ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ড. মোঃ সোহেল রহমান

প্রশ্ন ফাঁস এবং সম্ভাব্য করণীয়

প্রকাশিত: ০৩:৩৬, ১০ জুলাই ২০১৭

প্রশ্ন ফাঁস এবং সম্ভাব্য করণীয়

বেশ কয়েক বছর আগে ‘প্রশ্ন ফাঁস এবং উট পাখি’ শীর্ষক একটি লেখা লিখেছিলাম। ওই লেখার মূল প্রতিপাদ্য ছিল কিভাবে আমরা প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি নিয়ে উট পাখির এলগরিদম চালিয়ে যাচ্ছি- কম্পিউটার বিজ্ঞানে উট পাখির এলগরিদম মানে হলো সমস্যাটি আসলে ঘটেনি বলে মনে করা। শুনতে অদ্ভুদ লাগলেও, উট পাখির এলগরিদম বা অস্ট্রিচ এলগরিদম কিন্তু একদম ফালতু কোন ব্যাপার নয়; এরও বিশেষ ব্যবহার রয়েছে। ধরা যাক আপনি একটি কম্পিউটিং সিস্টেম নিয়ে কাজ করছেন। আপনি জানেন যে, এই সিস্টেমটি চলার সময়, এমন একটি সমস্যা আসতে পারে যার সমাধানের ব্যবস্থা রাখতে গেলে অনেক কম্পিউটিং রিসোর্স খরচ হবে। কিন্তু এই সমস্যাটি আসার সম্ভাবনা শূন্যের কোঠায়। এখন আপনি কি করবেন? সমস্যাটি সমাধানের ব্যবস্থা রাখবেন (এবং অনেক কম্পিউটিং রিসোর্স খরচ করবেন), নাকি, যেহেতু সমস্যাটি আসার সম্ভাবনা একদমই নেই বললেই চলে, সেহেতু সমস্যাটি আসবে না ধরে নেবেন? এই ধরনের বিশেষ ক্ষেত্রেই আসলে অস্ট্রিচ এলগরিদমের ধারণা কাজে লাগে। যা হোক মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি; সেই সময় থেকেই আমরা প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টিতে উট পাখির এলগরিদম চালিয়ে যাচ্ছি। তার পর পানি অনেক গড়িয়েছে- বার বার অস্বীকার করা হলেও, এখন অন্তত আমরা স্বীকার করে নিয়েছি যে প্রশ্ন ফাঁস বিষয়টি এক কঠোর বাস্তবতা! প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ করার জন্য অনেক কিছু করার প্রয়াসও নেয়া হয়েছে। কঠোরভাবে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে; কিছু বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলেও আমি জানতে পেরেছি- যেমন, প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজটি এখন যতখানি সম্ভব পরে করা হচ্ছে যাতে ফাঁস করার সময় এবং সুযোগ দুইই কমে আসে; প্রশ্নপত্র কেন্দ্র পর্যন্ত নিয়ে আসার ক্ষেত্রেও অনেক সতর্কতা নেয়া হচ্ছে। কিছুটা সাফল্যও হয়ত এসেছে। কিন্তু পরিপূর্ণভাবে প্রশ্ন ফাঁসকে বন্ধ করা যায়নি। আর তার প্রমাণও আমরা পত্রপত্রিকার বিভিন্ন প্রতিবেদনে পেয়েছিÑ আমরা দেখেছি কিভাবে পরীক্ষার ঘণ্টা খানেক বা তার একটু বেশি আগে এখনো প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে এবং তাই ঠিক পরীক্ষার কিছু সময় আগে পরীক্ষার হলগুলোর আশপাশে কিভাবে প্রশ্ন সমাধানের নিবিড় অনুশীলন চলতে থাকে। সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্ররাও এই অনুশীলনে বেশ অংশ নিয়ে থাকে! কি লজ্জা! তো যা বলছিলাম, অনেক চেষ্টা করেও কোন পূর্ণাঙ্গ সমাধানে এখনও আসা যায়নি এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এই ব্যাপারে নিজেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন বক্তব্যের মাধ্যমে। যেমন, প্রযুক্তির এই যুগে, প্রশ্ন ফাঁস ঠেকানো সম্ভব নয় কিংবা এই ধরনের অনেক উচ্চপর্যায় থেকে আসা আরও অনেক আক্ষেপ পত্রপত্রিকার মাধ্যমে আমাদের কানে এসেছে। এই প্রসঙ্গে আমাদের বক্তব্য আসলে খুব সহজ। প্রযুক্তির অগ্রগতিকে ব্যবহার করে সাধিত এই ধরনের অন্যায় কাজকে প্রতিহত করতে হলে অবশ্যই আমাদেরও প্রযুক্তিকেই ব্যবহার করতে হবে। ॥ দুই ॥ মূল সমস্যাটা আসলে কোথায়? আমরা আসলে সকলেই জানি যে, এই পাবলিক পরীক্ষাগুলো একেকটা মহাযজ্ঞের মতো। অনেক আগে থেকেই তাই এর প্রস্তুতি নিতে হয়। প্রশ্ন প্রণয়ন হয় অনেক আগে; প্রশ্ন মডারেশন হয় অনেক আগে; ছাপাতেও হয় যথেষ্ট সময় আগে। একটু আগেই বলেছি, এ পর্র্যন্ত হয়ত অনেকখানি অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু পরীক্ষার দিনের কথা ভাবুন। আর আমরা দেখলাম যে এই সময়ের মধ্যেই এখন মূলত প্রশ্ন ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। হয়ত আরও আগেও হচ্ছে কিন্তু সেইভাবে গণহারে হচ্ছে না কিংবা আমাদের অজান্তেই থেকে যাচ্ছে। কিন্তু মূল কথা হলো, যেহেতু প্রশ্ন করা এবং এই সংক্রান্ত অন্যান্য কাজগুলো অনেক আগেই করতে হয় এবং চূড়ান্তভাবে প্রশ্ন বহন করে পরীক্ষাকেন্দ্র পর্র্যন্ত নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটিও যথেষ্ট সময় হাতে রেখে সারতে হয়, প্রশ্ন ফাঁসের সম্ভাবনা থাকবেই! তো কিভাবে আমরা প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই সময়টাকে একদম শূন্যের কাছাকাছি নিয়ে আসতে পারি তার একটি প্রস্তাবনা আমাদের সর্বজন শ্রদ্ধেয় কায়কোবাদ স্যার বেশ অনেক আগেই দিয়ে রেখেছেনÑ তাঁর প্রস্তাবনা অনুযায়ী প্রশ্ন প্রণয়ন করা হবে পরীক্ষা শুরু হবার অল্প কিছু সময় পূর্বে কেন্দ্রীয়ভাবে এবং প্রশ্নপত্র ছাপা হবে প্রতিটি কেন্দ্রে। প্রশ্নপত্র প্রণয়নের পর সে প্রশ্ন ংবপঁৎবফ হবঃড়িৎশ পযধহহবষ ব্যবহার করে প্রতিটি কেন্দ্রে পৌঁছান হবে এবং অতঃপর সেখানে রক্ষিত প্রিন্টার ব্যবহার করে ঠিক পরীক্ষা শুরু হবার পূর্বে তা ছাপানো হবে। অবশ্য তিনি আরও একটি সুন্দর প্রস্তাব দিয়েছিলেন যাতে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন কিংবা মডারেশনের সঙ্গে যারা যুক্ত থাকেন তারাও সন্দেহের উর্ধে থাকতে পারেন। তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন যে প্রশ্নের বিভিন্ন সেট তৈরি করা হবে আর দৈব চয়নের (ৎধহফড়স হঁসনবৎ) ভিত্তিতে একেবারে শেষ সময়ে এসে মূল প্রশ্নটি চূড়ান্ত হয়ে তবে তা প্রিন্ট করা হবে। বস্তুত, প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে এটি একটি সুন্দর প্রস্তাব বলেই আমার স্বল্প বিদ্যা/বুদ্ধিতে মনে হয়েছিল। কিন্তু কেন তা অদ্যাবধি বাস্তবায়িত করার কোন প্রয়াস নেয়া হলো না তা আমি বুঝতে পারছিলাম না। বোধ করি একটা বাধা হলো এটি বাস্তবায়নের অর্থনৈতিক দিকটি। প্রতিটি কেন্দ্রে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন প্রিন্টার থাকতে হবে। আবার আমরা জানি যে, কোন কারণে ঐধৎফধিৎব ঋধরষঁৎব হতে পারে; সুতরাং, ঋধঁষঃ ঞড়ষবৎধহপব এর তত্ত্বানুযায়ী হয়ত আমাদের একাধিক প্রিন্টারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। যেহেতু প্রশ্ন পরীক্ষার কিছু সময় পূর্বে কেন্দ্রগুলোতে ইলেক্ট্রনিকভাবে পৌঁছতে হবে, সুতরাং নিরবচ্ছিন্ন এবং ংবপঁৎবফ নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। সব মিলিয়ে, আর্থিক সংশ্লেষ তো থাকবেই! আমরা হাজার কোটি টাকা দিয়ে নানা প্রকল্প হাতে নেই- কোন প্রকল্পের বিরুদ্ধে কিছু বলা আমার উদ্দেশ্য নয় বলে কোন প্রকল্পের নাম বলছি না, কিন্তু গুরুত্বের দিক থেকে অনেক অনেক প্রকল্পের চেয়ে এই বিষয়টি বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্প নেয়া আমাদের জন্য অনেক বেশি জরুরী বলে আমার মনে হয়। কিন্তু এই ব্যাপারে তেমন কোন উদ্যোগ নেই কেন? ॥ তিন ॥ আমার কেন যেন মনে হয়, এই বিষয়টি যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তা আমরা সুষ্ঠুভাবে হৃদয়ঙ্গম করতে ব্যর্থ হয়েছি। এই ব্যাপারটি তাই আলোচনার দাবি রাখে। গত কয়েক বছর ধরে প্রশ্ন ফাঁসের এই বিষয়টি আমাদের সমানে কয়েকটা চরম সত্য এবং বাস্তবতাকে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। একদিকে রয়েছে যারা এই প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে সরাসরি জড়িত তারা- তাদের ন্যায়নীতি বোধ যে কোথায় তা চিন্তা করে আমরা শিহরিত হই বিশেষত এই কারণে যে আমরা অনেক ক্ষেত্রেই জানতে পেরেছিÑ এই চক্রের সঙ্গে আমাদের কিছু শিক্ষকরাও জড়িত হয়ে পড়েছেন যাঁরা আমাদের ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যত গড়ার কারিগর! কি লজ্জার বিষয় অথচ এটাই বাস্তবতা! এটা তো গেল একটা দিক। কিন্তু এর আরেকটি আরও ভয়ঙ্কর দিক আছে। আমাদের অনেক ছাত্রছাত্রী ছোটবেলা থেকেই তাদের নীতিকে বিসর্জন দেয়া শিখে যাচ্ছে ফাঁস হয়ে যাওয়া প্রশ্নপত্র নিয়ে তা সমাধান করে পরীক্ষা দেয়ার মাধ্যমে। অনেক ক্ষেত্রে হয়ত অভিভাবকরা তাদের এটি করতে উৎসাহিত করছেন। হয়ত অনেক ক্ষেত্রে বিপরীতটাও ঘটছে। কিন্তু যে বা যাঁরা এ ব্যাপারে নীতি বিসর্জন না দিয়ে শক্ত থাকছেন তাঁরা পরবর্তীতে নানা সমস্যায় পড়ছেন! কিভাবে? মাধ্যমিক পরীক্ষার কথাই ধরুন। প্রশ্ন ফাঁসের সাহায্য নিয়ে, একজন মধ্যম সারির ছাত্র খুব ভাল ফলাফল করে ভাল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে আর একজন খুবই ভাল নীতিবান ছাত্র হয়ত প্রশ্ন খুবই কঠিন হওয়ার কারণে একটা পরীক্ষায় বেশি খারাপ করে ফেলছে। আমরা ওই ছেলেটির কথা জানতে পেরে তাকে খুবই বাহবা দেব সন্দেহ নেই, কিন্তু তাকে ভাল কলেজে ভর্তির সুযোগটি কিন্তু করে দিতে পারব না। আসলে একদম রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিকভাবে আমরা আমাদের কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে নীতি বিসর্জন দেয়ার মানসিকতা তৈরি করে দিচ্ছি। এতে যে প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে, তাদের কাছ থেকে আমরা কি আশা করতে পারি? শিক্ষাকে আমরা বলি জাতির মেরুদ-; কিন্তু যে মেরুদণ্ডের প্রতিটি হাড় অন্যায়ভাবে জোড়া দেয়া, সেই মেরুদণ্ড কি টিকবে? আরেকটা দিক হলো আমরা সকলের প্রতি সমআচরণ এবং সুবিচার (ভধরৎহবংং) নিশ্চিত করতে পারছি না। যাঁরা নীতির প্রশ্নে আপোসহীন, তাঁরা একটা খুব কঠিন লড়াই এ পড়ে গেছেন আর যারা নীতিকে বিসর্জন দিতে কার্পণ্য করছে না তারাই সকল সুবিধাগুলো লাভ করছে। এতে নীতিবানদের মধ্যে স্থান নিচ্ছে চরম হতাশা। আমরা হয়ত অনে বড় বড় বুলি আওড়াতে পারি সত্য ও ন্যায়ের পথ খুব কঠিন ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু যেখানে রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিকভাবে ন্যায় নীতিকে বিসর্জন দেয়াকে আমরা পুরস্কৃত করে যাচ্ছি, সেখানে এই সব বড় বড় বুলি আওড়ে কাজ হবে কি? নীতিবানরা আসলে এসব নীতি কথার চাপে হারিয়েই যাবেন। আসলে তা ছাড়া উপয়াও নাই। নীতি আঁকড়ে বসে থাকলে আমরা তো উপরে ওঠার সমস্ত পথ বন্ধই করে রেখেছিÑ তারা ভাল কলেজে পড়তে পারবে না; এর পর তারা ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে পারবে না। সরকারী-বেসরকারী চাকরির পরীক্ষাগুলোতেও প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা নতুন নয়; সুতরাং সেখানেও তারা হয়ত বাদ পড়ে যাবেন। বাকি থাকল কি? আসলে আমরা যদি প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে কিছু করতে নাই পারি, তাহলে অন্তত সকলের জন্য একটা ষবাবষ-ঢ়ষধুরহম ভরবষফ নিশ্চিত করা দরকারÑ রাষ্ট্রীয়ভাবেই কিছু দিন বা কয়েক ঘণ্টা আগে প্রশ্ন ফাঁস করে দিলে কেমন হয়? তাহলে সকলেই আগে প্রশ্ন পেয়ে গেল এবং তা দেখে প্রস্তুতি চূড়ান্ত করল এবং পরীক্ষা দিল। কমপক্ষে এতটুকু তো নিশ্চিত করা গেল যে কেউ অন্যের থেকে বেশি সুবিধা পেয়ে যাচ্ছে না। বড় দুঃখ এবং লজ্জা নিয়েই এই কথাগুলো বলছি! ॥ চার ॥ ইতোপূর্বে কায়কোবাদ স্যারের সমাধানের কথা বলেছি। যেটা হয়ত আমরা ভাবছি না এই কারণে যে এর সঙ্গে একটা বড় আর্থিক সংশ্লেষ রয়েছে। আবার ঠিক আগের অনুচ্ছেদে যে প্রস্তাবটা দিলাম তা শুনে হয়ত পাঠক রাগ করে আমার লেখা আর পড়বেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন! তবু যাঁরা পড়ছেন, তাদের একটা মাঝামাঝি সমাধানের প্রস্তাবনা দেই। উচ্চ মাধ্যমিকের আইসিটি বিষয়টিকে উদাহরণ হিসাবে নেয়া যাক। এই বিষয়ের লিখিত পরীক্ষা হয় ৭৫ নম্বরের। এখানে ৬টি সৃজনশীল প্রশ্ন থেকে ৪টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়; প্রতিটি প্রশ্ন ১০ নম্বরের। আর বাকি ৩৫ নম্বরের বহুনির্বাচনী প্রশ্ন থাকে। আমরা প্রশ্ন প্রণয়নের সময় ৬টি সৃজনশীল প্রশ্নের জন্য মোট ৬০টি প্রশ্ন প্রণয়ন করব এবং এই ৬০টি প্রশ্নসহই একটি প্রশ্নপত্র ছাপানো হবে। আমরা এ প্রশ্নগুলো পরীক্ষা হওয়ার একদিন আগে রাষ্ট্রীয়ভাবে সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেব। পরীক্ষার ঠিক আগ মুহূর্তে দৈব চয়নের মাধ্যমে এই ৬০টি প্রশ্ন থেকে ৬টি প্রশ্ন কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচন করা হবে। রেডিও, টিভি, ইন্টারনেট ইত্যাদি এর মাধ্যমে পরীক্ষা কেন্দ্রে সেই তথ্য খুব সহজেই পৌঁছে দেয়া যাবে। যেমন, হয়ত ১, ৭, ১৭, ৩৫, ৪০ এবং ৫৩; এই ৬টি নম্বর দৈব চয়নের মাধ্যমে নির্বাচিত করে তা সকল পরীক্ষা কেন্দ্রে জানিয়ে দেয়া হলো। পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগ মুহূর্তে প্রতি কক্ষে এই তথ্যটি পৌঁছে দেয়া হবে আর পরীক্ষার্থীরা বুঝতে পারবে যা তাদের যে বেশ কয়েক পৃষ্ঠার প্রশ্নপত্র দেয়া হয়েছে তার মধ্য থেকে এই নম্বরের প্রশ্নগুলোর মধ্য থেকে যে কোন ৪টির উত্তর দিতে হবে। আগেই বলেছি, আমাদের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা খুবই জরুরী। এর মাধ্যমে তা কিছুটা নিশ্চিত করা সম্ভব। এতে ছাপার খরচ বেশ খানিকটা বেড়ে যাবে কিন্তু তা বোধ করি খুব বেশি হবে না। যেহেতু ৬০টি প্রশ্ন একদিন আগে এমনিতেই পাওয়া যাবে, প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রের ব্যবসায় লাথি পরার কথা। ফলে তারা আর এই কাজে খুব একটা উৎসাহিত হবে না। বহু নির্বাচনী প্রশ্নের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে প্রশ্নের আকার অনেক বড় হয়ে যাবে। তারপরও এই ব্যবস্থাটি বাস্তবায়নযোগ্য বলেই আমার মনে হয়। আর সবকিছু বিবেচনায়, বহু নির্বাচনী প্রশ্ন বাদ দিয়ে দেয়াও যেতে পারে। আমরা জানি যে, মেধামান নির্ণয়ে বহু নির্বাচনী প্রশ্নের কার্যকারিতা নিয়ে এমনিতেই অনেক সন্দেহ রয়েছে। ॥ পাঁচ ॥ আসলে মূল কথা হলো কোন না কোনভাবে আমাদের প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি মোকাবেলা করতে হবে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে। উট পাখির এলগরিদম এখানে প্রযোজ্য নয়। এই নিয়ে অনেক আলোচনা করা দরকার এবং যত টাকাই লাগুক একটা সুষ্ঠু সমাধানে পৌঁছানো প্রয়োজন। আর যদি সমাধানে পৌঁছানো একান্তই অসম্ভব হয়, তবে অন্তত সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার প্রয়াস নিতে হবে। লেখক : অধ্যাপক, বুয়েট
×