ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অবশেষে অভয়নগরের শান্তিলতা পেলেন শান্তিনীড়

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ১৮ আগস্ট ২০১৭

অবশেষে অভয়নগরের শান্তিলতা পেলেন শান্তিনীড়

সাজেদ রহমান, যশোর অফিস ॥ অবশেষে শান্তিলতা খুঁজে পেলেন শান্তিনীড়। আবেগে আপ্লুত হয়ে শাড়ির আঁচলে চোখের জল মুছে গ্রহণ করলেন শান্তিনীড় নামের বাড়িটি। অভয়নগরের নির্বাহী কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার দুপুরে শান্তিলতার হাতে বাড়ির চাবিটি তুলে দেন। গত ২৯ জুলাই শান্তিলতাকে নিয়ে দৈনিক জনকণ্ঠে ‘শান্তিলতার সব জমি দখল করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ, আজ তিনি আশ্রয়হীন’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। শান্তিলতার বাড়ি অভয়নগর উপজেলার মাগুরা গ্রামে। ওই গ্রামে একটি বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে তার পিতা মঙ্গল বিশ্বাস ১৯৬৫ সালে ৩৩ শতক জমি দেন। অমানবিক বিষয় হলো নিরক্ষর, নিরীহ ও সরলপ্রাণ এ মহিলাকে রেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে গিয়ে ফাঁকি দিয়ে ১১ বিঘার জায়গায় ২২ বিঘা সম্পত্তির সবটুকু লিখে নেয়। এদিকে যারা শান্তিলতার সম্পত্তি জবর-দখল করে রেখেছিল তাদের স্কুল কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ করে স্কুলের দখলে নিয়ে নেয়। এই যখন অবস্থা তখন শান্তিলতা স্কুল কর্তৃপক্ষের কারচুপির কথা জানতে পারেন। তিনি বাকি জমি ফেরত পেতে আদালতের শরণাপন্ন হন। তাকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য নানাভাবে চাপ প্রয়োগ ও লাঞ্ছিত করা হয়। স্কুল কম্পাউন্ডের এক কোণে ঝোপঝারের মধ্যে শান্তিলতার একটি কুঁড়েঘর ছিল। ওই ছোট্ট খুপড়ি ঘরে পালিত পুত্র গৌতম, ওই পুত্রের স্ত্রী ও তাদের দুই সন্তানকে নিয়ে কোনরকমে খেয়ে না খেয়ে দিনযাপন করছিলেন অসহায় এ বৃদ্ধা। কিন্তু সেই আবাসটিও এখন নেই। তা ভেঙে ফেলতে হয়েছে। গত ১৪ জুলাই তার ঘরে সাপের সন্ধান পাওয়া যায়। ওঝা এনে ঘরটি থেকে পাওয়া যায় পাঁচটি গোখরা সাপ ও ২৪টি ডিম। আর এ কারণে শান্তিলতার ঘরটি ভেঙে ফেলে মাটি কেটে সরিয়ে ফেলা হয়। ফলে খোলা আকাশের নিচে ঠাঁই হয় শান্তিলতার। শান্তিলতার এ করুণ অবস্থার কথা জেনে অভয়নগর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা মনদীপ ঘরাই টানা বৃষ্টি উপেক্ষা করে ছুটে গিয়েছিলেন তার ভাঙা কুটিরে। শান্তিলতা তখন খোলা আকাশের নিচে বসেছিলেন। মনদীপ ঘরাই বলেন, আমি আশ্চর্য হচ্ছি এমন একজন দানশীল মহীয়সী নারী খোলা আকাশের নিচে। অথচ এলাকার কারও এতটুকু দয়া হলো না। এরপর নির্বাহী কর্মকর্তা মনদীপ ঘরাই শান্তিলতার বসবাসের জন্য ব্যবস্থা করেন। তিনি অভয়নগরের সকলকে ওই মহিলার বাড়ি তৈরি করার জন্য এগিয়ে আসতে আহবান জানান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আড়াই বান্ডিল ঢেউটিন এবং সাড়ে ৭ হাজার টাকা দেন। এবার এগিয়ে আসেন পূজা উদযাপন পরিষদ, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান। মোট ৬ বান্ডিল টিন এবং ৪০ হাজার টাকা দিয়ে যেখানে শান্তিলতার জমি ছিল সেখানেই বাড়ি তৈরি করা হয়।
×