ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের আগে চলাচলের উপযোগী হচ্ছে না ॥ ১০ কোটি টাকার ক্ষতি

যশোরে ৫ সড়কে ভাঙ্গাগড়ার খেলা

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ২০ আগস্ট ২০১৭

যশোরে ৫ সড়কে ভাঙ্গাগড়ার খেলা

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ ঈদ-উল-আযহার ১০ দিন আগে সড়কগুলো চলাচলের উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে যশোরের ৫টি জাতীয় সড়ক চলাচলের উপযোগী হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। কেননা মন্ত্রীর দেয়া সময় শেষ হতে আর মাত্র ৬ দিন বাকি রয়েছে। আগামী ২ সেপ্টেম্বর ঈদ হচ্ছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ যশোর বলছে, গেল জুলাই মাসে যশোরে ভারি বৃষ্টিপাত হয়। এতে ৫টি জাতীয় সড়কসহ দুটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক সড়ক ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে অন্তত ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে ইটবালু দিয়ে আপাতত চলাচলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এসব সড়ক মেরামতের দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন বলে সচেতন মহল জানিয়েছেন। জাতীয় সড়কগুলো হলো যশোর-খুলনা, যশোর-বেনাপোল, যশোর-ঝিনাইদহ, যশোর-মাগুরা এবং যশোর-নড়াইল। এছাড়া রাজারহাট, মনিরামপুর, কেশবপুর, চুকনগর কেশবপুর-সরসকাঠি-কলারোয়া সড়ক এবং পালবাড়ী-দড়াটানা-মনিহার হয়ে মুড়লী পর্যন্ত সড়কগুলো ভেঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ যশোর অফিস থেকে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, যশোর-খুলনা মহাসড়ক ৩৮ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে চাঁচড়া মোড়, মুড়লী, রাজঘাট, বসুন্দিয়া, প্রেমবাগ, চেঙ্গুটিয়া ও ভাঙ্গাগেট পর্যন্ত বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কটি ঈদের আগে মেরামতের জন্য ২ কোটি টাকা প্রয়োজন।যশোর-বেনাপোল সড়কের ৩৮ কিলোমিটারের মধ্যে পুলেরহাট থেকে নাভারণ মোড় পর্যন্ত সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী। সড়কটির এমন অবস্থা যে গাড়ি চলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। যশোর থেকে বেনাপোল যেতে ৪০ মিনিট সময় লাগলেও রাস্তা খারাপের কারণে সময় লাগছে দেড় ঘণ্টা। যশোর-ঝিনাইদহ সড়কের ১৬ কিলোমিটারের মধ্যে ১২ কিলোমিটার সড়ক বিধ্বস্ত। যশোর-মাগুরা সড়কের ২২ দশমিক ৫ কিলোমিটার সড়কের কদমতলী, পুলেরহাট থেকে লেবুতলা বাজার ও রজনীগন্ধা পাম্প পর্যন্ত সড়ক বেহাল এবং যশোর-নড়াইল সড়কের ২০ কিলোমিটার সড়কে মনিহার থেকে হামিদপুর অংশের পুরোটাই অসংখ্য বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সরেজমিন দেখা গেছে, যশোরÑখুলনা সড়কের মনিহার থেকে বকচর মুড়লী পর্যন্ত সড়কে বড় ধরনের ঢিবি তৈরি হয়েছে। যে কারণে মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি। ইতিপূর্বে সংস্কারে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হলেও সড়কটিতে কাটছে না দুর্ভোগ। ইতোমধ্যে সড়ক ও জনপদ রাস্তার মাটি পরীক্ষা করেও কোন সুফল পাননি। আবারও মাটি পরীক্ষা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে এ বিভাগ। প্রতিদিনই এ রাস্তা দিয়ে খুলনা, ঢাকা, কুষ্টিয়াসহ আঞ্চলিক রুটের বাস-ট্রাক চলাচল করে। কিন্তু মনিহার-মুড়লী পর্যন্ত সড়ক চলাচলে চরম অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। কারণ রাস্তার মাঝের অংশ ফুলে-ফেপে উঁচু ঢিবিতে পরিণত হয়েছে। যাতে গাড়ির নিচের অংশ বেধে যাচ্ছে। আর ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।বকচর এলাকার ব্যবসায়ী সুলতান আহমেদ জানান, জনগণ যেমন সরকারকে ট্যাক্স দেয়, তেমনি পৌরকরও যশোরবাসী পরিশোধ করে নিয়মিত। তবে কেন রাস্তাঘাট সংস্কার না করে জনজীবনে দুর্ভোগ ডেকে এনে নাগরিক অধিকার থেকে যশোরবাসীকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। রাস্তাঘাটের এই দুর্দশা লাঘবের দায়িত্বটা কার? একই কথা বলেন স্থানীয় এ্যালুমিনিয়াম ব্যবসায়ী রাজীব হাসান। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবেই এ সড়কের বেহাল দশা। বর্ষা হলেই পানি দাঁড়িয়ে যায় এ সড়কে। তাছাড়া ইজিবাইক মোটরসাইকেল, রিক্সা, ছোট-বড় ট্রাক, বাস চলাচলের সময় নিচের অংশ বেধে যাচ্ছে। এতে ক্ষতি হচ্ছে যানবাহনগুলোর। একই অবস্থা যশোর বেনাপোল সড়কের। যশোর-বেনাপোল জাতীয় মহাসড়কের ভাঙ্গা অংশে বিটুমিনের উপর ইট বিছিয়ে যোগাযোগ ঠিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। মহাসড়কের যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া, পুলেরহাট ও ঝিকরগাছা উপজেলার সেতুর দুই পাশে আমদানি ও রফতানি পণ্য বোঝাই ট্রাক ও যাত্রীবাহী যানবহনের তীব্র যানজটে মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। সওজ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৭ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৩ সালে যশোর শহরের দড়াটানা মোড় থেকে নাভারণ মোড় পর্যন্ত ওই মহাসড়কের ২৩ কিলোমিটারে ওভারলে (বিটুমিনের আস্তারণ) সংস্কার কাজ করা হয়। নিম্নমানের পাথরকুচি ও বিটুমিনের কারণে সংস্কারের এক বছর না যেতেই মহাসড়কের ওই অংশের কয়েকটি জায়গার বিটুমিন ওঠে বেহাল হয়ে যায়। যশোর শহরের চাঁচড়া ডালমিল এলাকায় রাস্তার মাঝে অর্ধেক অংশ কালভার্ট নির্মাণ করার জন্যে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। কালভার্টের দুই পাশে অন্তত আধা কিলোমিটার সড়ক ভাঙ্গাচোরা। এখান থেকে এক মিলোমিটারের মত দূরত্বে পুলেরহাট বাজার এলাকায় সড়কের অর্ধেকটা বন্ধ করে শ্রমিকরা ইট বিছানোর কাজ করছেন। সড়কের একপাশ দিয়ে ট্রাফিক পুলিশের নিয়ন্ত্রণে যানবহন চলাচল করছে। ওই অংশটুকু পারাপারের সময় এক প্রান্তের যানবহন আটকে অন্য প্রান্তের যানবাহন পার হতে সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। যে কারণে ভাঙ্গা অংশের দুই পাশে তীব্র যানজট ও জনজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এখান থেকে ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি পর্যন্ত অন্তত ২০ কিলোমিটারের মধ্যে গোটা সড়কে বিটুমিনের আস্থারণ উঠে বেহাল হয়ে গেছে। ঝিকরগাছা উপজেলা সদরে কপোতাক্ষ নদের উপর নির্মিত সেতুর দুই পাশের অন্তত আধা কিলোমিটার জুড়ে অত্যন্ত বেহাল অবস্থা। দুই পাশেই বিটুমিনের ওপর ইট বিছিয়ে রাখা হয়েছে। সেতুর পাটাতন ফেটে গেছে। যে কোন সময়ে পাটাতন ভেঙ্গে বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কা রয়েছে। যে কারণে যানবহনের চালকরা ধীরে ধীরে সেতু পারাপার হচ্ছেন। এতে দুই পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। রইচ উদ্দিন নামে পণ্যবাহী ট্রাকের একজন চালক বলেন, রাস্তা এতটাই খারাপ যে স্টিয়ারিংয়ের নিয়ন্ত্রণ ঠিক রাখা যাচ্ছে না। যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটার শঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া ট্রাকের বিয়ারিং, টিউ, পাতিসহ ট্রাকের যন্ত্রাংশ ভেঙ্গে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে যশোর সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, ঈদের আগে সড়কগুলো চলাচলের উপযোগী করার কাজ শুরু হয়ে গেছে। আমাদের পাঁচটি গাড়িতে প্রতিদিন ইট, বালু, পাথরের কুচি নিয়ে কাজ করছে। চেষ্টা করব যাতে মানুষ ঈদে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারে। তবে বৃষ্টিতে রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যে কারণে মেরামতে সময় প্রয়োজন। তিনি বলেন, যশোর-খুলনা এবং যশোর-বেনাপোল জাতীয় সড়ক মেরামতে সরকার ৬৪২ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। শীঘ্রই এগুলোর দরপত্র আহ্বান করা হবে।
×