ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আসন বণ্টন নিয়ে বিরোধ, ভাংচুর ॥ পাবিপ্রবিতে ক্লাস বন্ধ

সিলেটে দুপক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে ছাত্রলীগ কর্মী নিহত

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১৮ জুলাই ২০১৭

সিলেটে দুপক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে ছাত্রলীগ কর্মী নিহত

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রলীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে সিলেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক ছাত্রলীগকর্মী নিহত এবং পাঁচজন আহত হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এছাড়া একই দিন আধিপত্য বিস্তার এবং আসন বণ্টন নিয়ে বিরোধের জের ধরে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবিপ্রবি) ছাত্রলীগের দুপক্ষে সংঘর্ষ এবং ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সিলেট অফিস জানায়, বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজে ছাত্রলীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে নিহত ছাত্রলীগকর্মী খালেদ আহমদ লিটু ওই কলেজের স্নাতক শ্রেণীর শিক্ষার্থী। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কলেজের শ্রেণীকক্ষের ভেতর এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উক্ত কলেজে ছাত্রলীগের পল্লব ও পাভেল গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় কলেজের একটি কক্ষের ভেতর লিটুর মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়। লিটু পাভেল গ্রুপের কর্মী। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতার। বিয়ানীবাজার থানার ওসি চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘সকালে কলেজে ছাত্রলীগের দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর নিহত লিটুসহ ছাত্রলীগের একটি পক্ষ ওই কক্ষে অবস্থান করছিল। হঠাৎ কক্ষে গুলির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ লিটুর লাশ দেখতে পায়।’ পাবিপ্রবির ক্লাস বন্ধ ঘোষণা এদিকে, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার হলে আসন বণ্টন নিয়ে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার সময় বঙ্গবন্ধু আবাসিক হলে ভাংচুর করা হয়। শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের আসন বরাদ্দ নিয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহেদ সাদেকী শান্ত ও সেক্রেটারি ওয়ালিউল্লাহ গ্রুপের সঙ্গে সহ-সভাপতি আরাফাত হোসেন-মতিন গ্রুপের বিরোধ দেখা দেয়। এরই জের ধরে সোমবার ভোরে আরাফাত গ্রুপের লোকজন শান্ত গ্রুপের এক কর্মীকে মারধর করে। এ নিয়ে সকালে দুই গ্রুপের মধ্যে ক্যাম্পাস চত্বরে পাল্টপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের দুটি কক্ষে ভাংচুর চালায়। এ সময় ক্যাম্পাসে উত্তেজনা দেখা দিলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ও র‌্যাব ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ হয়ে যায়। পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক জানান, খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। জানা যায়, সিলেটে নিহত খালেদ আহমদ লিটু (২৫) বিয়ানীবাজারের কসবা নয়াটিলা এলাকার খলিল উদ্দিনের ছেলে। এলাকায় একটি মোবাইলের দোকান চালাতেন তিনি। লিটু জেলা ছাত্রলীগের আপ্যায়নবিষয়ক সম্পাদক পাভেল মাহমুদের সমর্থক হিসেবে পরিচিত। এদিকে পাবনা সদর থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানান, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি শাহেদ সিদ্দিকী শান্ত ও সহ-সভাপতি আরাফাত পক্ষের মধ্যে আধিপত্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এরই জেরে সোমবার ভোরে আরাফাত পক্ষের লোকজন শান্তর পক্ষের একজনকে মারধর করে। সকাল ১০টার দিকে উভয়পক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। একপর্যায়ে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা দিগি¦দিক ছোটাছুটি করে নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ করে। তিনি আরও জানান, খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিশ্ববিদ্যালয়ে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সহ-সভাপতি আরাফাত হোসেন অভিযোগ করেন, ‘বর্তমান সভাপতি শাহেদ ও সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিউল্লাহ একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে বিভিন্ন অপকর্ম করেন। তার প্রতিবাদ করলেই তারা আমাদের ওপর চড়াও হয়। তারা আমার রুমে ব্যাপক ভাংচুরসহ লুটপাট করেছে।’ সভাপতি শান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য বিক্রিসহ সেবন করেন বলেও অভিযোগ করেন আরাফাত। তিনি জানান, মাদকদ্রব্যের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ‘সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিউল্লাহর ছাত্রত্ব নেই, তবুও তিন পদ ধরে রেখেছেন। তারা সংগঠনের নাম ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ঠিকাদারি কাজ করে থাকেন।’ তবে সভাপতি শান্ত মাদক বিক্রি ও সেবনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘তারা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমরা সব সময় ক্যাম্পাসে শান্তি-শৃঙ্খলার পক্ষে। এ ঘটনার জন্য আরাফাত নিজেই দায়ী। সে বাইরে থেকে ক্যাডার ভাড়া করে এনে শিক্ষার্থীদের মারধর করেছে।’
×