ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ইয়াবা ঠেকাতে নাফ নদীতে মাছ ধরা বন্ধ রাখার চিন্তা ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৬ জুলাই ২০১৭

ইয়াবা ঠেকাতে নাফ নদীতে মাছ ধরা বন্ধ রাখার চিন্তা ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ সীমান্ত গলিয়ে মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান আসা কোনভাবেই যেন রোধ করা যাচ্ছে না। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়ত ছোট বা বড় আকারের ইয়াবার চালান ধরা পড়ছে। এছাড়া ফাঁকফোকরে বহু চালান পার পেয়ে যাচ্ছে। সবই আসছে মিয়ানমার সীমান্তে প্রতিষ্ঠিত ইয়াবা উৎপাদনের ফ্যাক্টরি থেকে। এসব ফ্যাক্টরি চিহ্নিত করে দিয়ে বন্ধ করার জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতি বাংলাদেশের পক্ষে দফায় দফায় অনুরোধ করা হলেও তাতে কোন সুফল এখনও মেলেনি। মূলত দুদেশের সীমান্তের মধ্যবর্তী স্থানে নাফ নদী দিয়েই এসব ইয়াবার চালান বাংলাদেশে এসে পৌঁছাচ্ছে, যা সেবন করে দেশের নব প্রজন্মের যুবক যুবতীসহ বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ মাদকাসক্তির কবলে পড়ে দিনে দিনে নিজেদের ধংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় শনিবার চট্টগ্রামে র‌্যাব সেভেনের উদ্ধারকৃত মাদকদ্রব্য ধ্বংসকরণ কর্মসূচীতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ইয়াবার চালান ঠেকাতে নাফ নদীতে জেলেদের মাছ ধরা বন্ধ করার চিন্তা ভাবনা চলছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলে এ কর্মসূচী শুরু হবে। এরপরই নাফ নদীতে যেসব জেলে নিয়মিত মাছ ধরে তাদের তা থেকে বিরত রাখা হবে। তবে এটা পরীক্ষামূলক করা হবে বলে মন্ত্রী ঘোষণা দেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, জেলেরা সমুদ্রে গিয়ে মাছ ধরবে। সেক্ষেত্রে আমাদের কোন বাধা নেই। আমরা শুধু অনুরোধ করব নাফ নদীতে যেন না যায়। এক্ষেত্রে বিজিবি এবং কোস্টগার্ডের নজরদারি থাকবে কড়া। তারা যদি অতিক্রম করে সীমান্তের ওপার থেকে ইয়াবার চালান নিয়ে এলে তা চিহ্নিত করা যাবে। মন্ত্রী প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরার উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, ইলিশের মৌসুমে আমরা ইলিশ না ধরার জন্য কর্মসূচী গ্রহণ করেছি। এতে করে ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে, চাহিদা পূরণ হচ্ছে। এর আগে র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ সীমান্ত ঘেঁষে নাফ নদীর এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ‘নো ফিশিং জোন’ গড়ার প্রস্তাব দেন। তাঁর মতে, মাছ ধরতে গিয়ে ইয়াবার চালান আসছে। এক্ষেত্রে দেশীয় ট্রলারগুলোকে যদি কোন বিশেষ রং দেয়া যায় এবং সংশ্লিষ্ট জেলেদের আইডি কার্ড দেয়া যায় কিনা তা চিন্তা করা যেতে পারে। ছয় মাসের জন্য নাফ নদীর এক কিলোমিটার এলাকাকে নো ফিশিং জোন করে দেখতে পারি। অপরদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে স্বীকার করেন, ইয়াবা বন্ধে মিয়ানমারের সঙ্গে কথা বলেও কোন সুফল মিলছে না। তিনি বলেন, আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে কথা বলেছি। ভয়াবহতা সম্পর্কে তাদের জানাচ্ছি। মিয়ানমারের পক্ষ থেকে অব্যাহতভাবে বলা হচ্ছে আমাদের সঙ্গে তারা কাজ করবে, সহযোগিতা করবে। কিন্তু আমরা সুফলটা পাচ্ছি না। তিনি বলেন, আমরা কোন মাদক তৈরি করি না। এরপর আমরা এর শিকার হচ্ছি। কখনও হেরোইন, কখনও ফেনসিডিল। আর এখন ইয়াবা মহামারী আকার ধারণ করেছে। এক সময় ভারত থেকে আসত ফেনসিডিল। এ ফেনসিডিল আসা বন্ধে ভারত সরকারের সঙ্গে কথা বলে কিছুটা সুফল এসেছে। ভারতীয় বিভিন্ন সীমান্তে ফেনসিডিল উৎপাদন বন্ধ হয়েছে। তারা সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করেছে, যাতে ফেনসিডিল এদেশে না আসে। অনুরূপ প্রক্রিয়ায় ইয়াবা ঠেকাতে সীমান্তে বিজিবির সক্ষমতা বাড়ানোর কাজও চলছে। তিনি বলেন, সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজও হচ্ছে। সীমান্ত চেকপোস্ট (ভিওপি) বাড়ানো হচ্ছে। বিজিবিকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ভূমিপ্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, এমএ লতিফ এমপি, সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, চউক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক আতাহার আলী, সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মাদকের ভয়াবহতা নিয়ে নিজ নিজ অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বক্তব্য দেন দু’জন মাদকসেবী ও একজন অভিভাবক।
×