ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পরে উল্টো অপবাদ দিয়ে ধর্ষিতা ও তার মাকে অমানুষিক নির্যাতন করে মাথা মু-ন ॥ গ্রেফতার ৪

ভাল কলেজে ভর্তি করে দেয়ার প্রলোভনে তরুণীকে ধর্ষণ

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৩০ জুলাই ২০১৭

ভাল কলেজে ভর্তি করে দেয়ার প্রলোভনে তরুণীকে ধর্ষণ

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ নিজের চুল নিয়ে গর্ব হতো মেয়েটির, দীর্ঘ চুল, কেবল স্কুল পেরিয়েছে, ছিল উচ্চ শিক্ষার আশা ও অনেক বড় হবার কিন্তু ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর আবার ধর্ষকের পরিবারের অমানবিক নির্যাতনে তার সব স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার এখন। নিষ্ঠুরভাবে চুল কাটার পর নাপিত নিয়ে এসে ন্যাড়া করে দেয়া হয়েছে ধর্ষণের শিকার হওয়া তরুণীটিকে। ভাল কলেজে ভর্তি করিয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বাড়িতে ডেকে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিতি তুফান সরকার নামে এক যুবক। ঘটনার ১০ দিন পর অপবাদ দিয়ে শুক্রবার ধর্ষকের স্ত্রী ও এক মহিলা কাউন্সিলর (ধর্ষকের স্ত্রীর বোন) সহ তাদের লোকজন ধর্ষিতা তরুণী ও তার মাকে নির্যাতন করে মাথা ন্যাড়া করে দেয়। নির্যাতনে গুরুতর অসুস্থ মেয়েটি বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। হাসপাতালের বেডে তার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে চাপা কান্নার নোনা পানি। নির্যাতনকারীদের হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার পর শুক্রবার রাতে তাকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। এর পরেই বিষয়টি জানাজানি হলে তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ধর্ষণের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত শহরের চকসূত্রাপুর কসাই পাড়ার মজিবর রহমানের ছেলে তুফান সরকারসহ (৩০) ৪ জনকে গ্রেফতার করে। সে শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক। তবে পৌরসভার সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর মারজিয়া হাসান রুমকিসহ অপর অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। গ্রেফতার হওয়া অন্য ৩ জন হলো-তুফান সরকারের সহযোগী আলী আজম দিপু (২৫), আতিক (২৭) ও রুপম (২৫)। পুলিশ জানিয়েছে এ ঘটনায় অপহরণ, ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগে তুফান সরকার, তার স্ত্রী আশা, মহিলা কাউন্সিলর রুমকি ও তুফানের গাড়িচালকসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মহিলা কাউন্সিলরসহ জড়িত অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তরুণীকে ধর্ষণ ও পরে মাসহ মেয়েটিকে জোরপূর্বক নিয়ে গিয়ে মারপিট করে চুল কেটে দেয়ার ঘটনা টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছে। পুলিশ ও নির্যাতিত মেয়েটির পরিবার জানায়, নির্যাতিত তরুণী এবার শহরের চকসূত্রাপুরের একটি স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। অভিযোগ করা হয়েছে, বাড়িতে যাওয়া আসার পথে ওই তরুণীকে প্রায় রাস্তায় উত্ত্যক্ত করতো তুফান ও তার সহযোগীরা। কিছু দিন আগে মেয়েটির পথরোধ করে তুফানের সহযোগীরা মেয়েটির মোবাইল ফোন নম্বর নেয়। মেয়েটি তার মোবাইল ফোন নম্বর না দিয়ে ভুল নম্বর দিলে তুফান মেয়েটির আসল ফোন নম্বর সংগ্রহ করে হুমকি দেয়। পরে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে ভাল কলেজে ভর্তি করার প্রলোভন দেয়। তরুণীটি কলেজে ভর্তির জন্য কাগজপত্রসহ ৪ হাজার টাকা তুফানের সহযোগীর হাতে দেয়। ১৭ জুলাই ওই তরুণীকে কলেজে ভর্তির কাগজপত্রে সই করার জন্য তুফান সরকার বাড়িতে ডেকে পাঠায়। ভাল কলেজে ভর্তির প্রলোভনে পড়ে তরুণীটি তুফান সরকারের চকসূত্রাপুর কসাই পাড়ার বাড়িতে যায়। গাড়িতে করে তাকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। বাড়িতে ওই সময় তুফানের স্ত্রী আশা ছিলেন না। এ সময় তুফান তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে বলে পুলিশের কাছে মেয়েটি স্বীকারোক্তি দেয়। ধর্ষণের কারণে মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়লে তুফানের এক সহযোগী তাকে ওষুধ এনে দেয়। মেয়েটি ধর্ষণের ঘটনাটি তার মাকে পর্যন্ত জানাতে পারেনি ভয়ে। পরবর্তীতে তুফান সরকার তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখে এবং বিষয়টি জানতে পেরে তুফানের স্ত্রী ক্ষিপ্ত হয়। এ ঘটনার জের ধরে শুক্রবার তুফানের স্ত্রী আশা ও বড় বোন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর (৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড) মার্জিয়া হাসান রুমকিসহ তাদের লোকজন তরুণীর বাড়িতে তালা লাগিয়ে দেয়। পরে তরুণী ও তার মাকে কাউন্সিলরের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। সেখানে মেয়েটিকে অপবাদ দিয়ে চালানো হয় আমানুষিক নির্যাতন। এক পর্যায়ে দু’জনের মাথার চুল কেটে ফেলা হয়। মারপিটের পর নাপিত ডেকে নিয়ে এসে মাথা ন্যাড়া করে দিয়ে ৪ ঘণ্টা আটকে রাখার পর ২০ মিনিট সময় দিয়ে শহর ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়। এমনকি বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার জন্য ট্রাক পাঠান হয়। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের তরুণীর পিতা আতাইকুলা এলাকায় একটি ছোট খাবারের দোকান চালান। নির্যাতনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া তরুণীকে শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পুলিশ রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিষয়টি জানাতে পেরে অভিযান শুরু করে এবং রাতে তুফানসহ ৪ জনকে আটক করে। শনিবার দুপুরে সদর থানায় মামলা দায়ের করা হয়। নির্যাতিত তরুণী ও তার মার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী জানিয়েছেন আটক ধর্ষক ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে। তরুণীর ওপর নির্যাতনকারী অভিযুক্ত অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান। বগুড়া সদর থানার ওসি জানিয়েছেন, ঘটনার সঙ্গে বেশ কয়েক জন জড়িত।
×