ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীর প্রস্তুতিতে মুখরিত শিল্পকলা

প্রতিভাবান শিল্পীদের সেরা কাজ, বিপুল কর্মযজ্ঞ

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ১০ জুলাই ২০১৭

প্রতিভাবান শিল্পীদের সেরা কাজ, বিপুল কর্মযজ্ঞ

মোরসালিন মিজান ॥ বাইরে থেকে খুব কিছু অনুমান করা যায় না। অত সারা শব্দ নেই। তবে জাতীয় চিত্রশালায় প্রবেশ করতেই চোখ ছানাভরা! শিল্পকলা একাডেমির এই ভবনে অনেকগুলো গ্যালারি। সবকটিতে একসঙ্গে চলছে শিল্পকর্ম স্থাপনের কাজ। কাজ বললে ভুল হবে। কর্মযজ্ঞ। অপেক্ষাকৃত নবীন কিন্তু মেধাবী শিল্পীদের বিভিন্ন মাধ্যমের সেরা কাজগুলো প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। চারুকলা বিভাগের কর্মীদের পাশাপশি শ্রমিকের খাটুনি খাটছেন শিল্পীরা। নিজেদের চিন্তাগুলোকে যথাযথভাবে ফুটিয়ে তোলার আন্তরিক প্রয়াস দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। এই মুগ্ধতা আরও বাড়বে। কারণ আয়োজনটির নাম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী। আগামীর শিল্পী খুঁজে নেয়ার কার্যক্রম শুরু হবে এ মাসেই। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী দেশের সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন। আগামীর শিল্পী খোঁজার উন্নত লক্ষ্য নিয়ে ১৯৭৫ সালের দিকে কার্যক্রমের সূচনা করা হয়েছিল। দ্বিবার্ষিক আয়োজনে প্রায় সব মাধ্যমের কাজ জমা নেয়া হয়। তরুণ ও প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পীরা এতে অংশ নেয়ার জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। জাতীয়ভাবে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের চেষ্টা করেন তারা। আগামী দিনে কারা তারকা শিল্পী হবেনÑ একটি স্পষ্ট বার্তা পাওয়া যায় জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী থেকে। এবার ২২তম আসর। রবিবার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় পৌঁছার আগেই কানে আসে হাতুড়ির ঠুকঠাক। বিভিন্ন কাঠামো নির্মাণ, জোড়া দেয়া, রং করা ইত্যাদি কাজ চলছিল পুরোদমে। কাজের ধরন দেখেই বোঝা হয়ে যায়, ইনস্টলেশন আর্ট বা স্থাপনা শিল্প। আকর্ষণীয় মাধ্যমে একটু একটু করে প্রকাশিত হচ্ছে শিল্পী মনের ভাব। একাধিক গ্যালারি ও এর বাইরের খোলা জায়গায় নিজেদের মতো করে কাজ করছিলেন শিল্পীরা। ১ নম্বর গ্যালারিতে এশিয়ানে বেস্ট এ্যাওয়ার্ড অর্জনকারী শিল্পী টুটুলের কাজ। হানাহানির বিশ্বকে দর্শকের সামনে উপস্থাপন করছেন তিনি। তুরস্কের সমুদ্র সৈকতে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা সিরীয় শিশু আয়নাল কুর্দির কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন তিনি। মানবিক পৃথিবীর দাবি তুলছেন। বাইরের খোলা জায়গায় স্থাপনা শিল্প গড়েছেন মোসা। পুরো কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ২ নম্বর ও ৩ নম্বর গ্যালারি এবং প্লাজায় আরও বেশকিছু ইনস্টলেশন আর্টের কাজ এগিয়ে চলেছে। সব দেখে মনে হলো, এবার স্থাপনা শিল্পের সংখ্যা ও মান দুটিই খুব ভাল। মোট সংখ্যা ৪৭। এগুলোর মধ্যে ৯টি ভিডিও আর্ট। প্রদর্শনীতে ভাস্কর্য থাকছে ৬৩টি। বহুবিধ চিন্তা থেকে এসব ভাস্কর্য গড়া হয়েছে। শ্যামল সরকারের কাজের কথা আলাদা করে বলা যায়। নিখুঁত কাজ। বরাবরের মতোই খুব আকর্ষণ করছিল। পরিত্যক্ত লোহা ও গাড়ির যন্ত্রপাতি দিয়ে কুকুরের অবয়ব গড়েছেন তিনি। ভরপুর প্রাণ দিয়েছেন। দিয়েছেন গতি। শিল্পী পাপিয়ার একটি ভাস্কর্য দেখেও মন ভরে গেল। তার মাধ্যমটি ব্রোঞ্জ। পুরনো ক্ষতিগ্রস্ত একটি বোতলকে আশ্রয়ে নিজের একান্ত ভাবনার প্রকাশ ঘটিয়েছেন শিল্পী। প্রদর্শনীতে চিত্রকর্ম থাকছে ২৬৫টি। অধিকাংই উঠে গেছে গ্যালারির দেয়ালে। সমকালীন নানা বিষয়কে মূর্ত ও বিমূর্ত ধারার চিত্রকর্মে তুলে ধরেছেন শিল্পীরা। ছাপচিত্র মাধ্যমের কিছু কাজ তো চোখে লেগে আছে! সুন্দর কাজ। সমৃদ্ধ ভাবনা। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের ছাপচিত্র সংগ্রহ ভাল হবে বলেই ধারণা করা যায়। সিরামিক মাধ্যমে যে নিরীক্ষা, কোন কোন ক্ষেত্রে অবাক হওয়ার মতো। গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে মডার্ন টেকনিক কাজে লাগিয়েছেন শিল্পীরা। কেবল পোড়ামাটিতে সীমাবদ্ধ না থেকে আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার করেছেন। নানা ধরনের ইফেক্ট গ্ল্যাস লোহা ইত্যাদির ব্যবহার দেখে মুগ্ধ হবেন শিল্পপ্রেমীরা। এছাড়াও নিউ মিডিয়ার ৯টি কাজ থাকছে প্রদর্শনীতে। বিশাল আয়োজন সফল করতে দিন রাত কাজ করছেন চারুকলা বিভাগের কর্র্মীরা। বিভাগের পরিচালক শিল্পী মনিরুজ্জামান বলেন, বড় কাজ। প্রস্তুতি পর্বটাও দীর্ঘ। জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীর জন্য শিল্পকর্ম আহ্বান করা হয়েছিল অনেক আগে। ৬৩০ জন শিল্পী প্রাথমিক আবেদন করেছিলেন। তাদের মধ্য থেকে কাজের মান বিবেচনায় ৩৩২ জনকে নির্বাচিত করা হয়। এখন তাদের শিল্পকর্ম উপস্থাপনের কাজ চলছে। যথাসময়ে সব কাজ শেষ হবে বলে জানান তিনি। চারুকলা বিভাগের ইন্সট্রাকটর ও শিল্পী প্রদ্যোৎ কুমার দাস বরাবরের মতোই ছুটছিলেন শুধু। কখনও এদিক। কখনও ওদিক। কথা বলার সময় নেই। তবুও থামাতে হলো। শিল্পকর্মগুলো তো আপনি মোটামুটি দেখেছেন। কেমন মনে হচ্ছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত যা দেখলাম, এবারের প্রদর্শনী আরও ভাল মানের হবে। প্রায় সবকটি মাধ্যমে চমকিত হওয়ার মতো কিছু না কিছু কাজ থাকছে। আন্তর্জাতিক মানের শিল্পকর্ম গড়েছেন অনেকেই। উপস্থাপন করা হয়ে গেলে তা বোঝা যাবে বলে জানান তিনি। অবশ্য জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী কবে থেকে শুরু হবে তা এখনও চূড়ান্ত করতে পারেনি শিল্পকলা একাডেমি। চলতি মাসের ২১ কিংবা ২২ তারিখের দিকে উদ্বোধন করা হতে পারে বলে জানা গেছে। আর তা চলবে টানা তিন সপ্তাহ।
×