ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এইচএসসিতে চমক

ছেলের চেয়ে মা এগিয়ে

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ২৫ জুলাই ২০১৭

ছেলের চেয়ে মা এগিয়ে

কালিদাস রায় নাটোর থেকে, লেখাপড়ার যে কোন বয়স নেই তা প্রমাণ করলেন মা শাহনাজ পারভিন। এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় প্রায় ৪২ বছর বয়সী ও দুই সন্তানের জননী শাহনাজ পারভিন একই সঙ্গে ২০ বছর বয়সী ছেলে রাকিব আমিন সবুজের চেয়ে বেশি নম্বর পেয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছেন। তার এই সাফল্যে পরিবার, কলেজের শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী আনন্দিত। শাহনাজ পারভিন নাটোর মহিলা কলেজ থেকে পরীক্ষা দিয়ে ৪ দশমিক ৮৩ এবং ছেলে রাকিব নাটোর টেকনিক্যাল স্কুল এ্যান্ড কলেজ থেকে পরীক্ষা দিয়ে ৩ দশমিক ৬৭ পেয়েছেন। ছেলের চেয়ে মায়ের ফল ভাল হওয়ায় আনন্দের বন্যা বইছে শাহনাজ পারভিনের পরিবারে। মা-ছেলের পাস করার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর শাহনাজ পারভিনের বাড়িতে ভিড় করছেন এলাকাবাসী। তবে উচ্চ শিক্ষার জন্য তারা সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন। শাহনাজ পারভিনের পরিবার জানায়, ১৯৯২ সালে তেলকুপি এলাকার রুহুল আমিনের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। এরপর পরিবার নিয়ে শহরের নাটোর শহরের মল্লিকহাটি মধ্যপাড়ায় বসবাস করে আসছেন তিনি। বিয়ের পর ১৯৯৫ সালে স্থানীয় একটি স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে দ্বিতীয় বিভাগে পাস করেন। এরপর অভাবের সংসারের কারণে আর লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারেননি শাহনাজ পারভিন। এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তানের জননী শাহনাজ স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নার্সের চাকরি করে সংসার পরিচালনা করে আসছিলেন। কিন্তু লেখাপড়ার গুরুত্ব বুঝে চল্লিশ বছর বয়সেই ২০১৫ সালে নাটোর মহিলা কলেজে কম্পিউটার বিষয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকেই ২০১৫-১৬ শিক্ষা বর্ষে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৪ দশমিক ৮৩ পয়েন্ট নিয়ে উত্তীর্ণ হন। মা শাহনাজ পারভিন বলেন, ১৯৯৫ সালে এসএসসিতে দ্বিতীয় বিভাগ নিয়ে পাস করি। এরপর আর লেখাপড়া করার সুযোগ হয়নি। কিন্তু যখন বুঝলাম লেখাপাড়ার কোন বয়স নেই তখন কলেজে ভর্তি হয়ে পড়াশোনায় মনোযোগ দেই। ভবিষ্যতে উচ্চ শিক্ষার জন্য ভাল কোন কলেজে ভর্তি হতে চাই। কিন্তু অভাবের সংসারে সাংসারিক কাজ করে লেখাপড়া চালিয়ে নেয়া খুব কঠিন। তাই সরকারী কোন সহযোগিতা পেলে লেখাপড়া আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। এদিকে শাহনাজ পারভিনের ছেলে রাকিব আমিন সবুজ শহরের নাটোর টেকনিক্যাল এ্যান্ড কলেজ থেকে ইলেকট্রিক্যাল বিষয় নিয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এবারের পরীক্ষার ফলে মায়ের চেয়ে কম পয়েন্টে অর্থাৎ ৩ দশমিক ৬৭ নিয়ে উত্তীর্ণ হয় সে। ছেলে সবুজ বলেন, আমার রেজাল্টের চেয়ে মায়ের রেজাল্ট ভাল হওয়ায় খুব খুশি হয়েছি। তাছাড়া মায়ের ফল ভাল হওয়ার কারণে পরিবারের সবাই আনন্দিত। শাহনাজ পারভিনের ভাই সাংবাদিক কাউছার আহম্মেদ বলেন, পিতার অভাবের সংসারে অনেক আগেই বোনকে বিয়ে দিয়ে দিই। একদিন হঠাৎ করেই বোন বলেন, পুনারায় লেখাপড়া শুরু করবেন তিনি। এতে আমরাও সায় দেই। পরে নাটোর মহিলা কলেজে কম্পিউটার বিষয়ে ভর্তি করে দেই। তিনি আরও বলেন, বোন শাহনাজ স্থানীয় একটি ক্লিনিকে চাকরি করে সংসার পরিচালনা করেন। দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি লেখাপড়া চালিয়ে গেছেন। কলেজের অধ্যক্ষকে বলে ফরম পূরণের টাকাসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে টাকা কম দিয়েই পড়াশুনা চালিয়ে গেছেন। শাহনাজ পারভিনের স্বামী রুহুল আমিন এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, তার স্ত্রী এবং ছেলে এক সাথে পাস করায় পরিবারে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। অভাবের সংসারেও যে তারা পাস করেছে এজন্য ভাল লাগছে। তার স্ত্রী একটি ক্লিনিকে চাকরি করার পর অবসর সময়ে পড়ালেখা করতেন। তাদের উচ্চ শিক্ষার জন্য আমার প্রয়াস অব্যাহত থাকবে। তবে অভাবের সংসারে যদি সরকারী কোন সাহায্য সহযোগিতা পাওয়া গেলে তারা আরও ভাল ফল করবে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন বলেন, পড়াশোনার কোন বয়স নেই। তার উদাহরণ শাহনাজ বেগম এবং সবুজ। তাদের যে অদম্য মনোবল তারা আরও এগিয়ে যাবে এই প্রত্যাশা করি। সরকারী কোন সহযোগিতার প্রয়োজন মনে করলে তাদের সকল সহযোগিতা করা হবে।
×