ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কৃষির নতুন ক্ষেত্র খুঁজতে শুরু হচ্ছে কৃষি শুমারি

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২০ জুলাই ২০১৭

কৃষির নতুন ক্ষেত্র খুঁজতে শুরু হচ্ছে কৃষি শুমারি

আনোয়ার রোজেন ॥ বাংলাদেশ এখন আর প্রধানত কৃষিনির্ভর নয়। গত এক দশকে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিতে শতাংশ হিসেবে কৃষির অবদান ধারাবাহিকভাবে কমেছে। তাই প্রবাদ বাক্যের সমতুল্য হয়ে ওঠা ‘কৃষিপ্রধান বাংলাদেশ’Ñ কথাটি এখন তেমন উচ্চারিত হয় না। সমৃদ্ধির সোপানে চড়তে অগ্রাধিকার পাচ্ছে শিল্প খাত। তবে কৃষিকে বাদ দিয়ে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয় বলেও মনে করছে সরকার। এ জন্য অর্থনীতিতে কৃষির অবদান বাড়ানোর ক্ষেত্র খুঁজে বের করতে মাঠে নামছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। ১০ বছর পর কৃষি শুমারি (শস্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ) পরিচালনা করবে সংস্থাটি। এর আগে সর্বশেষ ২০০৮ সালে কৃষি শুমারি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এ লক্ষ্যে ৩৩৯ কোটি টাকা ব্যয় ধরে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে বিবিএস। এ শুমারির মাধ্যমে দেশজুড়ে কৃষি খাতে শস্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপ-খাতগুলোর পরিবার পর্যায়ে কৃষি খামারের সার্বিক তথ্য সংগ্রহ করে সঙ্কলন ও প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করা হবে। সেই সঙ্গে এ খাতে দীর্ঘমেয়াদী অবকাঠামোগত কি ধরনের পরিবর্তন এসেছে সে চিত্রও তুলে আনা হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কৃষি পিছিয়ে পড়েনি, তবে এগিয়েছে শিল্প ও সেবা খাত। কৃষিতে উৎপাদন বেড়েছে, বেড়েছে প্রযুক্তির ব্যবহার। সঠিক তথ্য ও পরিকল্পনা নেয়া গেলে অর্থনীতিতে কৃষি খাতের অবদান বাড়বে। বিবিএস সূত্রে জানা গেছে, কোন জরিপ প্রকল্প নয়, এটা হবে শুমারি। আদমশুমারি, অর্থনৈতিক শুমারির পর পরিসংখ্যান ব্যুরোর এটিই সবচেয়ে বড় কাজ। দেশের ৬৪টি জেলার প্রতি উপজেলায় এ শুমারি পরিচালিত হবে। তাছাড়া দেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে যদি গড়ে চারজন করে একটি খানা বা পরিবার ধরা হয় তাহলে কমপক্ষে ৪ কোটি বাড়িতে শুমারি পরিচালনা করা হবে। বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৭৫ ভাগ মানুষ এখনও গ্রামে বসবাস করে? গ্রামে যারা বসবাস করেন, তাদের মধ্যে প্রায় ৬০ ভাগ মানুষ এখনও সরাসরি কৃষির সঙ্গে যুক্ত আছেন। বিবিএস সূত্র জানায়, বাংলাদেশে কৃষি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাত। সরকারের নীতি-নির্ধারণ ও উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণে কৃষি জমির পরিমাণ, জমির ব্যবহার, কৃষক, শস্য উৎপাদন, মৎস্য উৎপাদন এবং প্রাণিসম্পদ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা প্রধানত কৃষি শুমারির মাধ্যমেই পাওয়া যায়। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত চারটি কৃষি শুমারি অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৭৭ সালে প্রথম, ১৯৮৩-৮৪ সালে দ্বিতীয়, ১৯৯৬ সালে তৃতীয় এবং সর্বশেষ ২০০৮ সালে চতুর্থ কৃষি শুমারি অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় পরিসংখ্যান আইন ২০১৩-তে আদমশুমারি ও অর্থনৈতিক শুমারির পাশাপাশি কৃষি শুমারি পরিচালনার কথা বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, লাঙ্গল দিয়ে হাল চাষের দিন ফুরিয়েছে। আধুনিক যুগে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশের কৃষি। আমাদের জনসংখ্যা বেড়েছে, কমেছে কৃষি জমির পরিমাণ। তারপরও বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন বেড়েছে বহুগুণ। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে টেকসই খাদ্য নিরাপত্তার জন্য খাদ্য কৃষিবিষয়ক হালনাগাদ বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত প্রয়োজন। কৃষি শুমারি প্রকল্পটি এ উদ্দেশ্যেই নেয়া হয়েছে। এটি কৃষি খাতের উন্নয়নে নীতি-নির্ধারণ ও পরিকল্পনার প্রণয়নে ভূমিকা রাখবে। কৃষির অবদান কমেছে সাড়ে ছয় ভাগ ২০০৫-০৬ অর্থবছরে জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ছিল ২১.৮ ভাগ। ২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে ২০১২-১৩ অর্থবছর এই সময়ে জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান কমতে থাকে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে এসে জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান দাড়ায় ১৮.৭ ভাগ। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের জিডিপিতে সেবা খাতের অবদান ৫৩ দশমিব ৩৯ ভাগ, শিল্প খাতের ৩১ দশমিক ২৮ এবং কৃষি খাতের ১৫ দশমিক ৩৩ ভাগ।
×