ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রাবণে দারুণ খেয়ালি প্রকৃতি

মেঘের কোলে রোদ এই হাসি এই কান্না...

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৩ আগস্ট ২০১৭

মেঘের কোলে রোদ এই হাসি এই কান্না...

মোরসালিন মিজান ॥ যেতে দাও যেতে দাও গেল যারা।/তুমি যেয়ো না, তুমি যেয়ো না,/আমার বাদলের গান হয়নি সারা...। বাদলের গান সেই যে শুরু হয়েছিল, এখনও চলছে। আষাঢ়ের আগে থেকে কাঁদছে আকাশ। শ্রাবণের শেষভাগে এসে হাসিকান্না দুটোই যেন মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে! যখন তখন নামছে বৃষ্টি। যে সে বৃষ্টি নয়, অঝরধারা। বিদ্যুত চমকাচ্ছে। মেঘের গর্জন শুনে মনে হচ্ছে ভেঙে পড়বে আকাশ। অথচ কিছুক্ষণের মধ্যেই উল্টো চিত্র। আকাশের কালো মেঘ দৌড়ে পালাচ্ছে। অন্ধকারের বুক চিড়ে বের হয়ে আসছে স্বর্ণ রং সূর্য। তখন থেকেই রোদ। মেঘের কোলে রোদ হেসেছে, বাদল গেছে টুটি। আহা, হাহা, হা...। কবিগুরুর সেই দৃশ্যকল্প বাস্তব হয়ে ধরা দিচ্ছে এখন। শ্রাবণের এ খেয়ালি প্রকৃতি ক্রিয়া করছে মানুষের মনেও। শ্রাবণ যেহেতু, প্রচুর বৃষ্টি হবে। হওয়ারই কথা। তবে এবার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হচ্ছে। সাদা চোখে দেখা যাচ্ছে সেটা। আবহাওয়া অফিসও নিশ্চিত করলো। জানালো, গত জুলাই মাসেই স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। সারাদেশে তখন ৩২.৭ মিলি মিটার বেশি বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। একই সময় ঢাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে ৪৯.৭ মিলি মিটার বেশি বৃষ্টি হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতা এসেছে আগস্ট। আগস্টে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আরও বেড়েছে বলেই মনে হয়। গত কয়েক দিনের শ্রাবণধারা দেখে মনে হচ্ছে, পূর্ণরূপ পেয়েছে বর্ষা। যখন বৃষ্টি হচ্ছে, তখন হচ্ছেই শুধু। কোন ফাঁকি নেই। টানা বৃষ্টি। বড় বড় ফোটা। দারুণ ছন্দ। দেখে কী যে ভাল লাগে! বুধবারের কথাই ধরা যাক, দুপুরের দিকে আকাশ হঠাৎ কালো হয়ে গেল। তারপর সে কী বৃষ্টি! জানালা খুলে বাইরে তাকাতেই মনে হলো, হাশেম খানের আঁকা ছবির ক্যানভাস! ঝিরি ঝিরি হাওয়া এসে গায়ে লাগছিল। হাত বাড়িয়ে দিতেই অদ্ভুত একটা শিহরণ! বৃষ্টি স্নানেরও এখন সময়। সময়টা স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েরাই ভাল ধরতে পারছে বলে মনে হয়। একদল কিশোর ইউনিফর্ম গায়ে তুমুল ভিজতে ভিজতে বাড়ি ফিরছিল। তাদের দিকে তাকিয়ে ভেতরে গুন গুন করে ওঠে কবিগুরুর সেই কথা- আজ শ্রাবণের আমন্ত্রণে/দুয়ার কাঁপে ক্ষণে ক্ষণে,/ ঘরের বাঁধন যায় বুঝি আজ টুটে...। পরে আবহাওয়া অফিসে ফোন দিয়ে জানা গেল, দুপুর ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ২৩.৬ মিলি মিটার। এমন বৃষ্টি প্রায় প্রতিদিনই হচ্ছে। তবে শ্রাবণে বৃষ্টি নয় শুধু, চলছে রোদের খেলা। সূর্যকে আড়াল হওয়ার সুযোগ না দিয়ে যেমন বৃষ্টি নামছে, তেমনি বৃষ্টি শেষ হতে না হতেই উঁকি দিচ্ছে সূর্য। প্রকৃতির বিচিত্র খেয়াল বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠেছে বৈকি। গত মঙ্গলবারের উদাহরণ টানা যেতে পারে। দুপুর পর্যন্ত প্রখর রোদ। গা ঘামছিল। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় পৌঁছতেই নামলো বৃষ্টি। বৃষ্টির ফোটার গায়ে রোদ মাখা ছিল। দৃশ্যটা সত্যি অন্যরকম। একই দৃশ্য আরও জোরালো মনে হলোÑ পল্টনের এসে। একটি প্রাইভেটকারের ছাদে আগে থেকেই সূর্যের আলো ছড়িয়ে ছিল। সেখানেই বৃষ্টির ফোটা পড়তেই মনে হলো মুক্তোদানা! দেখে ভেতরের কিশোর মন যেন জেগে ওঠে। ছুটে গিয়ে কুড়িয়ে নিতে মন চায় অমূল্য মুক্তদানা। প্রকৃতির এ রূপ আরও বেশকিছু দিন দেখা যাবে বলেই জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা রুহুল কুদ্দুছ জানান, শ্রাবণের অতিবৃষ্টি অস্বাভাবিক কিছু নয়। বৃষ্টির সঙ্গে রোদের খেলাও খুব স্বাভাবিক ঘটনা। এ খেলা আরও অনেকদিন চলবে। আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, এ মাসে বঙ্গোপসাগরে ১ থেকে ২টি মৌসুমি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। আগস্টে ঢাকা বিভাগে ২৭৫ থেকে ৩৪০ মিলিমিটার, ময়মনসিংহ বিভাগে ২৮৬ থেকে ৩৫০ মিমি, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫০০ থেকে ৬১৫ মি.মি., সিলেট বিভাগে ৪১০ থেকে ৫০০ মি.মি., রাজশাহী বিভাগে ২৪৫ থেকে ৩০০ মি.মি., রংপুর বিভাগে ৩৩৫ থেকে ৪১০ মি.মি., খুলনা বিভাগে ২৭০ থেকে ৩৩০ মি.মি. এবং বরিশাল বিভাগে ৩৯০ থেকে ৪৭৫ মি.মি. বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সম্ভাবনার হোক শ্রাবণধারা। উপভোগ্য হোক। প্রকৃতিপ্রেমীদের তাই প্রত্যাশা।
×