ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

অবিরাম শ্রাবণ ধারায় চরম ভোগান্তি, লণ্ড ভণ্ড জনজীবন

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২৭ জুলাই ২০১৭

অবিরাম শ্রাবণ ধারায় চরম ভোগান্তি, লণ্ড ভণ্ড জনজীবন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আসল রূপে ফিরেছে শ্রাবণ। বিগত কয়েকদিন ধরে সারাদেশে ওপর অঝোর ধারায় শুরু হওয়া এই বৃষ্টিপাত শ্রাবণের প্রকৃতিকে নতুন করে পরিচয় করে দিচ্ছে। প্রকৃতিতে এখন চলছে শ্রাবণ মাস। এ মাসকে মেঘ, বৃষ্টির মাস বলেই অভিহিত করে থাকেন সাহিত্যিকরা তাদের কবিতা, গল্পে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিগত কয়েক বছর যাবত প্রকৃতিতে শ্রাবণেই মেঘ ও বৃষ্টির দেখা মিলছিল না। তবে প্রকৃতি যেন এবার ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত হচ্ছে। এবার শীতের শেষ থেকেই দেশের বৃষ্টিপাতের আধিক্য শুরু হয়েছে। আষাঢ় শেষে শ্রাবণে তা অঝোর ধারায় নামছে। শ্রাবণের শুরু থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার রাত থেকেই সারাদেশের ওপর প্রবল বর্ষণ শুরু হয়। ফলে সারাদেশে জনজীবনের নেমে এসেছে সীমাহীন দুর্ভোগ। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন গত কয়েকদিন সারাদেশের ওপর চলতে থাকা ভারি বর্ষণ আগামীকাল শুক্রবার নাগাদ কমে আসতে পারে। তবে তারা জানান, প্রকৃতিতে যেহেতু এখন দেশে বর্ষাকাল চলছে, তাই বৃষ্টি একেবারে থেমে যাবে না। দেশের কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টিপাত হবে। কয়েক দিন ধরে সারা দেশেই টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এতে রাজধানী ঢাকা, বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহর, জেলা-উপজেলা ও গ্রামাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টির পানি কারণে সাগরের জোয়ারের উচ্চতা আরও বেড়ে যাচ্ছে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৃষ্টিপাতের তীব্রতা বেড়েছে। অল্প সময়ে অধিক পরিমাণ বৃষ্টিপাত হবার প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম বলেন, এর ফলে দেখা যাচ্ছে শহরগুলোতে বিস্তর ভোগান্তি। তিনি জানান শহরগুলোতে দুর্বল অবকাঠামো অল্প সময়ে এত অধিক বৃষ্টিপাতের চাপ নিতে পারছে না। এদিকে টানা বর্ষণের কারণে দেশে বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। স্টাফ রিপোর্টার বাগেরহাট থেকে জানান, ব্যাপক বৃষ্টিপাতের কারণে বাগেরহাটে চিত্রা নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে কমপক্ষে ১০ গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। ভেসে গেছে শত শত চিংড়ি ঘের। প্রবল টানা বর্ষণ ও জোয়ারের পানির প্রবল চাবে মঙ্গলবার রাতে বাগেরহাট সদর ও চিতলমারী উপজেলার সীমান্তবর্তী চিত্রা নদীর বাঁধ ভেঙ্গে যায়। ফলে বাকেরগঞ্জ, শ্রীরামপুর, ডুমুরিয়া, খিলিগাতী, খড়িয়া, করাতেরদিয়া, কালশিরা-সহ কমপক্ষে ১০টি গ্রামে তীব্র স্রোতে পানি প্রবেশ করে। এদিকে মোল্লাহাট, রামপাল, শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, চিতলমারী, ফকিরহাট, কচুয়া ও বাগেরহাট সদর উপজেলার কমপক্ষে দেড়শ গ্রাম জলাবদ্ধ হয়ে আছে। অনেক স্থানে ঘরবাড়ি তলিয়ে থাকায় অসংখ্য পরিবারের রান্নাবান্না বন্ধ রয়েছে। এমনকি বাগেরহাট ও মোরেলগঞ্জ পৌরসভার অধিকাংশ এলাকা জলমগ্নতায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। টানা ভারি বর্ষণে জেলার ৯ উপজেলার নি¤œাঞ্চল ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে মাছের খামার, আমনের বীজতলা, পানের বরজ পানিতে তলিয়ে এবং গাছ পড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করতে বলা হয়েছে। স্টাফ রিপোর্টার বগুড়া অফিস থেকে জানান, টানা বৃষ্টিপাতে জেলা শহর বগুড়ায় পথ চলা দায় হয়ে পড়েছে। বেশিরভাগ সড়ক সামান্য বৃষ্টিতেই ডুবে যাচ্ছে। বৃষ্টিপাতের কারণে নগরীর বাদুরতলা চকসুত্রাপুর এলাকা এবং সংলগ্ন হাড্ডিপট্টি আন্তঃউপজেলা বাস টার্মিনাল সড়ক, চকযাদু রোড, মালগুদাম লেনের বাসিন্দাদের বর্ষা মৌসুমে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। একটু বৃষ্টিতেই কেন্দ্রস্থল সাতমাথা ও আশপাশের এলাকা পাকা সড়কের বদলে জলের সড়কে পরিণত হয়। অপরিকল্পিতভাবে নগর সম্প্রসারণ ড্রেনেজ ব্যবস্থা রুদ্ধ হওয়াই জলাবদ্ধতার মূল কারণ। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে নগরীর নিচু এলাকা এবং বাদুরতলা, চকযাদু রোড, চকসুত্রাপুর, হাড্ডিপট্টি, মালগুদাম লেনের লোকজন ঘর থেকে সহজে বের হতে পারছে না। দুয়ার খুলেই দেখে সড়ক ডুবে আছে। কোথাও কাদার পাকে পা ফেলা দায়। ছোট হালকা যানবাহন রিক্সা, সিএনজি চালিত অটোরিক্সা, ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক ওই পথে চলতেই চায় না। ওই এলাকার জুবিলী হাই স্কুলের এতটাই বেহাল দশা যে প্রায় ভর বছর স্কুলের মাঠে পানি জমে থাকে। নিজস্ব সংবাদদাতা সীতাকু- থেকে জানান চট্টগ্রাম উপজেলার সীতাকু- পৌরসভাসহ প্রতিটি এলাকায় পানিতে নিমজ্জিত হয়ে মৎস্য, পোল্ট্রি ও কৃষিতে প্রায় কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গত কয়েকদিনের অতিরিক্ত বৃষ্টিতে পাহাড়ী ঢলের পানি, বৃষ্টির পানি ও নদীর জোয়ারের পানি এক সঙ্গে হয়ে উপজেলার অনেক গ্রাম এখনও জলবদ্ধতার মধ্যে রয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত উপজেলার মাঝগ্রামগুলোতে জোয়ারের পানি, বৃষ্টির পানি এক হয়ে এখনও ২৫ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দী জীবন-যাপন করছে। কলাপাড়া থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, লঘুচাপের প্রভাবে অমাবস্যার জোতে অস্বাভাবিক জোয়ারে উত্তাল ঢেউয়ের ছোবলে কুয়াকাটা সৈকতের বেলাভূমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ৩০ ফুট প্রস্থ সৈকত সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। দীর্ঘ সৈকতের শত শত গাছপালা ঢেউয়ের তোড়ে উপড়ে গেছে। তছনছ হয়ে গেছে সৈৗন্দর্যম-িত স্পটগুলো। কেশবপুর থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান শহরসহ পৌরসভার অনেক গ্রাম বৃষ্টির পানি বেরুতে না পেরে জলাবদ্ধতায় কবলিত হয়েছে। টানা পাঁচ দিনের অবিরাম বৃষ্টির পানি হরিহর ও ভদ্রা নদী দিয়ে বেরুতে না পারায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। খাল বিল দখল করে মাছের ঘের তৈরি করায় ও নদ নদীতে পাটা দিয়ে বাঁধার সৃষ্টি করায় বর্ষার পানি ঠিকমতো বেরুতে পারছে না। ফলে স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। গ্রামের পর গ্রাম, মাঠ, খাল বিল, নদী নালা পানিতে এককার হয়ে গেছে। পৌর এলাকার এক হাজার পরিবারের প্রায় ৫ হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে সড়কে পাশে ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দশটি আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।
×