ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

অসাধু ডিলারদের বিরুদ্ধে দ্বিগুণের বেশি দামে বিক্রির অভিযোগ

আমন বীজ সঙ্কটে বীজতলা তৈরিতে হিমশিম কৃষক

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৩ জুলাই ২০১৭

আমন বীজ সঙ্কটে বীজতলা তৈরিতে হিমশিম কৃষক

এমদাদুল হক তুহিন ॥ বীজতলা তৈরির শেষ সময়ে এসে দেশের বিভিন্ন স্থানে আমন বীজ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ‘সরবরাহ কম’ এমন অজুহাত দেখিয়ে এক শ্রেণীর অসাধু ডিলার দ্বিগুণের বেশি দাম আদায় করছে। কৃষক পর্যায়ে কেজি প্রতি সর্বোচ্চ ৩৪ টাকায় বীজ বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও তা কৃষককে কিনতে হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। আর প্রকৃতমূল্য ৩০০ টাকা হলেও বিএডিসির অধিকাংশ ডিলারই ১০ কেজি ওজনের এক বস্তা আমনের বীজ বিক্রি করছে ৭০০ থেকে ৮৫০ টাকা। এতে মৌসুম প্রায় শেষ হয়ে এলেও কোন কোন কৃষককে আমনের বীজতলা তৈরিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ফলে আবাদ কার্যক্রমের শুরুতেই কোন কোন কৃষক প্রায় দিশেহারা। মাঠ পর্যায়ে কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গ ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য ও অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) কর্মকর্তারা বলছেন, বিএডিসির আমন বীজের সরবরাহ কম নয়। অঞ্চলভেদে বিএডিসির বীজ বরাদ্দে কিছুটা তারতম্য হলেও যে সঙ্কটের কথা বলা হচ্ছে তা কৃত্রিম। মূলত ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় কিছু অসাধু অতি মুনাফালোভী ডিলার মাঠ পর্যায়ে বীজের দাম বাড়িয়েছে। কৃষক পর্যায়েও মৌসুমটিতে আমনের বীজ সংগ্রহ কম হয়ে থাকতে পারে। এছাড়া চলতি মৌসুমে আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। ফলে সমন্বিত প্রভাবেই মাঠ পর্যায়ে বীজের দাম বেড়েছে। অসাধু ডিলারদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে জানিয়ে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) চেয়ারম্যান মোঃ নাসিরুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, বিএডিসির যেসব ডিলার অধিক দামে বীজ বিক্রি করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিটি জেলা-উপজেলায় মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর ও অভিযানের তথ্য মোতাবেক যেসব ডিলারের নাম উঠে আসবে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে। তিনি বলেন, বীজের বিলিবণ্টন ও দাম বিষয়ে প্রতিটি জেলা উপজেলায় সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির তদারকি করার কথা। বীজের দাম বৃদ্ধির খবর আসতে থাকায় বিএডিসির পক্ষ থেকে উভয় কমিটিকে চিঠি দেয়া হয়েছে। বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে তাদের তদারকি বৃদ্ধি পেয়েছে। জোরদার হয়েছে মনিটরিং। তবে কৃষক পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, মাঠে তেমন সক্রিয় নয় মনিটরিং কমিটি। চলছে কেবল লোক দেখানো অভিযান। নামমাত্র জরিমানা করেই অভিযান সমাপ্ত হচ্ছে। আর এ সুযোগই বেঁছে নিয়েছে বিএডিসির অসাধু ডিলাররা। এমনকি তাদের বীজ বিক্রয় কেন্দ্রের পাশেই উচ্চমূল্যে আমনের বীজ বিক্রি হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিএডিসির বীজ বিতরণ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে বিএডিসির আমন বীজের মজুদ ছিল ২২ হাজার ৪১৯ মেট্রিক টন। তবে বছরটিতে ১৯ হাজার ৫০৪ মেট্রিক টন বীজের বিক্রি ও ব্যবহার হয়। আর অবিক্রীত থেকে যায় ২ হাজার ৯১৪ মেট্রিক টন আমনের বীজ। আর গত বছর (২০১৬ সাল) আমন বীজের মজুদ ছিল ১৯ হাজার ৫৭৭ মেট্রিক টন। সারা দেশে বিক্রি ও ব্যবহার হয় ১৮ হাজার ৭১ মেট্রিক টন। অবিক্রীত থেকে যায় ১ হাজার ৫০৫ মেট্রিক টন। তবে চলতি মৌসুমে প্রতিষ্ঠানটির আমন বীজের মজুদ মাত্র ১৭ হাজার ৮২৪ মেট্রিক টন। একমাত্র নেরিকা বীজ বাদে মজুদে থাকা প্রায় সব বীজই মাঠে সরবরাহ করা হয়েছে। বীজ বিতরণ বিভাগের এক তথ্য থেকে দেখা গেছে, চলতি মৌসুমে সাধারণ কর্মসূচীর বীজ ১৬ হাজার ১২৯ মেট্রিক টন এবং আপদকালীন মজুদ কর্মসূচীর বীজ ১ হাজার ৬৯৫ মেট্রিক টন। এছাড়া নেরিকা বীজের মজুদ ছিল ২০০ মেট্রিক টন, যা থেকে ইতোমধ্যে ৫৭ মেট্রিক টন মাঠে সরবরাহ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমের জন্য এখন প্রতিষ্ঠানটির হাতে মজুদ আছে একমাত্র নেরিকার ১৪৩ মেট্রিক টন বীজ। এসব তথ্য পর্যালোচনা করে বলা যায়, পূর্বের দুই বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে আমন বীজের মজুদ এবং সরবরাহ উভয়ই কম। তবে বিএডিসির চেয়ারম্যান নাসিরুজ্জামান বলছেন, মাঠ পর্যায়ে বিএডিসির বীজের যতটুকু চাহিদা ছিল ততটুকুই মজুদ করা হয়েছিল। মূলত, পূর্বের বছর বীজ অবিক্রীত থাকায় তারা এ বছর বীজ সংগ্রহ কম করেছে। এছাড়া বীজ অবিক্রীত থাকলে সরকারের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। চলতি বছরটি বিএডিসির জন্য একেবারেই ব্যতিক্রম বলে মনে করছেন তিনি। তার মতে, সাধারণত কৃষক পর্যায়ে বিএডিসির বীজের জন্য এত বেশি চাহিদা থাকে না।
×