ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত দুটি শহরে কার্ফু জারি

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ১৪ আগস্ট ২০১৭

 মিয়ানমারে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত দুটি শহরে কার্ফু জারি

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ সেনা মোতায়েনের পর মিয়ানমারের সিটওয়ের (সাবেক আকিয়াব) রোহিঙ্গা জনঅধ্যুষিত মংডু ও বুচিদং শহরে কার্ফু জারি করা হয়েছে। শনিবার রাত থেকে এ কার্ফু বলবৎ হয়েছে অনির্দিষ্টকালের জন্য। এর ফলে রোহিঙ্গা জনপদের এ দুটি শহরে সেনা তৎপরতায় কি ঘটতে যাচ্ছে তা নিয়ে মিয়ানমারে অবস্থানকারী এবং বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মাঝে নতুন করে উদ্বেগ উৎকণ্ঠার জন্ম নিয়েছে। কারণ ইতোমধ্যে সিটওয়ে ও রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের ওপর যে বর্বরতার ঘটনা ঘটেছে তার নেপথ্যে সে দেশের সেনাবাহিনীর বড় ধরনের ভূমিকা রয়েছে। পুলিশ ও সীমান্ত রক্ষীরাও সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে অগণিত রোহিঙ্গা নরনারী ও শিশুকে যেমন হত্যা করেছে, তেমনি দেশান্তরি হতে বাধ্যও করেছে। সীমান্তের ওপার থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরদিন ভোর ৬টা পর্যন্ত কার্ফু চলাকালীন মংডু ও বুুচিদং শহরের এক কিলোমিটারের মধ্যে চলাফেরা, আলাপ-আলোচনা, জড়ো হওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মংডু শহরে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ভুক্ত ৬ নারী পুরুষকে হত্যার ঘটনার পর গত বৃহস্পতিবার থেকে এ দুটি শহরে শয়ে শয়ে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। মিয়ানমার সরকার নীতি নির্ধারক মহলের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে হত্যাকা-ের নেপথ্যে আন্তর্জাতিক জঙ্গীগোষ্ঠীর চক্রান্ত রয়েছে। এসব জঙ্গীগোষ্ঠীর সঙ্গে মিয়ানমারের বিচ্ছিতাবাদী গ্রুপ আরএসও, আল এয়াকিন ও তাদের সঙ্গে থাকা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ইন্ধন রয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, সর্বশেষ ম্রো সম্প্রদায়ের ৬ সদস্যকে হত্যা করার পর সে দেশের উগ্রবাদী ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেপিয়ে তোলা হয়েছে। অদ্ভুত পরিস্থিতিতে নতুন করে সীমান্ত পেরিয়ে আবারও রোহিঙ্গা আগমনের আশঙ্কা করা হচ্ছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নেতৃত্বদানকারী নেতা পর্যায়ের কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, কতিপয় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীর কারণে মিয়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরা নির্মম বর্বরতার শিকার হচ্ছে বারে বারে। বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন হওয়ায় সেখান থেকে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ফাঁকফোকর দিয়ে এবং অবৈধ পথে রোহিঙ্গারা কেবলই বাংলাদেশে আসছে। রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন সংগঠন মিয়ানমারের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর রোহিঙ্গা সদস্যদের বাংলাদেশে চলে আসতে উৎসাহ যোগাচ্ছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে প্রাপ্ত অর্থের একটি অংশও ঢালছে। ফলে ঘটনাটি পালিয়ে আসার ক্ষেত্রে উৎসাহও যোগাচ্ছে। জানা গেছে, আল এয়াকিনের অস্ত্র ও অর্থের যোগানদাতা মাস্টার আইয়ুব নামের একজন রোহিঙ্গা নেতার সঙ্গে ওমরা হজের নামে সৌদি আরব গিয়ে টেকনাফের দুই প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি সাক্ষাত করে এসেছেন। যার মধ্যে একজন রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আসামিও রয়েছেন। সৌদি আরব থেকে ফিরে আসার মাস দেড়েকের মধ্যে মিয়ানমারে ফের অশান্তির হাওয়া বইতে শুরু করেছে। গেল বছরের অক্টোবরে মংডুর কাউয়ার বিলে তিনটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা, অস্ত্র লুট ও ৯ পুলিশ সদস্যকে হত্যার ঘটনার পর রাখাইন প্রদেশে নেমে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর বর্বর নানা ঘটনা। এতে প্রাণ হারায় অনেকে। দেশ ত্যাগ করে হাজারে হাজারে। সর্বশেষ সে দেশের ম্রো সম্প্রদায়ের ছয় সদস্যকে হত্যা করার বিষয়টি ষড়যন্ত্রেরই একটি অংশ। যাতে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পুনরায় দমন নিপীড়ন নেমে আসে। এদেশে চলে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব নিয়ে অনড় অবস্থানে রয়েছে মিয়ানমার সরকার। এ অবস্থায় নতুন করে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসার পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ার সমূহ ধারণা করা হচ্ছে। গত শনিবার রাতে টেকনাফের লেদা সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে দুটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ৬০ রোহিঙ্গাকে বিজিবি সদস্যরা পুনরায় ফেরত পাঠিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ বিজিবি-২ ব্যাটেলিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর শরীফুল ইসলাম।
×