ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নকল লেবেল লাগিয়ে বাড়ানো হচ্ছে ওষুধের মেয়াদ

প্রকাশিত: ০৭:০৭, ৫ আগস্ট ২০১৭

নকল লেবেল লাগিয়ে বাড়ানো হচ্ছে ওষুধের মেয়াদ

নিখিল মানখিন ॥ অনেক ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে । মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের প্যাকেটের গায়ে নিজেদের তৈরি নকল লেবেল লাগিয়ে ওষুধের মেয়াদ বাড়িয়ে দেয় অনেক অসাধু পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা। ওষুধের প্যাকেটের গায়ে লাগানো নকল লেবেল আসল ভেবে ওষুধ হাতে নিয়ে চলে যান ক্রেতা। স্বাস্থ্য অধিদফতর ও ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের সতর্ক বার্তাতেও অসাধু ব্যবসায়ীদের এমন অবৈধ বাণিজ্য বন্ধ হচ্ছে না। কিন্তু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার শিকার হচ্ছে অনেক রোগী। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ পানে অনেক রোগী অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। গত বছর রাজধানীতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখার দায়ে অর্ধ শতাধিক ফার্মেসি বন্ধ করে দেয়া হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। আর অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নেয়া হয়েছে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। রাজধানীসহ সারাদেশে গজিয়ে উঠেছে লাখ লাখ ওষুধের দোকান (ফার্মেসি)। ওসব দোকানে ওষুধ বিক্রির কাজে জড়িতদের শতকরা ৯০ ভাগেরই ওষুধ সম্পর্কে ভাল ধারণা নেই বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে পারে না রোগী। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন চাওয়ার প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করেন না বিক্রেতা। দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ওষুধের নাম উল্লেখ করলেই তা ক্রেতার হাতে তুলে দেয়া হয়। আবার অনেক দিনের পুরনো প্রেসক্রিপশন নিয়ে অনেক রোগী ফার্মেসিতে যান। প্রেসক্রিপশনের তারিখ ও ওষুধ খাওয়ার সময়সীমা দেখার প্রয়োজনবোধও করেন না বিক্রেতা। আর্থিক বাণিজ্যই তাদের কাছে মুখ্য হয়ে ওঠে। রাজধানীর ওষুধের দোকানগুলো সরেজমিন ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের সাবেক সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের বর্তমান অধ্যাপক আ ব ম ফারুক জনকণ্ঠকে জানান, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম হুমকি। শুধু তাই নয়, তালিকাভুক্ত চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ বিক্রি করা একেবারেই উচিত নয়। ওষুধ বিক্রেতা ও ক্রেতার বুঝতে হবে যে, ওষুধ কোন খাদ্যদ্রব্য নয়, এটি মূলত এক ধরনের বিষাক্ত দ্রব্য। নিয়মমাফিক ব্যবহার না করলে যা জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। এতে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার শিকার হচ্ছে অনেক রোগী। ডাক্তারী পরামর্শ ছাড়া এক রোগের ওষুধে খেতে গিয়ে যেমন অন্য আরেকটি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে, তেমনি মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ খেয়ে একই পরিস্থিতির শিকার। প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ বিক্রি বন্ধে সরকারী যথাযথ কোন উদ্যোগ নেই। ওষুধ বিক্রেতার কাছে রোগমুক্তি নয়, যে কোন উপায়ে ওষুধ বিক্রি করাটাই মুখ্য হয়ে উঠেছে। ওষুধের দোকান ও হাসপাতালে ফার্মাসিস্টের সংখ্যা কম থাকায় এমন ঘটনার মাত্রা বেড়েই চলেছে। তিনি বলেন, সব ধরনের ওষুধ ওটিসি ড্রাগের ( যেসব ওষুধ প্রেসক্রিপশন ছাড়া কেনা ও ব্যবহার করা যায়) পর্যায়ে পড়ে না। জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল, আমাশয়ের জন্য মেট্রোনিভাজল ও সর্দির জন্য সাধারণ এ্যান্টি হিস্টামিনসহ ১৫ থেকে ২০টি ওষুধ ওটিসি ড্রাগের পর্যায়ে পড়ে থাকে। মেয়াদোত্তীর্ণ পুরনো প্রেসক্রিপশন দিয়ে ওষুধ বিক্রি করাও উচিত নয় বলে মনে করেন অধ্যাপক আ ব ম ফারুক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের ডিন অধ্যাপক ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ জনকণ্ঠকে জানান, কোন অবস্থাতেই মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ দোকানে রাখা উচিত নয়। আর চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ বিক্রি ও কেনা উচিত নয়। এমন অনেক ওষুধ রয়েছে যার মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। নিয়মমাফিক ওষুধ না খেলে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। নিয়মবহির্ভূত ওষুধ গ্রহণকারী সাময়িক শারীরিক অসুুস্থতা থেকে শুরু করে কিডনি, হার্ট ও ব্রেন সমস্যায় ভুগতে পারেন।
×