ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দাম পড়তে পারে দুই শ’ কোটি ডলার

শেভরনের কাছ থেকে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র কিনছে সরকার

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১০ আগস্ট ২০১৭

শেভরনের কাছ থেকে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র কিনছে সরকার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মার্কিন কোম্পানি শেভরনের নিয়ন্ত্রণে থাকা তিনটি গ্যাস ক্ষেত্র কিনে নিচ্ছে সরকার। গ্যাসক্ষেত্র তিনটি হচ্ছে বিবিয়ানা, জালালাবাদ ও মৌলভীবাজার। যদিও শেভরন চীনের জিং হুয়া কোম্পানির অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হিমালয় এনার্জির কাছে গ্যাস ক্ষেত্রগুলোর শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে বলে গত ২৪ এপ্রিল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল। এরপর পেট্রোবাংলার কাছে গ্যাস ক্ষেত্রগুলোর শেয়ার হস্তান্তরের অনুমতি চাইলে তা দেয়া হয়নি। পেট্রোবাংলার একটি সূত্র জানিয়েছে শেভরনের গ্যাস ক্ষেত্রগুলো কেনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর মধ্যেই নির্দেশ দিয়েছেন। গ্যাস ক্ষেত্রগুলোর মূল্য হতে পারে দুই বিলিয়ন ডলার। একই দামে হিমালয় এনার্জির কাছে শেভরন শেয়ার হস্তান্তর করেছিল বলে জানা গেছে। বুধবার ঢাকায় পেট্রোবাংলা ভবনে জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে জ্বালানি সচিব নাজিম উদ্দিন চৌধুরী গ্যাস ক্ষেত্রগুলো কেনার বিষয়ে ইঙ্গিত দেন। সচিব ওই সেমিনারে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাহসী পদক্ষেপে খুবই কম দামে পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র ক্রয় করা সম্ভব হয়েছিল। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসিকতার কারণে দেশের তিনটি বড় গ্যাসক্ষেত্র কেনার বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে কোন তিনটি গ্যাস ক্ষেত্র সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি। সচিবের এই বক্তব্যর পর পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা শেভরনের গ্যাস ক্ষেত্রই কেনা হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেন। তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইতোমধ্যে সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনা পাওয়া গেছে। এখন গ্যাস ক্ষেত্রগুলোর শেয়ার হস্তান্তরের বিষয়ে তারা আলোচনা করবেন। তবে একটি কোম্পানির কাছে এর মধ্যেই শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে বলে শেভরন জানাচ্ছে। সেক্ষেত্রে হস্তান্তর প্রক্রিয়া কি হবে জানতে চাইলে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি। গত ২৪ এপ্রিল শেভরন গ্যাস ক্ষেত্রগুলোর শেয়ার বিক্রির খবর দেয়। সেদিনই পেট্রোবাংলার অনুমোদন না নিয়ে শেভরন এ ধরনের কাজ করতে পারে না বলে তাদের জানানো হয়। পেট্রোবাংলার এমন মনোভাবের পর সরকারের উচ্চ পর্যায়ে শেয়ার হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের জন্য শেভরন দৌড়ঝাঁপ করে। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে কোম্পানিটিকে পেট্রোবাংলার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। গত ১৯ জুলাই শেভরনের ভাইস প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসে পেট্রোবাংলার সঙ্গে বৈঠক করে। ওই বৈঠকেও পেট্রোবাংলার তরফ থেকে আনুষ্ঠানিক অনুমোদন না নিয়ে শেভরনের শেয়ার হস্তান্তর করা উচিত হয়নি বলে জানানো হয়। শেভরন বাংলাদেশ ছাড়ার ঘোষণা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের হাতে থাকা তিন গ্যাস ক্ষেত্রের শেয়ার কেনার আগ্রহ দেখায় সরকার। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নীতিগত অনুমোদনের পর তিনটি গ্যাস ক্ষেত্রের সম্পদ মূল্য যাচাই বাছাই করার জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান উড-ম্যাকেঞ্জিনকে নিয়োগ দেয়া হয়। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি এর মধ্যে তাদের প্রতিবেদন পেট্রোবাংলার কাছে হস্তান্তর করেছে। প্রতিবেদনটি এখন যাচাই বাছাই করা হচ্ছে বলে পেট্রোবাংলা জানায়। এই তিন গ্যাস ক্ষেত্র থেকে দেশের মোট উত্তোলিত গ্যাসের ৫৮ ভাগ আসে। এদিকে সেমিনারে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম বলেন, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। দেশের ভেতরে গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি আমদানি করেও চাহিদা পূরণের চেষ্টা হচ্ছে। এজন্য স্থলভাগে গ্যাস আহরণ ত্বরান্বিত করা হচ্ছে। একই সঙ্গে সাগরেও গ্যাস অনুসন্ধানের উদ্যোগ বাড়ানো হয়েছে। বিদেশ থেকে এলএনজির পাশাপাশি জ্বালানি তেল আমদানিও বাড়ানো হচ্ছে। ইস্টার্ন রিফাইনারিকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে পরিশোধিত তেল আমদানি কমিয়ে দেয়া সম্ভব হবে। তিনি বলেন, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উদ্ভাবনী ও সাহসী হতে হবে। সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। জ্বালানি সচিব বলেন, চট্টগ্রামে ৩৫০ শিল্প কারখানায় গ্যাস সংযোগ দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। আগামী বছরের শুরুতেই এসব কারখানায় গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে। এলএনজি আমদানির মাধ্যমে এই চাহিদা পূরণ করা হবে। সাভারের ট্যানারিগুলোতেও গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে গ্যাসের জন্য উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আগামী এক বছর পর এই বাধা থাকবে না। বিপিসি এক সময় লোকসানী প্রতিষ্ঠান ছিল। সেই সময় বিপিসি বেশি দামে কিনে কম দামে জ¦ালানি তেল সরবরাহ করত। আর সেটা না করলে দেশের অনেক সরকারী প্রতিষ্ঠান লোকসান দিত। বাপেক্সকে শক্তিশালী করতে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সাগরে জরিপের জন্য ভেসেল কেনা হচ্ছে। সচিব তার বক্তৃতায় তেল ও এলএনজির জন্য পাইপ লাইন নির্মাণ প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন। সেমিনারে এলএনজি নিয়ে আরপিজিসিএলের ব্যবস্থাপক আনোয়ারুল আজিম একটি উপস্থাপনায় বলেন, এলএনজি আমদানি করতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি করা হচ্ছে। কাতারের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি হচ্ছে। মন্ত্রিসভা কমিটিতে এই চুক্তি করার জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এছাড়া ওমান, ইন্দোনেশিয়া ও সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে পৃথক চুক্তি করা হচ্ছে। জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. মনিরুজ্জামান অন্য একটি প্রবন্ধে বলেন, দেশে তিনটি পাইপলাইন হচ্ছে। চট্টগ্রাম থেকে পাইপলাইনে দেশের বিভিন্ন স্থানে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হবে। এতে খরচ কমবে। সেমিনারে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমতুল মুনিম, পেট্র্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মোঃ ফয়জুল্লাহ বক্তব্য রাখেন। প্রসঙ্গত সপরিবারে নিহত হওয়ার মাত্র ৬ দিন আগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট বহুজাতিক কোম্পানি শেল অয়েল-এর কাছ থেকে পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র কিনে দেশী কোম্পানির কাছে হস্তান্তরের ব্যবস্থা করেন। যা দেশের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হয়। বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রতি বছর ৯ আগস্টকে জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস পালন করা হয়।
×