ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ১২ আগস্ট ২০১৭

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ

ভারতের যেমন মহাত্মা গান্ধী, যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন, চীনের মাও সেতুং, ভিয়েতনামের হো চি মিন, কিউবার ফিদেল ক্যাস্ট্রো, দক্ষিণ আফ্রিকার লেনসন ম্যান্ডেলা, সোভিয়েত ইউনিয়নের লেনিন সে দেশের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ, তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু অবিচ্ছেদ। কারণ বঙ্গবন্ধু ব্যতীত এ দেশের ইতিহাস ব্যাখ্যা করা অত্যন্ত দুঃসাধ্য। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র। ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলগুলোর রাজনৈতিক সম্মেলনে ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবি পেশ করার মধ্য দিয়ে তিনি বাঙালী জাতিকে স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছেন। বাঁচার স্বপ্ন, অধিকার আদায়ের স্বপ্ন, অন্যায়ের প্রতিবাদ করার স্বপ্ন। মূলত তখন থেকেই বাঙালীরা তাদের স্বাতন্ত্র্যের কথা ভাবতে শুরু করেছিল। স্বপ্ন দেখেছিল স্বায়ত্তশাসনের। বঙ্গবন্ধুর অবিসংবাদিত বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং তাঁরই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে নিরস্ত্র বাঙালী শত্রু মোকাবেলা করেছিল। যে মন্ত্র তিনি উচ্চারণ করেছিলেন ১৯৭১ সালে ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণেÑ ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম,’ ‘রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেব। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব, ইনশাল্লাহ।’ তাঁরই নির্দেশনার বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে বিজয় লাভ করে। যা তিনি ৭ মার্চ ভাষণেই বাঙালীদের বলেছিলেন, ‘আমরা ভাতে মারব, আমরা পানিতে মারব।’ শুধু তাই নয়, পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের নামকরণও করেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৬৯ সালে ৫ ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধু পূর্ব বাংলার নামকরণ করেন ‘বাংলাদেশ’। তিনি বলেন, এক সময় এ দেশের বুক হতে, মানচিত্রের পৃষ্ঠা হতে ‘বাংলা’ কথাটির সর্বশেষ চিহ্নটুকুও চিরতরে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে।... একমাত্র ‘বঙ্গোপসাগর’ ছাড়া আর কোন কিছুর সঙ্গে ‘বাংলা’ কথাটির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।... জনগণের পক্ষ হতে আমি ঘোষণা করছি আজ হতে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটির নাম ‘পূর্ব পাকিস্তান’ এর পরিবর্তে শুধুমাত্র ‘বাংলাদেশ’। এত কিছু করার পরও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে নির্মম হত্যার শিকার হতে হয়। কিন্তু ইতিহাস তাকে হত্যা করতে দেয়নি। তার কৃতিত্বকে হত্যা করা সম্ভব হয়নি। তাই তো ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে স্বীকৃতি দিতে গিয়ে ১৬ আগস্ট লন্ডনের ‘দি ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস’ উচ্চারণ করেছিল, ‘এই করুণ মৃত্যুই যদি মুজিবের ভাগ্যে অবধারিত ছিল, তাহলে বাংলাদেশের জন্মের মোটেই প্রয়োজন ছিল না।’ ’৭৫-এর ২৮ আগস্ট লন্ডনের ‘দি লিসনার’ পত্রিকায় বিবিসির সংবাদদাতা ব্রায়ন ব্যারনের ভবিষ্যদ্বাণী ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের হৃদয়ে উচ্চতর আসনেই অবস্থান করবেন। তাঁর বুলেট বিক্ষত বাসগৃহটি গুরুত্বপূর্ণ ‘স্মারকচিহ্ন এবং কবরস্থানটি’ পুণ্য তীর্থে পরিণত হবে’। আজ তাই হয়েছে। বাংলাদেশের প্রগতিশীল সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবী আবুল ফজলের কথায়, ‘বাংলাদেশের সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ও সর্বাধিক উচ্চারিত নাম : শেখ মুজিবুর রহমান।’ কারণ বঙ্গবন্ধুর মতো করে কেউই বাঙালীকে জাগ্রত করতে পারেনি। শান্ত সিং নটর ডেম কলেজ, ঢাকা
×