাচ্ছে ফলও হচ্ছে প্রচুর। এ ফলে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও আয়রন। গাইনী বিশেজ্ঞদের মতে, গর্ভবতী নারীদের জন্য বিলাতি গাবে রয়েছে বিশেষ কার্যক্ষমতা। বরিশালের গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাঃ জিকে চক্রবর্তী জানান, দেশীয় কম দামের এ ফলকে অনেকেই অবহেলার চোখে দেখেন। কিন্তু যাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব রয়েছে তাদের জন্য বিলাতি গাব খাওয়া ওষুধের চেয়ে অনেক উপকারী। এ ফলে কখনও ফরমালিন মেশানো হয় না। এছাড়া বিলাতি গাবে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম থাকায় তা গর্ভবতী মায়ের জন্য খাওয়া খুবই উপকারী। বরিশালসহ পুরো দক্ষিণাঞ্চলের হাট ও বাজারে সাধারণত আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র-এই মাসজুড়েই সিঁদুরমাখা বিলাতি গাবের প্রচুর দেখা মেলে। দামে সস্তা, কেমিক্যালমুক্ত, স্বাদ ও গন্ধে মুগ্ধ সুস্বাদু এ গাব গ্রামগঞ্জের বাজার ঘুরে পাইকাররা ক্রয় করে থাকেন। এরপর ভালভাবে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে ঝুঁড়ি ভর্তির পর তা দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রির জন্য পাঠানো হয়। সেই বহু আগে থেকেই বরিশালের গাব যাচ্ছে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায়। বরিশালের চরকাউয়া, চন্দ্রমোহন, টুঙ্গিবাড়িয়া, চাঁদপুরা, চরমোনাই ও দিনারের পোল এলাকায় প্রতিবছরের মতো এবারও বসেছে গাবের হাট। পাইকারি ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন জানান, প্রতিদিন তিনি কমপক্ষে দুই শ’ গাবের ঝুঁড়ি ঢাকায় পাঠিয়ে থাকেন। তিনি আরও জানান, বরিশালে উৎপাদিত বিলাতি গাবের বাজার সীমিত হওয়ায় সঠিকভাবে তারা বাজারমূল্য পাচ্ছেন না। অথচ গ্রাম বাংলার অবহেলার সস্তার গাব ঢাকায় গিয়ে উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় পর্যায়ে গাব সংগ্রহকারী ব্যবসায়ীরা ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে এক কুড়ি গাব ক্রয় করেন। হাত ঘুরে সাত শ’ থেকে সাড়ে সাত শ’ টাকার গাব ভর্তি প্রতিটি ঝুঁড়ি ঢাকায় যায় ১২ থেকে ১৫ শ’ টাকা দরে। ঢাকার খুচরা বাজারে প্রতি গাবের হালি (চারটি) বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকায়। গাব ব্যবসায়ীরা জানান, এবারও বিলাতি গাবের ফলন ভাল হওয়া সত্ত্বেও ঢাকার আড়তদাররা সঠিকভাবে দাম না দেয়ায় অনেক সময় তাদের লোকসান গুনতে হয়। আড়তদারদের মর্জি মাফিক ব্যবসা চালাতে গিয়ে ঢাকার আড়তদাররা আর্থিকভাবে লাভবান হলেও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা নায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। গাব ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম জানান, পর্যাপ্ত পরিমাণ গাবের হাট না থাকায় অনেক সময় তাদের দাম নিয়ে চিন্তিত হতে হয়। আর এ কারণেই দেশীয় এ ফলটি যাদের বাগানে ফলে তারা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
×