ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

সুধীন দাশ ও করুণাময় গোস্বামী স্মরণসভা ধানম-ির কবি ভবনে

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৭ জুলাই ২০১৭

সুধীন দাশ ও করুণাময় গোস্বামী স্মরণসভা ধানম-ির কবি ভবনে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তারা দু’জনেই ছিলেন সঙ্গীতের প্রতি অন্তঃপ্রাণ। সম্প্রতি উভয়েই প্রিয় পৃথিবী ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন অদেখার ভুবনে। একজন হলেন সঙ্গীতজ্ঞ সুধীন দাশ। অপরজন হলেন সঙ্গীত গবেষক, লেখক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. করুণাময় গোস্বামী। একই আয়োজনে নিবেদিত প্রাণ এই সঙ্গীত ব্যক্তিত্বদ্বয়কে স্মরণ করা হলো। সঙ্গীত শিল্পীসহ বিশিষ্টজনদের আলোচনার সঙ্গে গান ও কবিতায় তাদের প্রতি জানানো শ্রদ্ধাঞ্জলি। বৃহস্পতিবার বিকেলে সুধীন দাশ ও করুণাময় গোস্বামীর স্মরণে শোকসভার আয়োজন করে নজরুল ইনস্টিটিউট। ধানম-ির কবি ভবনে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ইমেরিটাস রফিকুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আবদুর রাজ্জাক ভূইয়া। দুই বরেণ্য ব্যক্তিত্বকে নিয়ে স্মৃতিচারণ ও আলোচনা করেন নজরুল স্বরলিপি সত্যয়ন পরিষদের সদস্য আহসান মোর্শেদ, শিল্পী শাহীন সামাদ, নাশিদ কামাল, ডালিয়া নওশীন, বুলবুল মহলানবীশ, সুবীর নন্দী, হাসিনা মমতাজ, অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী, ফেরদৌস আরা, ইয়াসমিন মুশতারি, কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম, ইনস্টিটিউটের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ইকরাম আহমেদ, শিল্পী রেবেকা সুলতানা, শিল্পী সালাহউদ্দিন আহমেদ, শিল্পী ও স্বরলিপিকার সেলিনা হোসেন, ছন্দা চক্রবর্তী, সুধীন দাশের জামাতা হাসান মাহমুদ স্বপন প্রমুখ। সুধীন দাশের পছন্দের গান গেয়ে শোনান ইয়াসমিন মুশতারি, নাশিদ কামাল, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইয়াকুব আলী খান প্রমুখ। নজরুলের কবিতা থেকে আবৃত্তি করেন সীমা ইসলাম। রফিকুল ইসলাম বলেন, সুধীন দাশ জাতীয় ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন জাতীয় কবির মহৎ সৃষ্টিকে বিকৃতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য। করুণাময় গোস্বামী নজরুল সঙ্গীতকে সুধী সমাজে তুলে ধরেছেন। সুধীন দাশ সত্যিকারের দেশপ্রেমিক ছিলেন। তিনি দেশভাগের পর ভারতে চলে যাননি। এমনকি ১৯৭১ সালেও দেশ ছেড়ে যাননি। সে সময় কবি তালিম হোসেনের সহায়তায় দেশে থেকে গিয়েছিলেন। কবি তালিম হোসেন সুধীন দাশের পরিবারকে রক্ষা করেছিলেন। সে জন্য তালিম হোসেনের কাছেও আমরা কৃতজ্ঞ। আবদুর রাজ্জাক ভূইয়া বলেন, গানের প্রতি ছোটবেলা থেকেই বেশ আগ্রহ ছিল সুধীন দাশের। গানের প্রতি একাগ্রতার কারণে শিক্ষাজীবন খুব বেশি দূর এগোয়নি। ১৯৪৮ সালে ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু’ গানটি দিয়ে ঢাকা রেডিওতে গান গাওয়া শুরু করেন। ১৯৫৪ সালে এটাকে নজরুল সঙ্গীত হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। এ সময় নজরুলের গানের বিকৃত ঘটছিল। এ সময় সুধীন দাশ এ গানের বিকৃতি রোধে কাজ শুরু করেন। তার নিরলস প্রচেষ্টার কারণে নজরুল সঙ্গীতকে বিকৃতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। অপরদিকে করুণাময় গোস্বামীও ছিলেন বহুমাত্রিক লেখক। এই দুই ব্যক্তিত্ব আমাদের নিরন্তর প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন। শাহীন সামাদ বলেন, সুধীনদা পৃথিবীতে নেই কিন্তু প্রত্যেক নজরুল সঙ্গীত শিল্পীর হৃদয়ে তিনি আছেন, থাকবেন চিরদিন। তার প্রত্যাশা ছিল শিল্পীরা ভাল করে গান গাইবে শিল্পীরা। সুধীন দাশ সব সময় নামী শিল্পী হওয়ার চাইতে ভাল শিল্পী হওয়ার কথা বলেতেন। এই কণ্ঠশিল্পী আরও বলেন, তার কাছে গান শিখেছি। তার সংস্পর্শে এসে অনেক গান তুলেছি। গান শেখানোর বিষয়ে কখনও ফাঁকি দিতেন না। খুব দরদ নিয়ে শেখাতেন। সুবীর নন্দী বলেন, সুধীন দাশ চলে গেছেন কিন্তু তার কীর্তি রয়ে গেছে আমাদের মাঝে। আগামী প্রজন্মের কাছে তা এক অমূল্য সম্পদ হয়ে থাকবে। তার জীবনাচার খুব সরল ছিল। নজরুল সঙ্গীত নিয়ে গবেষণা খুব বেশি হচ্ছে না। এটাও একজন শিল্পীর জন্য শিক্ষণীয়। প্রচারবিমুখ সঙ্গীতে সমর্পিত প্রাণ। ইয়াসমিন মুশতারি বলেন, সুধীন দাশ পরিবারের সদস্যের মতো ছিলেন। কিন্তু আমার বাবা তালিম হোসেনের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। সুধীন দাশ, করুণাময় গোস্বামী দুজনেই নজরুল গবেষণায় নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। করুণাময় গোস্বামী নজরুলের গানের তাত্ত্বিক দিকটা খুব ভাল বুঝতেন। ফেরদৌস আরা বলেন, সুধীন দাশ নজরুল সঙ্গীতের প্রতি খুব নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। তিনি প্রতিটি শিল্পীকেই তিনি গুরুত্ব দিতেন। ভাল গাইতে পারুক আর নাই পারুক সবাইকে সমান ভালবাসতেন। স্বরলিপিকার সেলিনা হোসেন বলেন, নজরুলের স্বরলিপি থাকার পরেও অনেকে ভুলভাবে গান গাইছে। এ নিয়ে তিনি খুব দুঃখ পেতেন সুধীন দাশ লোক নাট্যদলের যুগ পূর্তির আলোচন সভা ৩৬ বছর আগে ৬ জুলাইয়ের যাত্রা শুরু করেছিল লোক নাট্যদল। প্রতিষ্ঠার তিন যুগ পূর্তি উপলক্ষে দলটি আয়োজন করেছে চারদিনব্যাপী উৎসবের। দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে এক আলোচনা সভার আয়োজন হয়। আগত সকলের বক্তব্যে ছিল দলটির এই পথচলার সাফল্যের কথা। সকলেই বলেছেন লোক নাট্যদলের সাফল্য ঈর্ষা করার মতো। এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। দলের প্রতিষ্ঠাতা ও অধিকর্তা লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে সম্মানিত অতিথি ছিলেনÑ শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার, আইটিআই বিশ^ পরিষদের সাম্মানিক সভাপতি রামেন্দু মজুমদার, নাট্য ব্যক্তিত্ব আতাউর রহমান এবং পশ্চিমবঙ্গের নাট্য গবেষক ড. আশীষ গোস্বামী।
×