ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পাল্টাপাল্টি অবস্থানে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবীরা

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১১ আগস্ট ২০১৭

পাল্টাপাল্টি অবস্থানে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবীরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের দেয়া বক্তব্যের পক্ষে-বিপক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেছে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতি (সুপ্রীমকোর্ট বার)। এবিএম খায়রুল হকের বক্তব্যের সমালোচনা করে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন সুপ্রীমকোর্ট বারের বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা (আইনজীবী সমিতির কার্যকরি কমিটিতে সভাপতি ও সম্পাদকসহ বিএনপিপন্থীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ)। অন্যদিকে সমিতির রেজুলেশন ছাড়া এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজনের প্রতিবাদে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন বারের সহ-সভাপতিসহ আওয়ামী লীগ সমর্থক অংশ। এ সময় উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতি এলাকায়। বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের অশোভন ভাষা ব্যবহার করে মিছিল করতেও দেখা গেছে। এদিকে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর সুপ্রীম জুডিসিয়াল কাউন্সিল বিষয়ে আইন করার প্রয়োজন আছে কিনা জানতে চাইলে এ বিষয়ে এখনই কিছু বলতে রাজি নন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেন, আইন করা-না করার বিষয়টি সংসদের দায়িত্ব। এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের মামলার রায়ে আপীল বিভাগ যে রায় দিয়েছিল সেখানে সুপ্রীম জুডিসিয়াল কাউন্সিল ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল, কিন্তু রিভিউর রায়ে সব বাতিল করে দেয়া হয়েছে। সমস্ত আইন নতুন করে করতে বলা হয়েছিল। তিনি বলেন, সংসদ আইন প্রণয়ন করবে। এটা তাদের এখতিয়ার। সংবিধান সবার ওপরে। তিনি বলেন, আমি বার বার বলেছি, সংবিধানের আদি কোন অনুচ্ছেদের ভালমন্দের বিষয়ে বিচার বিভাগ কিছুই বলতে পারবে না। আদালত ক্ষমতাপ্রাপ্ত হবে তখনই যখন সংবিধান সংশোধন করা হবে। বারের পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন বৃহস্পতিবার সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনের প্রথমে সমিতির সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক মুন সিনেমা হলের অধিগ্রহণ সংক্রান্ত মামলার রায় দিতে গিয়ে উদ্দেশ্যমূলক পূর্বপরিকল্পিত অপ্রসাঙ্গিকভাবে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করেছেন। তিনি পঞ্চম ও ত্রয়োদশ সংশোধনীর রায়কেও বিতর্কিত করেছেন। এ কারণে বিচারপতি খায়রুল হক ষোড়শ সংশোধীর রায় বাতিলে পূর্বপরিকল্পনার গন্ধ পাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে খায়রুল হক যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে তিনি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন সবশেষে বলেন, আমি দলীয় বক্তব্য দিতে আসিনি, আইনজীবী সমিতির সবার পক্ষে বক্তব্য দিতে এসেছি। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে সামনের সারিতে বসা ছিলেন বারের সাবেক সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন, সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। এর আগে সংবাদ সম্মেলন শুরু করেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। জয়নুল আবেদীন বিচারপতি খায়রুল হকের বক্তব্যের সমালোচনা করে বক্তব্য দেয়ার সময় বারবার প্রতিক্রিয়া জানান উপস্থিত আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা। সমিতির সভাপতির বক্তব্য শেষ হলে আওয়ামীপন্থী আইনজীবী ও এই সমিতির সহসভাপতি ওয়াজি উল্লাহ বক্তব্য দিতে চাইলে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা সংবাদ সম্মেলনের ব্যানার খুলে নিয়ে যায়। এরপর দুপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে তুমুল উত্তেজনা শুরু হয়। এরপর বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা মিলনায়তন কক্ষ ত্যাগ করলে সমিতির সহসভাপতি ওয়াজি উল্লাহ সংক্ষিপ্ত আকারে সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, সমিতির সভাপতি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা একান্তই তার নিজের বক্তব্য। এই বক্তব্য আইনজীবী সমিতির বক্তব্য নয়। এ সময় সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক শ ম রেজাউল করিমসহ আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। সমিতির সহসভাপতি ওয়াজি উল্লাহ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেয়ার সময় বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা অশোভন স্লোগান দিয়ে মিছিল করতে থাকে।
×