ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

অসদাচরণের ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেয়ার কর্তৃত্ব এখন মহামান্য রাষ্ট্রপতির আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের অভিমত

অসদাচরণ কিনা খতিয়ে দেখা হবে ॥ ইতিহাস বিকৃতি

প্রকাশিত: ০৫:০১, ১৪ আগস্ট ২০১৭

অসদাচরণ কিনা খতিয়ে দেখা হবে ॥ ইতিহাস বিকৃতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বক্তব্য ব্যবহার করা হয়েছে। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে দেশ একক কারও নেতৃত্বে স্বাধীন হয়নি বলে যে পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে, সেটিতে ইতিহাস বিকৃতি হয়েছে। এসব এক্সপাঞ্জ করার প্রয়োজন হলে রিভিউ করবে সরকার। এবং এটা অসদাচরণ কিংবা অন্য কিছু কিনা, সেটা খতিয়ে দেখার অবকাশ আছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কোন বিচারকের অসদাচরণের ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেয়ার কর্তৃত্ব কার হাতে- এমন প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এর অথরিটি এখন মহামান্য রাষ্ট্রপতি। তার কারণ হচ্ছে, সুপ্রীম জুডিসিয়াল কাউন্সিল সম্পর্কে যদি (সংবিধানে) কোন বক্তব্য না থাকে, আর ষোড়শ সংশোধনীও যদি না থাকে, তাহলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ছাড়া আর গতি নাই।’ রবিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির আয়োজনে সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। রায়ের ওই বক্তব্যে যে ‘ইতিহাস বিকৃতি হয়েছে- এর মধ্যে কোন সন্দেহ নাই।’ এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, আমাদের স্বাধীনতা কিন্তু রাতারাতি আসে নাই। স্বাধীনতার ঘোষণাটাও রাতারাতি হয় নাই। একটা রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের রায়ে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। ‘এ ক্ষেত্রে এটাকে আমি বিকৃত করলেও আমি একটা অপরাধ করব।’ তবে এটা অসদাচরণের মধ্যে পড়ে কিনা, সেটা বলা মুশকিল। কারণ, অসদাচরণের কোন সংজ্ঞা এখন পর্যন্ত নেই। সে ক্ষেত্রে এটা খতিয়ে দেখতে হবে। আরেক প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, আদালত কিছু বাতিল করলে আগের বিধান আপনা আপনি ফিরে আসে কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে। ‘একটা দৃষ্টান্ত হচ্ছে অষ্টম সংশোধনী মামলা। আদালত কিন্তু কোন আইন প্রণয়ন করতে পারে না। আদালত আইনের ব্যাখ্যা দিতে পারে। যতটুকু ‘সংবিধানের লঙ্ঘন’ বলেছেন, এতটুকু উনাদের এখতিয়ারে আছে, রায় দিয়েছেন। কিন্তু যেটা বহাল করতে বলেছেন, সেটা বলতে পারেন কিনা, তা সম্পর্কে সন্দেহ আছে।’ সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে আনিসুল হক বলেন, ‘অসদাচরণের কোন সংজ্ঞা এখন পর্যন্ত নাই। সে ক্ষেত্রে এটা খতিয়ে দেখতে হবে, এটা অসদাচরণ কিনা। বা অন্য কিছু হয়েছে কিনা, সেটা খতিয়ে দেখার কিন্তু অবকাশ আছে।’ উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের যে পরিবর্তন ষোড়শ সংশোধনীতে আনা হয়েছিল, তা ‘অবৈধ’ ঘোষণার রায় গত ১ আগস্ট প্রকাশ করে সুপ্রীমকোর্ট। ৭৯৯ পৃষ্ঠার ওই রায়ের ৫৪তম পৃষ্ঠায় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার পর্যবেক্ষণের অংশে বলা হয়েছে, ‘কোন জাতি বা রাষ্ট্র একজন ব্যক্তিকে নিয়ে বা একজন ব্যক্তির মাধ্যমে সৃষ্টি হয় না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নের কথা বলে গেছেন, আমরা যদি সত্যিই তা বাস্তবায়ন করতে চাই, আমাদের অবশ্যই আমিত্ববোধের ওই আত্মঘাতী উচ্চাকাক্সক্ষা আর আসক্তি থেকে মুক্ত থাকতে হবে, কেবল একজন ব্যক্তি বা একজন মানুষই সব করেছে।’ সরকার কীভাবে তা করতে চায় সে বিষয়ে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে মন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আদালতের মাধ্যমেই তা করা হবে। ‘সুপ্রীমকোর্ট রুল বলে, রিভিউয়ের মাধ্যমে এর জন্য আবেদন করতে হয়। আমরা এখনও সিদ্ধান্তে আসিনি। এটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি।’ রিভিউ করার বিষয়ে এক প্রশ্নে আনিসুল হক বলেন, ‘এটা কিন্তু ৭৯৯ পাতার একটা রায়। রিভিউ করতে গেলেও পড়ে জায়গাগুলো চিহ্নিত করতে হবে। আজকাল-পরশুর মধ্যে হয়ে যাবে- সেটা আমি বলব না। ভীষণভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। ওখানে আপত্তিকর, অপ্রীতিকর ও অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা আছে, সেইগুলো এক্সপাঞ্জ করার কথা আমি বলেছি। সে বিষয়ে কাজ চলছে।’ রায় নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সমালোচনার মধ্যেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শনিবার রাতে প্রধান বিচারপতির বাসায় যান এবং রায় নিয়ে আলোচনা করেন। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘রাতে হয়েছে বলে সাক্ষাতের বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানি না। তবে এটা সত্যি, বিচার, আইন ও শাসন বিভাগ- এই তিনটা হচ্ছে রাষ্ট্রের স্তম্ভ। এ ক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে কিন্তু আলাপ-আলোচনা চলতে পারে। যতক্ষণ পর্যন্ত দেশের উন্নতির জন্য, বড় ধরনের স্বার্থে আমরা আলাপ-আলোচনা সব সময়েই চালিয়ে যাব।’ আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কিন্তু কোন ক্ষমতার প্রতিযোগিতায় নামি নাই। আমাদের পথ চলতে গিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। সেটা দেশের স্বার্থে নিরসন করা প্রয়োজন হবে; শেখ হাসিনার সরকার তা করবেই। তার কারণ হচ্ছে, শেখ হাসিনা জনগণের ভাল চান। দেশের ভাল চান। তাই আলাপ- আলোচনার দ্বার সব সময় খোলা থাকবে।’ সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায় থেকে যেভাবে রায়ের সমালোচনা করা হচ্ছে, তাতে আদালত অবমাননা হয় কিনা, এমন প্রশ্ন রাখেন সাংবাদিকরা। এই রায়ের মধ্যে বিচার এবং নির্বাহী বিভাগের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জুডিসিয়াল, লেজিসলেটিভ এবং এক্সিকিউটিভ- এই তিনটি বিভাগ হচ্ছে রাষ্ট্রের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। পথ চলতে গিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হতেই পারে, সেটি মুখ্য নয়। আলাপ-আলোচনা করে সমাধান করে এগিয়ে চলাটাই মুখ্য। এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে ব্যক্তিগতভাবে না দেখে তিনটি চেয়ারকে গুরুত্ব দেয়া উচিত। এখানে তিন ব্যক্তি গৌণ, চেয়ারটি মুখ্য। আমরা চেয়ারকে সম্মান করব, আশপাশে ফিরেও তাকাব না।’ তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, এমন কোন আইন সরকার করবে না, যা ‘সাংবাদিকবান্ধব নয়’। কিন্তু অপরাধকে অপরাধ হিসেবেই গণ্য করতে হবে। ‘আপনারা অপেক্ষা করেন। ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্টের ১৯ ও ২০ ধারা আপনাদের সামনে যখন আসবে, কোন আপত্তি থাকলে বলতে পারেন। আমার বিশ্বাস আপনাদের সামনে এলে আপনারা সেটা গ্রহণ করতে পারবেন।’ ‘মিট দ্য রিপোর্টাস’ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মুরসালীন নোমানী। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেনÑ আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মোঃ জহিরুল হক।
×