ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সিডনির মেলব্যাগ ॥ অজয় দাশগুপ্ত

অতিক্রান্ত শোকদিবস সংহতি ও শক্তির কথা ভাবুন

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ১৮ আগস্ট ২০১৭

অতিক্রান্ত শোকদিবস সংহতি ও শক্তির কথা ভাবুন

জাতীয় শোক দিবস শেষ হয়েছে। এখন আমাদের হিসাব-নিকাশের পালা। বিশেষত এ বছর আমরা দেখেছি ৩২ নাম্বারে হামলার পরিকল্পনার কথা। করতে পারলে কি হতো ভাবলেই ভয়ে গা শিউরে ওঠে। এবারের শোক দিবসে দেশে বিদেশে বিভক্ত বাঙালীর একাংশে সেই ক্রোধ আর হিংসা দেখেছে যা ছিল স্বাধীনতার পর। তখনকার সঙ্গে যে বিষয়গুলো হুবহু মিলে যাচ্ছে তার কিছু নমুনা দিচ্ছি। তখন সবাই আওয়ামী লীগ, সবাই বাকশাল। এমনকি জেনারেল জিয়াও বাকশালে। তখন দলে মোশতাকের জয় জয়াকার। সেই মোশতাক যিনি বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সঙ্গে নিবিড় থাকতেন। যিনি তাদের বোকা বানিয়ে তাজউদ্দীনের মতো নেতাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলেন। যার ষড়যন্ত্রে বঙ্গবন্ধু দলেও একা হয়ে পড়েছিলেন। তখনকার সঙ্গে আরও কিছু মিল পাচ্ছি দেশের জনমনে ভারত বিরোধিতার বহর দেখেল কেনা জানে ভারতের সঙ্গে আমাদের অসম সম্পর্ক এবং শোষণের কথা। বড় মাছ ছোট মাছকে খেয়ে ফেলার এক পুকুরে বসবাস আমাদের। তারপরও আজ আমাদের মাথা চিবিয়ে খাওয়া তাদের দ্বারা অসম্ভব। বাংলাদেশ এখন বড় হয়ে উঠেছে। তাকে হজম করা কারও জন্য সহজ কিছু না। আর এই উন্নয়ন বা অগ্রগতির পেছনে আছে শেখ হাসিনার সবল ও প্রজ্ঞাময় নেতৃত্ব। অথচ যেকোন সময়ের চাইতে এখন আবার ভারত বিদ্বেষের নামে ষড়যন্ত্র চলছে বেশি। ভারত আমাদের সম্মান করুক বা আমাদের কাঁধে প্রভুর হাত না রাখুক এটা যারা চায় তাদের এমন ভূমিকা থাকলে মানতাম। যারা ভারতকে দেশ বিকিয়ে গদি বিকিয়ে দেশ শাসনে আসতে চায় তারাই আসলে শেখ হাসিনাকে ভারত প্রেমের জন্য দায়ী করছে। যেমনটি করা হতো বঙ্গবন্ধুকে। এবারের শোক দিবসে আমরা আরও দেখলাম সারাদেশে কোলাহলের ভেতর দিয়ে নেতার আসল ইমেজ বা আদর্শ বেরিয়ে আসতে দেয়নি একশ্রেণীর মানুষ। এরা ভুঁইফোড়। আজ আছে কাল থাকবে না। মূল যে শোক বা শক্তি তার গভীরতা পরিমাপের সময় এখন। কারণ, দেশে বিদেশে ষড়যন্ত্র চলছে এই কিছুদিন আগে সিডনির বাঙালী দোকান ও ব্যবসা অধ্যুষিত এলাকার নাম নিয়ে যা দেখেছি তাতে এটা স্পষ্ট এরা থামেনি। এখানকার মানে অষ্ট্রেলিয়ান দফতর থেকে বলা হয়েছিল বাংলাদেশীরা একমত হলে এবং চাইলে তারা এই এলাকার রাস্তার নামটি আমাদের দেশের কোন নেতা বা মানুষের নামে করে দেবেন। আর যায় কোথা? সাধারণ বাঙালী ও আওয়ামী লীগের চাওয়াকে একপাশে সরিয়ে শুরু হয়ে গেল ষড়যন্ত্র। মাঠে নেমে গেল বিএনপি ও স্বাধীনতাবিরোধীচক্র। ব্যস। তাদের হৈ চৈ লবিং আর চিঠি পাল্টা চিঠিতে থমকে গেল সেই প্রক্রিয়া। এতে কার লাভ? তাদের মনোগত বাসনা হচ্ছে জিয়ার নামে হলে হলো না হলে নাই কিন্তু বঙ্গবন্ধুর নামে যেন কোন কিছু না হয়। কারণ, এটা তো আর বাংলাদেশ না যে আজ করলে কাল পাল্টানো যাবে। অথচ এই অপপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে তারা আমাদের জাতির ইতিহাস ও শ্রেষ্ঠ সন্তানকে সরিয়ে রাখলেন এদেশের মূলধারা থেকে। এ বিষয়ে হাইকমিশন বা তালেবর আওয়ামী লীগারদের কোন ভূমিকার কথা শুনিনি এখনও। তাই আমাদের মনে রাখতে হবে যারা এখন অতি ভক্ত তাদের কাছে বঙ্গবন্ধু বা দেশ কোনটাই নিরাপদ না। এরা যতদিন গদি আছে যতদিন পাওয়ার আছে ততদিন থাকবে। এখন সময় এসেছে গ্রাম-গঞ্জ শহর মফস্বলে ত্যাগী নেতা-কর্মীদের কাছে ফেরত যাবার। এবার আমরা দেখেছি খালেদা জিয়া কেক কাটেননি। কাটলেও তার লন্ডনের কেকের খবর দেশে পৌঁছায়নি। এতে এমন কিছু ভাবার অবকাশ নেই যে তাঁর সুমতি হয়েছে। আমার ধারণা এটি একটি কৌশল। আপাতত দল ও দলের নেতাদের তেমন কোন সাহস বা ভূমিকা নেই যাতে এগুলো করে পার পাওয়া যেতে পারে। তাছাড়া এই অপপ্রক্রিয়া তিনি এবং দলকে বিপদে ফেলার বাইরে তেমন কিছু দেয়নি। আজকের বাস্তবতায় নতুন প্রজন্ম এমনকি পুরনো মানুষেরাও জানেন খালেদা জিয়ার মূল জন্মদিন নিয়ে বিতর্ক আছে। কোন্টি তাঁর জন্মদিন তিনি ছাড়া কেউ জানে না। আর এভাবে ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালনের ঘনঘটা বিএনপিকে বিতর্কিত করেছে। ঘৃণিত করেছে। ফলে আপাতত তারা একাজ থেকে দূরে থাকলেও ভবিষ্যতে আরও বড় রক্তমাখা কেকের দুর্ভাবনা উড়িবে দেয়া যায় না। সাবধানতার বিকল্প নেই। শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের ওপর এখন আক্রোশ আরও ঘনীভূত। এটা মানি দলে দলের বাইরে সুবিধাবাদীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। এদের সাইজে আনা মুশকিল। কিন্তু একমাত্র নেত্রীই পারবেন তা করতে। শোকদিবসে যারা বাড়াবাড়ি করে মানুষের মনে সন্দেহ ঢোকানোর কাজ করেছে তাদের তালিকা করা হোক। বঙ্গবন্ধু এমন এক জায়গায় তাঁকে আর কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। এই দেশে এই মাটিতে তাঁকে অপমান করার শক্তি আজ হীনবল। আমাদের যৌবনে আমরা ডেমোক্র্যাটিক লীগের নামে যে রাজনৈতিক দল দেখেছিলাম আজ তার চিহ্ন নেই কোথাও। ফ্রিডম পার্টি নামের যে দল, খুনীদের সে দলও নেই। সময় সব মুছে দিয়েছে। সময় ও ইতিহাস বঙ্গবন্ধুকে কোনদিনও ভুলে থাকেনি। ভুলেছি আমরা। সেই আমাদেরই সাবধান হতে হবে। আওয়ামী লীগের বড় শক্তি তার তৃণমূল। বিএনপির কট্টর সমথর্ক ও স্বীকার করেন এ কারণেই তারা এঁটে উঠতে পারে না। সেই জায়গায় ফিরতে হবে তাদের। কিছু মুখচেনা মিডিয়াবান্ধব আর অন্যদল থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসা মানুষ বা নেতা বিএনপির বারোটা বাজিয়ে ছেড়েছে। আওয়ামী লীগ এদেশের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের দল। তাদের কাছ থেকে তেমন কিছু আশা করে না মানুষ। শোক দিবসে এদের দু:খ আর নেতাগিরিতে বিরক্ত মানুষ মূলে ফিরতে চায়। মনে রাখতে হবে ইতিহাস এখনও সবাইকে জানানো যায়নি। এখনও মূল্যায়ন হয়নি কেন সেদিন কেন সেসময় প্রতিবাদ সংগঠিত করা যায়নি। আজকের বাস্তবতায় এগুলো জানা এবং ভবিষ্যত ঠিক রাখা জরুরী। শেখ হাসিনা এবং তাঁর নেতৃত্বের ওপর রুষ্ট মানুষরা সক্রিয়। এরা মোশতাকের মতো পালাবদল ঘটালেও সার্থক হতে পারবে না। কিন্তু আবার দেশকে নিয়ে যাবে পঞ্চাশ বছর পেছনে। সেটা যেন না হয়। শোক দিবসের শক্তি এখনও অধরা। দেশে বিদেশে এখনও নাগিণীর বিষাক্ত নিশ্বাস। তা থেকে বেরিয়ে সোনার বাংলা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার কাজ করতে হলে শেখ হাসিনাকে লাগবেই। যারা মাতম করলেন তারা কি একবারও ভেবে দেখেছেন এদিনে তাঁর বুকে কেমন কষ্ট জমে থাকে? প্রকৃতি বা বিধাতা মানুষকে শোক দেন পর্যায়ক্রমে। আমাদের মা-বাবা আত্মীয়-স্বজনদের শেষ যাত্রার দিনগুলো পৃথক। যাতে মানুষ শোক সহ্য করতে পারে। তিনি এবং তাঁর বোনের বেলায় এতগুলো মানুষ এত আপনজনদের এক রাতে একসঙ্গে হারানোর বেদনা বুঝি আমরা? বুঝলে তাঁর প্রতি ভালবাসা ও আবেগ আরও বাড়ার কথা। তিনি এই শোক নিজের ভেতর ধারণ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আর আমরা কখনও বন্যা কখনও ঝড় কখনও রাজনীতি কখনও ধর্ষণ সবকিছুর জন্য তাঁকে দোষারোপ করে পার পেয়ে যাচ্ছি। বাঙালী যদি তার মঙ্গল চায় দেশের সার্বিক উন্নতি চায় তো একত্রিত মঙ্গল কামনার বিকল্প নেই। আর তার একমাত্র আশ্রয় বঙ্গবন্ধু। আগস্ট যেন এ কথাই বুকের ভেতর দিতে পারে আমাদের।
×