ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

আইসিসের দখলী রাজ্যে ভয়াবহ ও লোমহর্ষক সব কাহিনী

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ৪ আগস্ট ২০১৭

আইসিসের দখলী রাজ্যে ভয়াবহ ও লোমহর্ষক সব কাহিনী

দীর্ঘ তিন বছর আইসিসের দখলে থাকার পর অবশেষে ইরাকী বাহিনীর হাতে মুক্ত হয়েছে মসুল নগরী। জীবন আবার স্বাভাবিক গতিতে ফিরে আসতে শুরু করেছে। কিন্তু সেই সঙ্গে বেরিয়ে আসছে আইসিসের দখলদারির সময়কার তাদের নারকীয়তার ভয়াবহ ও লোমহর্ষক সব কাহিনী। বিশেষ করে ইয়াজিদী সম্প্রদায়ের নারীরা যেভাবে ধর্ষিত হয়েছে তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়। কোরআন শরীফ ও সুন্নার অপব্যাখ্যা করে তারা সেখানে চালু করেছিল দাস ব্যবসা ও সেক্স বাণিজ্য। মসুল পুনর্দখলের লড়াই শুরুর পর থেকে আইসিসের হাতে ২০১৪ সালে বন্দী হওয়া প্রায় ১৮০ ইয়াজিদী মহিলা, বালিকা ও শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে। মহিলাদের অনেকেই ভাঙ্গা হাত-পা, সংক্রমণ ও আত্মহত্যার চিন্তা নিয়ে ঘরে ফিরেছে। অনেকের মানসিক আঘাত এত ভয়াবহ যে, তা বর্ণনার অতীত। ডাঃ নাগাম নাওজাত হাসান নামে এক স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সহস্রাধিক ধর্ষিত ইয়াজিদী নারীর চিকিৎসা করেছেন। তাঁর ভাষায়, এদের অনেকে গুরুতর শক-এ চলে গেছে। তারা দিনের পর দিন টানা ঘুমিয়েই চলেছে। সহজে জাগছে না। উদ্ধার পাওয়া ৯০ শতাংশ মহিলার অবস্থা অন্তত একটা সময়ের জন্য এমন। ২০১৪ সালে মসুল দখল করার দু’মাস পর আইসিসের নজর পড়ে সিনজারের ওপর। উত্তরের ৬০ মাইল দীর্ঘ এই এলাকাটি পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। এখানেই ইয়াজিদী সম্প্রদায়ের বাস। এরা এক ক্ষুদে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী যাদের সংখ্যা ইরাকের ৩ কোটি ৮০ লাখ লোকের মধ্যে ২ শতাংশেরও কম। ইয়াজিদীদের ধর্ম বলে যে, ঈশ্বর এক, তবে তিনি সাতটি দেবদূত সৃষ্টি করেছেন। এ থেকেই আইসিস ইয়াজিদীদের বহু ঈশ্বরবাদী শ্রেণীতে ফেলে এবং ধর্মের দোহাই পেরে দাবি করে যে, এদের দাস বানানো সমর্থনযোগ্য। এই যুক্তিতেই ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট আইসিস যোদ্ধাদের একটি কনভয় ইয়াজিদী এলাকায় হানা দেয়। উপত্যকার বুকে প্রথম যে শহরটি ছিল সেটি তিল কাসাব। ওখান থেকে মোট ৬৪৭০ জন ইয়াজিদীকে অপহরণ করা হয়। তিন বছর পর ৩৪১০ জন বন্দী অবস্থায় ছিল। বাকিদের কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। মেয়েদের যৌন দাসত্বে রাখা হয়। আইসিস যোদ্ধারা তাদের ইচ্ছামতো ব্যবহার করে, ধর্ষণ করে। মসুল পুনর্দখলের পর উদ্ধারপ্রাপ্ত ধর্ষিত নারী ও বালিকাদের কাছ থেকে তাদের বন্দী জীবনের বিচিত্র সব কাহিনী পাওয়া গেছে। সৌহাইলা নামে এক বালিকা যখন ধর্ষিত হয় তখন তার বয়স ছিল ১২ বছর। আইসিসের এক জঙ্গী ধর্ষণের আগে তাঁকে বোঝায় সে কি করতে যাচ্ছে। বলে, এটা কোন পাপ নয়। কারণ, ধর্মেই তাকে এই অধিকার দেয়া আছে। এরপর সে তার হাত বাঁধে। বিছানার পাশে হাঁটু গেড়ে নামাজ পড়ে নেয়। তারপর ধর্ষণে লিপ্ত হয়। কাজ শেষে আবার নামাজ আদায় করে। অর্থাৎ ব্যাপারটার মধ্যে এক ধরনের ধর্মীয় নিষ্ঠা সঞ্চার করে। সৌহাইলাকে সে বলে যে, সে যা করেছে সেটাও একটা ইবাদত। এর মধ্য দিয়ে সে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করছে। মসুল দখল এবং ইয়াজিদী সম্প্রদায়ের মহিলা ও বালিকাদের বন্দী করার পর আইসিস দাস প্রথার পুনরুজ্জীবন ঘটায়। এ ব্যাপারে তাদের কোন রাখঢাক ছিল না। কারণ, তাদের মৌলিক বিধিবিধানেই এই ব্যবস্থা রাখা ছিল। ধর্মতাত্ত্বিক আলোচনা ও নীতি নির্ধারণী দলিলে দাসপ্রথার দিকনির্দেশনা দিয়েছিল আইএসের গবেষণা ও ফতোয়া বিভাগ। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআন ও হাদিসকে টেনে এনে এর অপব্যাখ্যা করা হয়। দাসপ্রথা এবং বিশেষ করে যৌন দাসত্বের জন্য অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়। সৃষ্টি করা হয় পণ্যাগারের মতো নেটওয়ার্ক যেখানে বন্দীদের রাখা হতো। থাকত আলাদা কক্ষ সেখানে খদ্দেররা এসে পণ্যের মতো মেয়েদের দেখে শুনে নিত। এরপর তাদের বাজারজাত করা হতো। পরিবহন করার জন্য সেখানে রাখা থাকত বাসের বহর। আইসিসের সুপরিকল্পিত যৌন দাসত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবর্তিত হয় ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট। সেদিন তারা সিনজার এলাকায় ইয়াজিদী পল্লীতে হানা দিয়ে ৬ হাজার ৪৭০ জনকে বন্দী করে। প্রথম এক ঘণ্টার মধ্যেই নারী ও পুরুষদের আলাদা করা হয়। বয়সন্ধিতে পৌঁছান বালকদের শার্ট ওপরে তুলতে বলা হয়। বগলে কেশ দেখতে পেলেই তাদের বাবা ও বড় ভাইদের দলে ঠেলে দেয়া হয়। গ্রামের পর গ্রামে এভাবে নারী পুরুষদের ধরে ধরে বাছাই করা হয়। তারপর পুরুষদের লাইন ধরে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া নিকটবর্তী কোন মাঠে। সেখানে তাদের বসে পড়তে বাধ্য করা হয়। অতঃপর চালিয়ে দেয়া হয় মেশিনগানের গুলি। অন্যদিকে মহিলা, বালিকা ও শিশুদের তুলে নেয়া হয় খোলা ট্রাকে। পালাতে গিয়ে পরে ধরা পড়েছে এমন ঘটনাও আছে। যেমন ৯ সদস্যের একটি পরিবার পুরনো গাড়িতে গাদাগাদি করে বসে পালাচ্ছিল। সহসা অস্ত্রধারী আইসিস যোদ্ধারা তাদের ঘিরে ফেলে। এ ক্ষেত্রেও প্রথমে মহিলাদের পুরুষদের থেকে আলাদা করে ট্রাকে তুলে নিকটতম শহরে নেয়া হয়। সেখানে অবিবাহিত তরুণী ও বালিকাদের বাকিদের থেকে আলাদা করে তুলে নেয়া হয় বাসে। সাদা রঙের বাসগুলোর গায়ে আরবী ভাষায় ‘হজ’ শব্দটি লেখা ছিল। অর্থাৎ আইসিসের দখলে যাবার আগে ইরাক সরকার এই বাসগুলো হজযাত্রী বহনের কাজে ব্যবহার করত। অন্যান্য জায়গা থেকে বন্দী করে আনা আরও অনেক মেয়েকেও এসব বাসে তোলা হয়। বাসগুলোতে এসব মেয়েকে প্রায় ৬ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে মসুল শহরে নেয়া হয়। সেখানে তাদের দলবেঁধে গ্যালাক্সি ওয়েডিং হলে নিয়ে যাওয়া হয়। অন্যান্য মহিলাকে নেয়া হয় মসুলে অবস্থিত সাদ্দাম যুগের প্রাসাদ বাদুশ কারাগার প্রাঙ্গণে। মসুল ছাড়াও তাদের গাদাগাদি করে রাখা হয় ইরাকের তাল আফার, সোলাহ, বাজ ও সিনজার শহরের প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পৌর ভবনগুলোতে। সেখানেই তারা আটক থাকে। কেউ কেউ কয়েকদিন, কেউ কেউ কয়েক মাস। তারপর অনিবার্যভাবেই তাদের একই বাসের বহরে আবার তুলে নেয়া হয় এবং ছোট ছোট গ্রুপে করে সিরিয়ায় কিংবা ইরাকের ভেতরকার অন্যান্য জায়গায় পাঠানো হয়। সেখানে তাদের নিয়ে চলে বিকিকিনির পালা। গোটা ব্যাপারটা শতভাগ পূর্বপরিকল্পিত এক দেহ ব্যবসার বাণিজ্য। প্রতিটি স্থানে আইসিস যোদ্ধারা প্রথমে নারী বন্দীদের গণনা করে। এই বাণিজ্যের পণ্য হয়েছে এমন এক মেয়ের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বিবরণ হলোÑ ‘গ্যালাক্সি ব্যাঙ্কোসেট হলের বলরুমে প্রায় ১৩০০ ইয়াজিদী মেয়ে বসা ছিল। কেউ মেঝেতে গুটিসুঁটি মেরে, কেউ দেয়ালে হেলান দিয়ে। একসময় রেজিস্ট্রার হাতে তিন আইসিস যোদ্ধা এসে ঢুকে। মেয়েদের উঠে দাঁড়াতে বলে। প্রত্যেককে তার নামে প্রথম, মাঝের ও শেষের অংশ, বয়স, বাড়ির ঠিকানা, বিবাহিত কিনা এবং হয়ে থাকলে সন্তান আছে কিনা বলতে বলা হয়। গ্যালাক্সি হলে এদের দুমাস রাখা হয়েছিল। তারপর একদিন ওরা এল এবং তরুণীদের সরিয়ে নিতে লাগল। যারা যেতে চাইল না তাদের চুল ধরে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে যাওয়া হলো। পার্কিং লটে সেই একই হজযাত্রীবাহী বাসের বহর তাদের পরবর্তী গন্তব্যে নিয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল। পার্কিং লটে সৌহাইলা প্রথমবারের মতো ‘সাবায়া’ শব্দটি শুনেছিল। জঙ্গীরা হাসছিল এবং মেয়েদের উপহাস করে বলছিল ‘তোমরা আমাদের সাবায়া।’ ইয়াজিদী মেয়েরা এই শব্দটির সঙ্গে পরিচিত ছিল না। স্থানীয় এক আইসিস নেতা তাদের বুঝিয়ে বলে এর অর্থ দাসী। সে বলে, ‘ইয়াজিদীরা সে ৭ দেবদূতের কাছে প্রার্থনা করে তার একজন তাউস মালিক। এই তাউস মালিক হচ্ছে শয়তান। আর যেহেতু তোমরা শয়তানের পূজা কর তাই তোমরা এখন আমাদের সম্পত্তি। আমরা তোমাদের বিক্রি করতে পারি, সেভাবে ইচ্ছা ব্যবহার করতে পারি।’ তবে আইসিসের সেক্স বাণিজ্যের একমাত্র টার্গেট হলো ইয়াজিদী সম্প্রদায়ের মেয়েরা। অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মেয়েদের দাসত্ববন্ধনে আবদ্ধ করতে এখনও ব্যাপক প্রচারাভিযান শুরু হয়নি বলে হিউম্যান বাইটস ওয়াচের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে। কারণ, আইসিস ইয়াজিদীদের বহু ঈশ্বরে বিশ্বাসী হিসেবে দেখে এবং সেই হিসেবে খ্রীস্টান ও ইহুদীদের তুলনায় তারা এদের চোখে অধিক ঘৃণিত। দাসের বাজার সিনজারে হামলার কয়েক মাস পর আইএস তাদের অনলাইন ম্যাগাজিনে পরিষ্কার করে জানায় যে, ইয়াজিদী মেয়েদের দাস বাড়ানোর অভিযানটি তাদের বিশদভাবে পূর্বপরিকল্পিত। দাবিক ম্যাগাজিনের অক্টোবর সংখ্যায় ‘দি রিভাইভাল অব সেøভারি বিফোর দি আওয়ার’ শিরোনামে ইংরেজী ভাষায় প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়, ওই হামলার আগে আইএসের শরিয়া ছাত্রদের ইয়াজিদীদের নিয়ে গবেষণা করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। এতে আরও বলা হয় যে, খ্রীস্টান ও ইহুদীদের ক্ষেত্রে সুযোগ থাকলেও ইয়াজিদীদের জিজিয়া কর দিয়ে মুক্তি পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। নিবন্ধে বলা হয়েছে, সিনজার অভিযানে দাস হিসেবে বন্দী করা ইয়াজিদী নারী ও শিশুদের এক-পঞ্চমাংশকে লুটের মাল হিসেবে ভাগবাটোয়ারা করার জন্য আইএস কর্তৃপক্ষের কাছে স্থানান্তরের পর বাকিদের ওই অভিযানে অংশ নেয়া আইএস যোদ্ধাদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দাস ব্যবসার সমর্থনে ব্যবসায়ীরা বাইবেলের কিছু কিছু অংশ ব্যবহার করত। আজ তাদের মতো আইসিসও কোরান শরীফের কিছু কিছু আয়াত এবং সুন্নায় বর্ণিত উক্তি বা কাহিনীর অপব্যাখ্যা করে তাদের দাস ব্যবসার যৌক্তিকতা ও সমর্থনযোগ্যতা প্রমাণ করতে চাইছে। কিন্তু ইসলামী ধর্মতত্ত্বের ওপর প-িত ব্যক্তিরা এ ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করেন। তারা বলেন যে, এসব আয়াত ও উক্তির সঠিক ব্যাখ্যা আইএস দিচ্ছে না। তাদের মতে, ইসলাম সত্যিকার অর্থে দাসপ্রথা সমর্থন করে না। যা হোক, দাস হিসেবে বন্দী হবার প্রথম কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরী ও কমবয়সী নারী এবং বালিকারা বিক্রি হয়ে যেত। অন্যদের বিশেষ করে একটু বেশি বয়সী ও বিবাহিত মহিলাদের বিক্রি হতে সময় লাগত। যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের ক্রেতা জুটছে ততক্ষণ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে তাদের অহরহ নিয়ে যাওয়া হতো এবং তার জন্য মাসের পর মাস কেটে যেত। অনেক মহিলাকে পাইকাররা কিনে নিত। তারপর তারা ওদের ছবি তুলে ও তাতে নম্বর দিয়ে বিজ্ঞাপন দিত যাতে উপযুক্ত ক্রেতা পাওয়া যায়। নম্বর দেয়া ছবিগুলো এভাবে থাকত সাবায়া নম্বর ১, সাবায়া নম্বর ২ ইত্যাদি। যেসব ভবনে মেয়েদের এনে রাখা হতো সেগুলোকে ওরা বলত দাস বাজার। ভবনে আলাদা একটা কক্ষ থাকত যেখানে মেয়েদের এনে খদ্দেরদের দেখানো হতো। খদ্দেররা এলে মেয়েদের এক এক করে ওই রুমে নেয়া হতো। আমিররা দেয়ালে হেলান দিয়ে বসত আর মেয়েদের নাম ধরে ডাকত। মেয়েরা এক এক করে এসে চেয়ারে বসত। ওদের স্কার্ফ বা এই জাতীয় যা কিছু আছে খুলে নেয়া হতো। খদ্দেররা ওদের চারদিক দিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখতÑ গরু ছাগল কেনার আগে যেভাবে দেখা হয়। মেয়েদের উঠতে বসতে বলা হতো। ঘুরতে বলা হতো। একবার নয়, একাধিকবার। মেয়েদের এমন সব প্রশ্ন করা হতো সেটা একান্তভাবে মেয়েলি। যেমন তার শেষ কোন তারিখে মাসিক হয়েছে। সে প্রশ্নের উত্তর দিতেও বাধ্য করা হতো। যোদ্ধারা আসলে নিশ্চিত হতে চাইতও যে, মেয়েটি গর্ভবতী কিনা। কেননা দাসী গর্ভবতী থাকলে তার সঙ্গে সহবাস চলতে পারে না এমন বিধান আছে। আইসিসের সম্পত্তি আইসিসের যৌন দাসত্বের ব্যবহার গোড়াতে সংগঠনের অতি কট্টর সমর্থকদেরও বিস্মিত করেছিল। সুপরিকল্পিত ধর্ষণের খবর প্রথম প্রকাশিত হওয়ার পর তাদের অনেকে এটাকে অপপ্রচার ভেবে সাংবাদিকদের সঙ্গে অনলাইনে বাদানুবাদে লিপ্ত হয়। ওদিকে আইসিস নেতৃত্ব সমর্থকদের কাছে এই রেওয়াজের যৌক্তিকতা প্রমাণের জন্য বারবার চেষ্টা করতে থাকে। প্রথমে ২০১৪ এর অক্টোবরে দাবিক-এ এই সংক্রান্ত নিবন্ধ বের হওয়ার পর, পরের বছর মে মাসে আবার ইস্যুটি তুলে ধরা হয়। এক সম্পাদকীয়তে এই মর্মে দুঃখ ও হতাশা প্রকাশ করা হয় যে, সংগঠনের নিজস্ব সমর্থকরাও দাসপ্রথা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সে বছরের ডিসেম্বরে অনলাইনে এক প্রচারপত্র ছাপা হয়। তাতে আইসিসের গবেষণা ও ফতোয়া বিভাগ দাসপ্রথার বিশদ ব্যাখ্যা দেয়। বলা হয়, যে যোদ্ধা দাসীদের কিনেছেন দাসীরা সেই যোদ্ধার সম্পত্তির অন্তর্গত। কাজেই তার সেই সম্পত্তি তিনি আরেকজনকে দিতে পারেন, বিক্রিও করতে পারেন। তবে দাসী হিসেবে মেয়েদের নাম পরিচয় একটা চুক্তিপত্রে নিবন্ধিত থাকে। কোন মালিক তাদের আরেকজনের কাছে বিক্রিকরণে সম্পত্তির দলিল যেভাবে হস্তান্তরিত হয় সেভাবে এক নতুন চুক্তিপত্রের অধীনে করা হবে। একই সঙ্গে দাসীদের মুক্তি দেয়ারও বিধান আছে। বলা হয়, কেউ সেটা করলে তার জন্য রয়েছে বেহেস্তের পুরস্কার। এ ধরনের মুক্তি বিরল হলেও ঘটেছে। এতে দাসত্বের শিকার নারীরা পালাবার পথ পেয়েছে। এক লিবীয় যোদ্ধা সুইসাইড বোম্বার হিসেবে ট্রেনিং শেষ করে মিশনে যাওয়ার আগে তার ২৫ বছরের এক দাসীকে মুক্তি দিয়ে গেছে। এর জন্য সে লেমিনেট করা একটা দলিল তুলে দিয়েছে মেয়েটির হাতে। ওটা ছিল মুক্তির সনদপত্র যা আইএসের এক বিচারকের স্বাক্ষরিত। ইয়াজিদী মহিলাটি সেটি চেকপয়েন্টে দেখিয়ে সিরিয়া থেকে ইরাকে চলে আসে। ২০১৫ সালের গ্রীষ্মে আইসিসের ৩৪ পৃষ্ঠার এক ম্যানুয়েলে সুস্পষ্টভাবে বলা হয় যে, যুদ্ধে বন্দী হওয়া খ্রীস্টান ও ইহুদী নারীদের সঙ্গে সেক্স করা অনুমোদনযোগ্য। শুধু একটাই নিষেধ আছে তা হলো গর্ভবতী দাসীর সঙ্গে সেক্স করা যাবে না। নতুন কোন দাসীর মাসিক না হওয়া পর্যন্ত মালিককে অপেক্ষা করতে হবে যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, তার গর্ভে কিছু নেই। এর বাইরে সেক্সের ব্যাপারে অনুমোদন যোগ্যতার কোন সীমা নেই। শিশু ধর্ষণ সমর্থন করা হয়েছে। বলা হয়েছে, যে মেয়েটি বয়সন্ধিতে পৌঁছেনি সে যদি সহবাস করার উপযোগী হয় তাহলে তার সঙ্গে সহবাসে বাধা নেই। সিরিয়ার শাদাদি শহরে জনৈক সৌদি যোদ্ধার কিনে নেয়া ও তার হাতে বার বার ধর্ষিত হওয়া ৩৪ বছরের এক ইয়াজিদী নারী জানায়, সেই বাড়িতে দ্বিতীয় দাসীটির চেয়ে তার অবস্থা ভাল ছিল। দ্বিতীয় দাসীটি ছিল ১২ বছরের এক বালিকা। দিনের পর দিন সে ধর্ষিতা হয়েছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ সত্ত্বেও রেহাই পায়নি। মহিলাটি সৌদি যোদ্ধাকে বোঝাতে চেয়েছিল ও বাচ্চা মেয়ে ওর যত করা উচিত। জবাবে সেই সৌদি বলেছে, ‘না ও বাচ্চা নয়। ও হলো দাসী। ওর সঙ্গে সেক্স করলে আল্লাহ খুশি হন।’ সূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস
×