ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলে দিনে ৫শ’ মেও

লোডশেডিংই বিদ্যুত বিতরণে প্রধান সমস্যা

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৬ জুলাই ২০১৭

লোডশেডিংই বিদ্যুত বিতরণে প্রধান সমস্যা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ লোডশেডিংই বিদ্যুত বিতরণে প্রধান সমস্যা বলে পল্লী বিদ্যুত সমিতির জেনারেল ম্যানেজাররা (জিএম) জানিয়েছেন। এখনও উত্তর এবং দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল ছাড়াও দক্ষিণের জেলাগুলোতে দিনে ৫০০ মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং করতে হয়। বিশেষ করে এসব এলাকার জিএমরা লোডশেডিং নিয়ে তাদের বিব্রত হওয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের জিএম সম্মেলনে। জিএম সম্মেলনের পর আরইবির এক কর্মকর্তা জানান, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, রংপুর এবং চট্টগ্রামের বিতরণ অঞ্চলে কারিগরি সমস্যা প্রকট। এসব এলাকায় বিদ্যুতের ঘাটতিও রয়েছে। একই অবস্থা দেশের আরও কিছু অঞ্চলে রয়েছে। ওইসব এলাকায় বিদ্যুত বিতরণ নিয়ে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিব্রত হতে হচ্ছে। অনুষ্ঠানে বিদ্যুত জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেছেন, ধারণার চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ বেশি চাহিদা বেড়েছে। যে কারণে কোথাও কোথাও লোডশেডিং হচ্ছে। ২০১৮ সালের জুন নাগাদ নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের আগে নওগাঁ, ময়মনসিংহ, যশোর, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর ও রাউজান পল্লী বিদ্যুত সমিতির জিএমরা তাদের এলাকায় লোডশেডিং হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। নওগাঁর জিএম বলেন, ওই অঞ্চলে সান্ধ্যকালীন সর্বোচ্চ চাহিদার সময় ৩৭০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে ১৪ জুলাই সরবরাহ করা হয়েছে ২৪০ মেগাওয়াট। এ সময় প্রতিমন্ত্রী তাকে প্রশ্ন করেন, আপনার নেয়ার সক্ষমতা ঠিক আছে কি না? জবাবে নওগাঁর জিএম বলেন, আমার এলাকায় অনেক বেশি লোড নেয়ার সক্ষমতা রয়েছে। এ সময় তিনি জানান, তার এলাকায় ৩৬৭ মেগাওয়াট রিসিভ করার রেকর্ড রয়েছে। কিন্তু আমরা বিদ্যুত চাইলে উৎপাদনের ঘাটতি রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। আরও কয়েকজন জিএম লোডশেডিংয়ের অভিযোগ করলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা বিদ্যুতের চাহিদার যে প্রজেকশন তৈরি করেছিলাম। তার চেয়ে শহরে ২০ শতাংশ আর গ্রামে ১৫ শতাংশ চাহিদা বেড়েছে। যে কারণে উৎপাদন বাড়লেও কোথাও কোথাও ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া গ্যাসের ঘাটতির কারণে বর্তমান এক হজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন কম হচ্ছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখন মাথাপিছু বিদ্যুতের ব্যবহার হচ্ছে প্রায় ৪০০ কিলোওয়াট আওয়ার। বাংলাদেশ যখন উন্নত বিশ্বে প্রবেশ করবে তখন প্রায় ১০ হাজার কিলোওয়াট আওয়ার বিদ্যুতের প্রয়োজন পড়বে। সে ভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডকে। আরইবি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মঈন স্বাগত বক্তব্যে বলেন, সেপ্টেম্বর ২০১৬ হতে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ৮৮০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। এই ঘাটতি মেটাতে গ্রাহকের জামানত, কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিল ভেঙ্গে বেতন ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আরইবি গঠন করাই হয়েছে জনগণকে সেবা প্রদানের জন্য। মুনাফা করতে হবে এ কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেন। আপনারা প্রজেক্ট নিয়ে আসেন সরকার অর্থ সহায়তা করবে। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বলেন, আমরা এখন ভর্তুকি দিচ্ছি এটা হচ্ছে বিনিয়োগ। আমরা যখন মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হব, তখন মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে তখন তারা দশ টাকা দিয়ে বিদ্যুতের কিনতে পারবে। কিন্তু এখনই তা সম্ভব নয়। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিদ্যুত বিভাগের সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলনে, ঘুষ-দুর্নীতি আগের তুলনায় কমেছে এ কথা ঠিক। তবে সেবার মান পুরোপুরি উন্নত হয়নি। বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে লোক মারা যাচ্ছে আমরা এর দায় এড়াতে পারি না। সচিব বলেন, মানুষ আমাদের কাছে আসছে তার সংযোগের খোঁজ নিতে। আমরা যখন খোঁজ নিচ্ছি তখন বলা হচ্ছে ওই এলাকা প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে দুই তিন মাসের মধ্যে হয়ে যাবে। এই কথাটাই সাধারণ মানুষকে আপনারা যদি সুন্দর করে বুঝিয়ে বলেন তাহলে আমাদের কাছে আসে না। এখানে সেবায় অনেক ঘাটতি রয়েছে। পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, কোথায় সমস্যা দেখা দিলে গ্রাহকরা অভিযোগ না দেয়া পর্যন্ত কোন সমস্যার প্রতিকার হচ্ছে না। এখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে আরইবিকে। সম্মেলনে আরইবি চেয়ারম্যান একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন। ওই পাওয়ার পয়েন্টে সমিতিসমূহের বর্তমান অবস্থা, বিভিন্ন অর্জন, ব্যর্থতা, কারিগরি ও আর্থিক বিশ্লেষণ, শিল্প ও অর্থনৈতিক অঞ্চলে দ্রুত বিদ্যুত সংযোগ, লাইন নির্মাণ ও উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়নের পরিকল্পনা, লক্ষ্যমাত্রা, প্রকল্প প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন।
×