ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মহাসড়কগুলো পানির তোড়ে খানাখন্দে রূপ নিয়ে মৃত্যুফাঁদে পরিণত হচ্ছে। ;###;এক কথায় জলাবদ্ধতায় শহরবাসীর জনজীবন থমকে গেছে

নগরে মহাদুর্ভোগ ॥ সোলায়মান মোহাম্মদ

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ৩ আগস্ট ২০১৭

নগরে মহাদুর্ভোগ ॥ সোলায়মান মোহাম্মদ

জলজটে-যানজটের ফলে ১০ মিনিটের পথ যেতে এক ঘণ্টা লাগছে। ঘরেও পানি বাহিরেও পানি। যদিও পানির অপর নাম জীবন কিন্তু পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যে এই পানির কারণেই এখন জনজীবনে সীমাহীন দুর্ভোগে। চারদিকে পানিতে সয়লাব যেন নদীর উপর ভাসমান নগরী স্থাপন করে ঢাকাবাসী বাস করছে। রিক্সা, বাইক, প্রাইভেটকারসহ সকল যানবাহন শহরবাসীর কাছে অকেজো, প্রয়োজন শুধু নৌকার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এ নিয়ে রসিকতার শেষ নেই। যে যেমন পারছে পানিবন্দীর কাহিনী চিত্রসহ উপস্থাপন করছে। কর্মজীবীরা কেউ হাঁটু পানি আবার কেউ কোমর পানিতে নেমে ভিজেই অফিসে যাতায়াত করছেন। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরাও নিয়মিত শিক্ষালয়ে যেতে পারছে না। এতে তাদের লেখাপড়ার মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। শহরের নিচু এলাকায় অফিস ও বাসাবাড়িতেও পানি উঠছে। মহাসড়কগুলো পানির তোড়ে খানাখন্দে রূপ নিয়ে মৃত্যুফাঁদে পরিণত হচ্ছে। এক কথায় জলাবদ্ধতায় শহরবাসীর জনজীবন থমকে গেছে। এতো জানা কথাই গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরত, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত এই ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। আষাঢ় শ্রাবণ এই দু’মাস বর্ষকাল। ঋতু অনুযায়ী এই দু’মাস বৃষ্টি হবে এটাই স্বাভাবিক। বিগত বছরগুলোতেও বর্ষাকালে একাধারে বৃষ্টি পড়ার কারণে শহরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এবার বিগত সকল বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করে জলাবদ্ধতার আকার ভয়াবহতায় রূপ নিয়েছে। কিন্তু কেন এই জলাবদ্ধতা, কেন এই মহাদুর্ভোগের সৃষ্টি? এর কারণ কি শুধুই বৃষ্টি না অন্য কিছু? শুধুমাত্র বৃষ্টির কারণে এমন ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টির প্রশ্নই আসে না। পানি নিম্নগামী, যা সমতা রক্ষা করে চলে। পানিপ্রবাহ নিষ্কাশনে বাধা পেলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে এটাই স্বাভাবিক। ঢাকার আশপাশে প্রায় ৬৩টি নদী-নালা, খাল-বিল ছিল। বর্তমানে যার কয়েকটি ছাড়া প্রায় সবই প্রভাবশালীদের লোলুপ দৃষ্টির শিকার হয়ে মরে যেতে বাধ্য হয়েছে। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এসব খাল ভরাট করে স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। ফলে পানি জমে থাকার নির্দিষ্ট কোন ঠিকানা না পেয়ে একটু নিচু জায়গা বা মহাসড়কে আশ্রয় নিচ্ছে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে জলজট ও যানজট। অন্যদিকে নগরবাসী তাদের খেয়াল খুশি মতো নিত্য ব্যবহার্য আবর্জনার স্তূপ বিশেষ করে পলিথিন ও প্লাস্টিক যেখানে-সেখানে ফেলে রাখছে যেগুলো পরবর্তী কালে সামান্য বাতাস বা বৃষ্টি হলেই পানি নিষ্কাশনের ড্রেনে এসে জমছে এবং ধীরে ধীরে সেখানে ময়লার স্তূপ জমে অকেজো হয়ে উঠছে। ফলে পানি নিষ্কাশনের বিকল্প কোন পথ না থাকায় সৃষ্টি হচ্ছে এই জলাবদ্ধতা। ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ভূগর্ভস্থ পাইপলাইন স্থাপন, নির্মাণ না হলে এই সমস্যা নিরসনের কোন উপায় দেখছি না। সাময়িক পানি নিষ্কাশন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য সার্বক্ষণিক পরিচ্ছন্ন কর্মী থাকতে হবে। তাছাড়া সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটি, তা হলো খাল-বিল নদী-নালা ভরাট রোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে হবে। সর্বোপরি সিটি মেয়রদ্বয়, ওয়াসা ও জনগণের সমন্বিত উদ্যোগেই কেবল এই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব। অন্যথায় পর্যায়ক্রমে সারা দেশের মানুষকেই এর চরম মূল্য দিতে হবে। শ্রীপুর, গাজীপুর থেকে
×