ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হাসপাতালে বিনামূল্যে দরিদ্রদের চিকিৎসা

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৫ জুলাই ২০১৭

হাসপাতালে বিনামূল্যে দরিদ্রদের চিকিৎসা

নিখিল মানখিন ॥ হাসপাতালে অসহায় ও দরিদ্র রোগীর বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা রেখেছে সরকার। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমাজসেবা অধিদফতরের কার্যক্রম শাখা এটি বাস্তবায়ন করে থাকে। প্রচার না থাকায় দেশের সাধারণ রোগীর অনেকেই সরকারের এই মহৎ উদ্যোগের বিষয়টি বুঝতে পারেন না। অথচ এই কার্যক্রমের মাধ্যমে সারাদেশের হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা প্রাপ্তিতে সহায়তা করা হয়। বিনামূল্যে ওষুধ, সহায়ক যন্ত্রপাতি, কৃত্রিম অঙ্গ, বিভিন্ন চিকিৎসাসামগ্রী ও পথ্য সরবরাহ বা এসব সংগ্রহের জন্য নগদ আর্থিক সহায়তাও দেয়া হয়ে থাকে। পরিধেয় পোশাক প্রদান, রক্ত সরবরাহ বা ক্রয়ে নগদ অর্থ সহায়তা, পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ, অবাঞ্ছিত শিশু পুনর্বাসন এবং রোগের কারণে পরিবারে অবাঞ্ছিত রোগীদের পরিবারে পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করা হয়। আর হাসপাতাল/চিকিৎসা কেন্দ্র স্থানান্তরে সহায়তাসহ রোগীদের স্বাস্থ্য সচেতনতা, প্রাথমিক চিকিৎসা বিষয়ে অবহিতকরণ কার্যক্রমও পরিচালিত হয়ে থাকে। পাশাপাশি গুরুতর অসুস্থতা, অপারেশন ইত্যাদি ক্ষেত্রে মানসিক বিপর্যস্ত রোগী বা রোগীর সঙ্গে পারিবারিক ও সামাজিক যোগাযোগ স্থাপনে সহায়তা প্রদান করা হয়। কর্ম দিবসের সকাল ৮টা হতে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত এ সেবা কার্যক্রম খোলা থাকে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় জানায়, দেশের সকল জেলা সদরে অবস্থিত সরকারী হাসপাতাল, বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল, বিভিন্ন বৃহৎ হাসপাতাল যেখানে দরিদ্র রোগীর চিকিৎসা গ্রহণের হার অধিক এবং উপজেলা পর্যায়ের ৩৪২ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অবস্থিত রোগী কল্যাণ সমিতিতে এ স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। সূত্রটি আরও জানায়, রোগ মানুষের স্বাভাবিক জীবনকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে অসহায় করে তোলে। দুর্দশাগ্রস্ত দরিদ্র রোগীর জন্য অসুস্থতার বিষয়টি চরম অসহনীয়। রোগগ্রস্ত দরিদ্র মানুষকে তাদের মৌলিক অধিকার চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য হাসপাতাল সমাজকর্মের গুরুত্ব ও কার্যকারিতা অপরিসীম। হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যক্রমের মাধ্যমে দরিদ্র-অসহায় রোগীর মানসিক, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, অসুস্থতা বিষয়ক বিভিন্ন সহায়তার পাশাপাশি ও রোগীর সুচিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে রোগীর রোগমুক্তির জন্য চিকিৎসক, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও সহায়তা করা হয়। রোগীর মানসিক শক্তি বৃদ্ধি, চিকিৎসার ব্যয় বহন, চিকিৎসককে রোগীর রোগ ও রোগের কারণ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য প্রদান এবং চিকিৎসা শেষে তার পুনর্বাসনের জন্য সহায়তা প্রদান করা হয়। ১৯৫৯ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এই সেবা প্রথম চালু হয় এবং বর্তমানে দেশব্যাপী সিটি কর্পোরেশন ও জেলা পর্যায়ের ৯ সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালে সমাজসেবা অধিদফতরের মাধ্যমে সেবা কার্যক্রম চালু আছে। এছাড়াও উপজেলা পর্যায়ে ৩৪২ উপজেলায় উপজেলা রোগী কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে এ কার্যক্রমটি সম্প্রসারণ করা হয়েছে। কার্যক্রম বাস্তবায়ন কাঠামো সমাজসেবা অধিদফতরের কার্যক্রম শাখা এ কার্যক্রমটি বাস্তবায়ন করে থাকে। পরিচালক (কার্যক্রম) এর নেতৃত্বে সদর দফতর পর্যায়ে এবং মাঠপর্যায়ে ৮৯ হাসপাতাল সমাজসেবা অফিসার এ কার্যক্রম বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট । উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার উপজেলা রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্যসচিব হিসেবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ কার্যক্রম বাস্তবায়নে সস্পৃক্ত রয়েছেন। জেলা পর্যায়ের ৬৪ উপ-পরিচালক ও ২২ সহকারী পরিচালক মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম তদারকি এবং মাঠ পর্যায় ও সদর দফতরের মধ্যে সমন্বয়সাধন করে থাকেন মাঠ পর্যায়ে রোগী কল্যাণ সমিতি কার্যক্রম বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল সমাজসেবা অফিসার ও সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান/প্রেসিডেন্ট/সভাপতি/নির্বাহী পরিচালক/স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কার্যক্রম বাস্তবায়ন কমিটির যথাক্রমে সদস্যসচিব ও সভাপতি হিসেবে কাজ করেন। স্বজনদের কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে মনোবল বৃদ্ধিতে সহায়তাসহ নাম-পরিচয়বিহীন দরিদ্র মৃত ব্যক্তির সৎকারের ব্যবস্থা করা এবং রোগমুক্তির পর নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান করাও এই কার্যক্রমের অন্যতম কাজ। হাসপাতালে সমাজসেবা কার্যক্রম দরিদ্র ও অসহায় রোগী চিহ্নিতকরণ, রোগীর চাহিদা নিরূপণ, রোগীর চাহিদা অনুযায়ী সহায়তা এবং চিকিৎসককে রোগী সম্পর্কে তথ্য প্রদান করা হয়। রোগীর যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ, কেস ওয়ার্ক তৈরি ও সংরক্ষণ, রোগীর চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে। আর দরিদ্র রোগী সম্পর্কে হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যালয়ে অবহিতকরণের পাশাপাশি কার্যক্রম পরিচালনায় কোন ব্যত্যয় পরিলক্ষিত হলে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার দায়িত্বও পালন করা হয়। আর রোগীর প্রতি সহমর্মী আচরণ করা হয়ে থাকে।
×