ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতারণার অভিযোগ সত্ত্বেও মোবাইল অপারেটররা অফার দিয়েই যাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ৬ আগস্ট ২০১৭

প্রতারণার অভিযোগ সত্ত্বেও মোবাইল অপারেটররা অফার দিয়েই যাচ্ছে

ফিরোজ মান্না ॥ মোবাইল অপারেটরদের বিভিন্ন অফার ও ইন্টারনেট প্যাকেজ মনিটর করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে বিটিআরসি। অপারেটররা অফার ও ইন্টারনেট প্যাকেজের নামে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়ে গ্রাহকদের কয়েক হাজার অভিযোগ বিটিআরসিতে জমা পড়ায় কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। গত মার্চে বিটিআরসির বোর্ড মিটিংয়ে মনিটরিং সেল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত গত চার মাসেও বাস্তবায়ন করতে পারেনি বিটিআরসি। মনিটরিং সেল যে কোন অপারেটরের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তদন্ত করবে। তদন্তে প্রতারণার অভিযোগ প্রমাণিত হলে, আইন অনুযায়ী গ্রাহককে বড় অঙ্কের টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে সংশ্লিষ্ট অপারেটরকে। মোবাইল অপারেটরগুলোকে এ বিষয়ে বিটিআরসি কয়েক দফা চিঠি দিয়ে সতর্ক করলেও অপারেটররা তার কোন গুরুত্ব দেয়নি। এবার বিটিআরসি নিজ উদ্যোগে ব্যবস্থা নেবে। সম্প্রতি বিটিআরসির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, এটা এক ধরনের অরাজকতা। গ্রাহকদের স্বার্থ বিবেচনা করে মনিটরিং সেল স্থাপন করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কোন অপারেটরকে ছাড় দেয়া হবে না। গ্রাহক স্বার্থের কথা মাথায় রেখে বিটিআরসি (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) বোর্ড সভায় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিটিআরসির অনুমোদন ছাড়াই বিভিন্ন প্যাকেজ ও অফার দিচ্ছে মোবাইল অপারেটররা। দিনের কোন অংশে কত পয়সা মিনিট বা সেকেন্ড, আবার কোন নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা রিচার্জ করলে ‘এত মিনিটি ও এত এসএমএস ফ্রি’। এসব অফার পাঠিয়ে গ্রাহকদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলছে। গ্রাহকরা এসব অফার গ্রহণ করে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। একইভাবে ইন্টারনেটের ক্ষেত্রেও অফার দিয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। মোবাইল গ্রাহকরা এসব এসএমএস’র কারণে এখন অতিষ্ঠ। এরপরও অপারেটররা কাজটি করেই যাচ্ছে। বিটিআরসি অপারেটরদের চিঠি দিয়ে সতর্ক করলেও অফার দিয়েই যাচ্ছে। বিটিআরসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সাধারণ গ্রাহক কোন না কোনভাবে প্রতারিত বা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে (ন্যূনতম সম্ভাবনা) বা আশঙ্কা রয়েছে এমন কোন প্যাকেজ বা অফার অনুমোদন দেয়া হবে না। গ্রাহকদের ফিটব্যাক ব্যবস্থা রাখতে হবে। কোন প্যাকেজ বা অফারের মেয়াদ সর্বনিম্ন ৭ দিন হতে হবে। তবে ঈদ, পূজা, বড়দিন ও নববর্ষ এসব ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা আলাদাভাবে স্বল্প সময়ের জন্য (ন্যূনতম তিন দিন) অনুমোদন দেয়া হবে। যদি কোন অপারেটর বিশেষ দিনগুলোতে নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে কম অফার দেয় তাহলে ওই অপারেটরের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোন অফার বা প্যাকেজ গ্রাহকের অনুমোদন ছাড়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হবে না। কোন অফার শেষ হওয়ার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মাসিক অফার হতে হবে ন্যূনতম ৩০ দিন। মাসিক অফার ৩০ দিনের এক ঘণ্টা কম হলেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। যে সব গ্রাহক বিটিআরসিতে অভিযোগ দিয়েছেন, তারা সমাজের সচেতন ও শিক্ষিত মানুষ। তাদের বিটিআরসি পর্যন্ত আসার মতো সুযোগ রয়েছে। যারা খুব সাধারণ গ্রাহক তারা নানাভাবে প্রতারণার শিকার হলেও বিটিআরসি পর্যন্ত আসতে পারছেন না। দেশে বর্তমানে ১২ কোটির ওপরে মোবাইল গ্রাহক। প্রতিদিন যদি মোবাইল অপারেটররা এক টাকা করেও হাতিয়ে নেয়, তাহলে প্রতিদিন ১২ কোটি টাকা গ্রাহকদের কাছ থেকে চলে যাচ্ছে। মাসে ৩৬ কোটি টাকা। আর বছরে ৪শ’ ৩২ কোটি টাকা গ্রাহকদের পকেট থেকে নিয়ে যাচ্ছে। প্রকৃত পক্ষে এ হিসাব আরও অনেক বড়। বিটিআরসির একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রতিদিন একজন গ্রাহকের কাছ থেকে কম করে হলে ৫ থেকে ৬ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বিভিন্ন অফার ও প্যাকেজের নামে। তাহলে কয় হাজার কোটি টাকা মোবাইল অপারেটরা বিনা সেবায় নিয়ে যাচ্ছে। এগুলো বন্ধ করতে বিটিআরসি যতবার উদ্যোগ নিয়েছে ততবারই কোন না কোনভাবে এ উদ্যোগ ভেস্তে গেছে। অপারেটরদের শক্তি কোথায় এটা নির্ণয় করা কঠিন। প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকা অবৈধ উপায়ে তারা বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। মোবাইল অপারেটরদের বিভিন্ন প্যাকেজ ও অফার নিয়ে এবারের বোর্ড সভায় যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তা বাস্তবায়ন হবে কিনা তা নিয়েও তিনি সংশয় প্রকাশ করেছেন। অবশ্য এর আগে বিটিআরসির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, মোবাইল অপারেটররা অফার ও প্যাকেজের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়ে গ্রাহকের কয়েক হাজার অভিযোগ বিটিআরসিতে জমা পড়েছে। অভিযোগগুলোর বেশিরভাগই সত্য বলে মনে হচ্ছে। এ্যাডভোকেট এসএইচএম হাবিবুর রহমান আজাদ জজকোর্টে দায়েরকৃত ফৌজদারি অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিটিআরসির বোর্ড গ্রাহক স্বার্থ রক্ষার্থে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। অপারেটরদের প্রতারণা বন্ধের জন্য বিটিআরসিতে মনিটরিং সেল স্থাপন করা হবে। যাতে কোন গ্রাহক প্রতারণার শিকার হলে এখান থেকে যেন প্রতিকার পান। মোবাইল অপারেটরদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার অভিযোগ নিষ্পত্তি করার জন্য ইতোমধ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে। গ্রাহকদের অভিযোগ কোটি কোটি টাকা অপারেটরগুলো ভুয়া অফার ও প্যাকেজের মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে। নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা হিসাবে যদি কোন অনিয়ম হয় তা দেখা দায়িত্ব। গ্রাহক স্বার্থ রক্ষা করতে অপারেটরদের অফার ও প্যাকেজের পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দেয়া হবে। হাজার হাজার অফার ও প্যাকেজ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হবে। বিটিআরসি সূত্র জানিয়েছে, বোর্ড সভায় মোবাইল অপারেটরদের ভয়েস ডাটা ও অন্যান্য টেলিযোগাযোগ সেবার বিষয়ে সাধারণ গ্রাহকদের মতামত, প্রতিক্রিয়া এবং বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণের সুবিধার্থে ‘গণশুনানি’ আয়োজন করারও কথা ছিল। এই গণশুনানিতে প্রত্যেক অপারেটর উপযুক্ত প্রতিনিধি ভোক্তা সমিতি, মিডিয়া, সুধীজন ও গ্রাহকদের প্রতিনিধিত্বমূলক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বিটিআরসি সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
×