ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাবা জামায়াতের সঙ্গে যুক্ত

পান্থপথে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিহত জঙ্গী সাইফুল শিবির কর্মী

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৬ আগস্ট ২০১৭

পান্থপথে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিহত জঙ্গী সাইফুল শিবির কর্মী

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ ঢাকার পান্থপথে আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত জঙ্গী সাইফুল ইসলাম (২১) স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছাত্র শিবিরের সঙ্গে যুক্ত ছিল। খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার সাহস ইউনিয়নের নেয়াকাঠি গ্রামে তার বাড়ি। তার বাবা আবুল খায়ের মোল্লা স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামতি করলেও তিনি জামায়াতে ইসলামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। এদিকে সাইফুল মঙ্গলবার ঢাকায় নিহত হওয়ার পর তার বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডুমুরিয়া থানা পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তার বাড়িতে অভিযান চালায়। এলাকায় ভদ্র ছেলে হিসেবে সাইফুলের পরিচিতি থাকলেও জঙ্গী সম্পৃক্ততার খবরে স্থানীয়রা অবাক হয়েছেন। জানা গেছে, স্থানীয় মাঠের হাট জামে মসজিদের ইমাম আবুল খায়ের মোল্লার একমাত্র ছেলে সাইফুল। খুলনা সরকারী ব্রজলাল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। শিক্ষাজীবনের শুরুতে সে পড়াশুনা করেছে মাদ্রাসায়। ডুমুরিয়া উলা মাদ্রাসা থেকে দাখিল এবং খুলনা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করে। তার ছোট দুই বোনের মধ্যে বড় সাজিদা খাতুন ইরানী স্থানীয় জিলেরঘাট মাদ্রাসার আলিমের ছাত্রী এবং ছোট বোন তামান্না খাতুন রাজাপুর মাদ্রাসার ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী। মাদ্রাসায় পড়াকালে সাইফুল ধর্মীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। যুক্ত হন জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছাত্র শিবিরের সঙ্গে। তার মা আসমা খাতুন বাক প্রতিবন্ধী। ডুমুরিয়া থানার ওসি মোঃ হাবিল হোসেন জানান, সাইফুল ইসলামের বাবা আবুল খায়ের মোল্লাকে প্রথমে থানায় ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে তার ছেলে সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা হয়। পরে তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বাড়ি থেকে মাওলানা আবুল আলা মওদুদীর লিখিত ‘তাফহীমুল কোরআন’-সহ বেশকিছু ইসলামী বইপত্র উদ্ধার করা হয়। জঙ্গীদের কাছে এসব বই সরবরাহ করা হয় বলে পুলিশ দাবি করেছে। পুলিশ জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নিহত সাইফুল ইসলামের বাবা আবুল খায়ের মোল্লা স্বীকার করেছেন তিনি জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। নোয়াকাঠি মাঠেরহাট মসজিদের ইমাম ও স্থানীয় সাহস ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর কোষাধ্যক্ষ। এদিকে পুলিশ সাইফুল ইসলামের সম্পর্কে জানতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার দুই বন্ধু ঘোষগাতী গ্রামের সানি ও নোয়াকাঠি গ্রামের ঈষাণকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। সাইফুলের বাবার উদ্ধৃতি দিয়ে পুলিশ জানায়, সাইফুল ইসলাম খুলনার নেভি কলোনিতে থেকে সরকারী বিএল কলেজে পড়াশুনা করত। প্রতি সপ্তাহে সে নোয়াকাঠির বাড়িতে আসত। গত ৭ আগস্ট চাকরির কথা বলে সে খুলনা থেকে ঢাকায় যায়। ঢাকায় যাওয়ার পর সর্বশেষ রবিবার সাইফুল বাড়িতে যোগাযোগ করেছিল। সে সময় জানিয়েছিল, সোমবার বাড়িতে ফিরবে। কিন্তু সে বাড়ি আসেনি। মঙ্গলবার তার আত্মঘাতী হওয়ার সংবাদ পাওয়া যায়। নোয়াকাঠি গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জানান, আবুল খায়ের তার প্রতিবেশী। জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে নোয়াকাঠি মোল্লাপাড়া জামে মসজিদের ইমামের পদ থেকে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল। এরপর খয়ের মাঠেরহাট জামে মসজিদে ইমামতি করেন। খুলনা জেলা পুলিশ সুপার নিজাম উল হক মোল্লা জানান, সাইফুলের বাবা আবুল খায়ের মোল্লা, সাইফুলের ২ বন্ধু সামী ও ইসানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডুমুরিয়া থানায় আনা হয়েছে। সাইফুলের বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এলাকা ত্যাগ না করার নির্দেশ দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে তার ২ বন্ধুকে এখনও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ বিষয়টি পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
×