ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইতালিয়ান ফুটবল কোচ জিওভান্নি স্কানুর সঙ্গে এক মৌসুমের চুক্তি

ব্রাদার্সের ইতিহাসে প্রথম ইউরোপিয়ান কোচ

প্রকাশিত: ০৭:০৫, ১২ জুলাই ২০১৭

ব্রাদার্সের ইতিহাসে প্রথম ইউরোপিয়ান কোচ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ঘরোয়া ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের খেলা শুরু হবে আগামী ২৮ জুলাই থেকে। লীগ সামনে রেখে ইতোমধ্যে অধিকাংশ ক্লাব অনুশীলন শুরু করে দিয়েছে নিজেদের কোচদের মাধ্যমে। তবে ব্যতিক্রম ছিল ব্রাদার্স ইউনিয়ন লিমিটেড। ‘দ্য অরেঞ্জ ব্রিগেড’ খ্যাত ক্লাবটি অনুশীলন শুরু করতে পারেনি মূল হেড কোচের অভাবে। তবে এখন আর তারা কোচবিহীন নয়। নতুন এক কোচ তারা পেয়ে গেছে। তিনি জাতে ইতালিয়ান। জন্ম ৩ মে, ১৯৭৫। নাম জিওভান্নি স্কানু। ইতালির নুওরোতে জন্ম নেয়া ৪২ বছর বয়সী এই কোচকে মঙ্গলবার ক্লাব ভবনে এক সংবাদ সম্মেলন ডেকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। সেই সঙ্গে ব্রাদার্সের সঙ্গে জিওভান্নির চুক্তির আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। ক্লাবের জার্সিও তুলে দেয়া হয়। এই অনুষ্ঠানে জিওভান্নি ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন ব্রাদার্সের সভাপতি নজরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, ম্যানেজার আমের খান এবং ব্রাদার্সের অন্য কর্মকর্তারা। চুক্তি অনুযায়ী জিওভান্নি ব্রাদার্সের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন আগামী ডিসেম্বর (মৌসুমের শেষ পর্যন্ত)। তবে এই সময়ের মধ্যে যে কোনপক্ষ চুক্তি থেকে অব্যাহতি নিতে পারবে এবং সেটা ক্ষতিপূরণ প্রদানের মাধ্যমে। নেপাল, নাইজিরিয়া ও ভারতের পর ইতালি তথা প্রথম ইউরোপিয়ান কোচ হিসেবে ব্রাদার্সের কোচ হলেন জিওভান্নি। সংবাদ সম্মেলনে কোচের সম্পর্কে বিস্তারিত জানালেও কোচের পারিশ্রমিক নিয়ে জানাতে রাজি হয়নি ব্রাদার্স কৃর্তপক্ষ। তবে একটি সূত্র থেকে জানা গেছে জিওভান্নি মাসিক পাঁচ হাজার ডলার দাবি করলেও ব্রাদার্সের সঙ্গে তার দফারফা হয়েছে চার হাজার ডলারে। সোমবার ক্লাবে এসে ব্রাদার্সের সব ফুটবলারের সঙ্গে পরিচয়পর্বটা সেরে নিয়েছেন জিওভান্নি। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের নিয়ে অনুশীলন শুরু করার কথা ২০০০-২০১৬ পর্যন্ত ইউথ কোচিং, উয়েফা ‘বি’, উয়েফা ‘এ’ এবং উয়েফা প্রো-লাইসেন্সধারী এই কোচের। জিওভান্নির প্রিয় কোচও একজন বিশ^খ্যাত ইতালিয়ান কোচ, ফ্যাবিও কাপেলো। ‘নতুন কাজ, নতুন অভিজ্ঞতা। এটা খুব সুন্দর দেশ। ২০১৩ সালে যখন নাইজিরিয়ান একটি ক্লাবে কোচিং করাই তখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমের খানের সঙ্গে প্রথম যোগাযোগ হয়। তখন থেকেই বাংলাদেশের ফুটবল সম্পর্কে ধারণা হয়। বোকো হারামের মতো সন্ত্রাসী দলের কর্মকা-ের কারণে ওখানে ইচ্ছে সত্ত্বেও বেশিদিন কাজ করতে পারিনি। লাতিন আমেরিকা, ইউরোপ ও আফ্রিকাতে কোচিং করিয়েছি। এশিয়াতে এই প্রথম কাজ করতে যাচ্ছি। তাই বলে ভাববেন না আমি অর্থের লোভে এখানে এসেছি। কেননা আমার কাছে আরও কয়েকটি দেশের অফার ছিল। কিন্তু ব্রাদার্স কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে আমার ভাল লেগেছে, এ জন্যই এখানে আসা। তাছাড়া বিষয়টি আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিচ্ছি।’ সংবাদ সম্মেলনে এভাবেই নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন জিওভান্নি। তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমি জেনেছি বাংলাদেশের ফুটবলের অবস্থা এখন ভাল নয়। এখানকার লীগে প্রচুর নিম্নমানের বিদেশী খেলতে আসার কারণে স্থানীয়দের খেলার মানও নিম্নমুখী। শুনেছি এবার নাকি বিদেশী ফুটবলারের কোটা মাত্র দু’জন। আমার কথা হচ্ছে খারাপমানের দু’জন না এনে ভালমানের পাঁচজন করে বিদেশী ফুটবলারের কোটা করা উচিত। অথবা এদেশের ফুটবলারদের বিদেশী লীগে খেলতে পাঠানো। তাহলেই এদেশের ফুটবলারদের স্কিল বাড়বে। নয়তো কখনই নয়। আমার কোচিং দর্শন হচ্ছে ভাল ফুটবল খেলা, হৃদয় দিয়ে ফুটবল খেলা, কৌশল এবং শারীরিকভাবে ফুটবল খেলা। মাঠে দৌড়ানোই সব নয়, বল দখলের জন্য লড়াই করা।’ ফুটবলারদের উন্নত চরিত্র গঠন এবং কঠোর নিয়মানুবর্তিতার ওপর জোর দিতে চান জিওভান্নি। গত লীগে ব্রাদার্স চতুর্থ হয়েছিল। এবারের লক্ষ্য সম্পর্কে সদালাপী, রসিক ও মিশুক স্বভাবের এই ইতালিয়ান কোচ বলেন, ‘অবশ্যই চারের ওপরে থাকতে চাই। কেমন করব, সেটা আসলে সময়ই বলে দেবে। তবে আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করব।’ কোচিং স্টাইল সম্পর্কে চিরকালীন ইতালিয়ান স্টাইলই পছন্দ জিওভান্নির, ‘প্রথমে ডিফেন্স করা, তারপর আক্রমণ করা।’ আমের খান জানান, আগামী ২/৩ মাসের মধ্যে জিওভান্নিকে সাহায্য করার জন্য নতুন একাধিক কোচিং স্টাফ আনবে ব্রাদার্স। তার আগ পর্যন্ত সহকারী কোচ আরিফুল ইসলাম পান্নু এবং গোলরক্ষক কোচ মহিদুর রহমান মিরাজই দায়িত্ব পালন করবেন।
×