ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রাম্য সালিশে রায়

প্রতিবন্ধী কিশোরীর ইজ্জতের মূল্য ৮০ হাজার টাকা

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১৪ আগস্ট ২০১৭

প্রতিবন্ধী কিশোরীর ইজ্জতের মূল্য ৮০ হাজার টাকা

নিজস্ব সংবাদদাতা, সান্তাহার, ১৩ আগস্ট ॥ বগুড়ার আদমদীঘিতে সম্পর্কীয় নাতনি প্রতিবন্ধী কিশোরীর সঙ্গে অনৈতিক মেলামেশায় গর্ভধারণের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে আব্দুল হাকিম নামের এক নরপশু। সে শুধু এতেই ক্ষ্যান্ত থাকেনি, দালাল লাগিয়ে গর্ভপাতের মাধ্যমে ভ্রƒণ হত্যার ঘটনাও ঘটিয়েছে। ঘটনাটি জানাজানি হবার পর শনিবার রাতে ওই গ্রামে সালিশ বসিয়ে মীমাংসা করে দিয়েছে কয়েক গ্রাম্য মাতবর। রবিবার সরেজমিনে জানা গেছে, প্রতিবন্ধী মেয়ের (১৮) সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলে দাদা সম্পর্কীয় প্রতিবেশী আব্দুল হাকিম (৪৩)। একপর্যায়ে কিশোরী গর্ভবতী হয়ে পড়ে। কিশোরীর মা মাসখানেক আগে তার মেয়ের অবস্থা বুঝতে পারে। পরে কে তার এই সর্বনাশ করেছে তা মেয়ের ইশারা ভাষায় চিহ্নিত করে। ঘটনাটি ওই নরপশুকে জানালে প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করতে বাধ্য হয়। এ নিয়ে কানাকানি চলার এক সময় প্রতিবেশী জনৈক কিনা মিয়া নামের এক ব্যক্তির পরামর্শ চায় ওই কিশোরীর পরিবার। কিনা মিয়া গর্ভপাত করানোর পরামর্শ দেয়। কিশোরীর মা মনোয়ারা বেগম ঘটনাটি তার স্বামী শাহজাহানকে ফোনে অবহিত করলে, তিনি বাড়িতে না ফেরা পর্যন্ত কোন কিছু না করার জন্য স্ত্রীকে নির্দেশ দেয়। কিন্তু প্রতিবেশী কিনা মিয়ার স্ত্রী নাসিমা বেগম তড়িঘড়ি করে চলতি মাসের প্রথম দিকে ওই কিশোরীকে উপজেলার মুরইল বাজারে এক পল্লী চিকিৎসকের কাছে গিয়ে গর্ভপাত করায়। এর পর পুরো ঘটনা এক কান দুই কান করতে করতে প্রায় সারা গ্রামে জানাজানি হয়ে পড়ে। অবস্থা বেগতিক হলে উভয় পরিবার গ্রামের মাতব্বরদের শরণাপন্ন হয়। এর প্রেক্ষিতে গ্রাম্য মাতব্বররা থানা পুলিশকে না জানিয়ে শনিবার রাতে গ্রামের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সালিশ বৈঠক বসায়। সালিশে সমবেত হয় গ্রামের সব বয়সের দুই শতাধিক মানুষ। সালিশে নরপশু আব্দুল হাকিম ও গর্ভপাতে সহায়তাকারী নাসিমা বেগম তাদের দোষ স্বীকার করে। তাদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে মাজেদুল, জালাল, লুৎফর, ইমদাদুল ও তাসেরসহ কয়েক মাতব্বর আব্দুল হাকিমকে সালিশেই উত্তম-মধ্যম দেয়া ও নগদ ৭০ হাজার টাকা জরিমানা এবং গর্ভপাত করানোর দায়ে প্রতিবেশী কিনা মিয়ার স্ত্রী নাসিমা বেগমের ১০ হাজার টাকা জরিমানা প্রদানের সিদ্ধান্ত দেয়। এর প্রেক্ষিতে আব্দুল হাকিম তাৎক্ষণিকভাবে ৫০ হাজার টাকা প্রদান করে। অবশিষ্ট ২০ হাজার টাকার প্রদানের জন্য ১০ দিনের সময় নিয়েছে। পক্ষান্তরে নাসিমা বেগম চার আনা ওজনের সোনার কানের দুল দিয়ে তার জরিমানা পরিশোধ করেছে বলে জানিয়েছেন প্রতিবন্ধী কিশোরীর বাবা, হাকিমের একমাত্র ছেলে রায়হান আলীসহ গ্রামবাসী।
×