ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মাদারীপুরে ছাত্রলীগের দুগ্রুপে সংঘর্ষ ॥ ফাঁকা গুলি ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৩ জুলাই ২০১৭

মাদারীপুরে ছাত্রলীগের দুগ্রুপে সংঘর্ষ ॥ ফাঁকা গুলি ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর, ১২ জুলাই ॥ জেলার সদর থানার ওসি জিয়াউল মোর্শেদের অপসারণ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মেহেদী মোল্লার বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে জেলা ছাত্রলীগের একাংশ। বুধবার বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে কর্মসূচীর শেষ পর্যায়ে ছাত্রলীগের অপর অংশের কর্মীরা ওই সমাবেশে হামলা চালায়। এ সময় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ও শহরের ইটেরপুর এলাকায় ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ ২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষের সময় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মাদারীপুর ৩ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে বিক্ষুব্ধরা। অপরদিকে মাদারীপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান পাভেলুর রহমান শফিক খানের কুকরাইল এলাকার বাসা-বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে বলে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন জানান। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, বুধবার বেলা ১১টার দিকে জেলা যুবলীগ ও ছাত্রলীগ একাংশের উদ্যোগে সদর থানার ওসি জিয়াউল মোর্শেদের অপসারণ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মেহেদী মোল্লার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে শহরের ইটেরপুল এলাকা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে শেষ হয়। সেখানে মানববন্ধন শেষে সমাবেশে করে নেতাকর্মীরা। এ সময় হামলা চালায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগ অপর অংশের নেতাকর্মীরা। এতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের ঘটনা মুহূতের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে শহরের ইটেরপুল এলাকায়। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে শহরবাসী। বিরাজমান দু’গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে আরও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এতে রাস্তার পাশে বেশকিছু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ভাংচুর করে বিক্ষুব্ধরা। এতে গুলিবিদ্ধসহ দু’গ্রুপের ২০ জন আহত হয়। সংঘর্ষের সময় ২ জন পুলিশ কর্মকর্তাও আহত হয়। আহতদের মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী দফায় দফায় সংঘর্ষে ইটেরপুল, জজ কোর্ট চত্বর এবং পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল মোর্শেদ বলেন, ‘ছাত্রলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষ চলছে, এমন খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। শহরের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’ এ বিষয়ে পৌর মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদ বলেন, ‘পুলিশের উপস্থিতিতে আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এ সময় আমাদের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ‘মাতৃভূমি’ হোটেলও ভাংচুর করে। পুলিশ তখন নীরব ভূমিকায় ছিল। যা অত্যন্ত লজ্জাকর। এই ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।’ মাদারীপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান পাভেলুর রহমান শফিক খান বলেন, ‘মানববন্ধন কর্মসূচীর শেষ সময় আমাদের এক ছেলে কোর্টে যাচ্ছিল। এ সময় ওরা তাকে কুপিয়ে আহত করে। আমাদের ছেলেরা ঘটনা জানতে গেলে তারা ওদের ধাওয়া দিলে পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় সন্ত্রাসীরা আমার বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে।’ মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন কুমান দেব বলেন, ‘বর্তমান নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান এমপি গ্রুপ ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি গ্রুপে বিভক্ত। প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মসূচীই পাল্টাপাল্টিভাবে পালন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় দীর্ঘদিন ধরে পাল্টাপাল্টি হামলা-সংঘর্ষ ও উত্তেজনা চলে আসছে। বুধবারের ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ অর্ধশতাধিক টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে। পরে পুলিশ ও র‌্যাব-৮-এর সদস্যরা প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। শহরের ইটেরপুল, কলেজগেট ও পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়েছে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের নেতাকর্মীরা। পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশ ২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হলে তাদের চিকিৎসা দেয়া হয়।’ এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘দুইজন হেভিওয়েট নেতার রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব হওয়ায় আমরা কঠোর অবস্থানে যেতে পারছি না। তবুও দুই গ্রুপের লোকজনকে নিয়ন্ত্রণে এনেছি।’
×