ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা সেনানিবাসে পিজিআরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন

বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের স্থান হবে না ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৬ জুলাই ২০১৭

বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের স্থান হবে না ॥ প্রধানমন্ত্রী

বিডিনিউজ ॥ মানুষ এবং আইনশৃঙ্খলা ও সশস্ত্র বাহিনী মিলে যেভাবে লড়ছে, তাতে বাংলাদেশে কোনভাবে জঙ্গীবাদের স্থান হবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার ঢাকা সেনানিবাসে পিজিআর সদর দফতরে বাহিনীর ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে তিনি এ আশাবাদ প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকা- এখন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়লেও বাংলাদেশ সফলভাবে তা মোকাবেলা করছে। সকলে মিলেই কিন্তু এই জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে অত্যন্ত সফলতা অর্জন করেছি। যা বিশ্বব্যাপী একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই ধারাটা আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে। যাতে কোন মতেই বাংলার মাটিতে কোন রকম জঙ্গীবাদের স্থান না হয়। বাংলাদেশে বিক্ষিপ্ত কিছু হামলার গত বছর জুলাইয়ে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে বড় ধরনের জঙ্গী হামলা ঘটে, যাতে ১৭ বিদেশীসহ ২২ জন নিহত হন। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে জঙ্গী দমনে, বিভিন্ন অভিযানে সেনাবাহিনীও অংশ নিচ্ছে। জঙ্গী নিয়ন্ত্রণের মতো মাদক নির্মূলেও সফলতা আশা করছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা কাজ করে যাব, যাতে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে যে দেশ পেয়েছি, সে দেশ বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের দায়িত্ব ও কাজ নিয়েও কথা বলেন শেখ হাসিনা। ‘জাতির পিতার প্রতিষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট কালের আবর্তে আজ স্বমহিমায় উজ্জ্বল ও ঐতিহ্যে ভাস্বর। সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা দায়িত্ব ও রাষ্ট্রাচার অনুষ্ঠানে আপনাদের ভূমিকা আজ সর্বজন স্বীকৃত ও প্রশংসিত।’ ‘রোদ, বৃষ্টি, ঝড়, তুফান সবকিছু উপেক্ষা করেও আপনারা দায়িত্ব পালনে অটল থাকেন। আপনাদের এই একনিষ্ঠ কর্তব্য পালন আমাকে মুগ্ধ করে, গর্বিত করে।’ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ৫ জুলাই পিজিআর প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯১ সালে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের পর রাষ্ট্রপতির পাশাপাশি সরকার প্রধানের নিরাপত্তার দায়িত্ব এই রেজিমেন্টের উপর বর্তায়। এই রেজিমেন্টের যেসব সদস্য দায়িত্ব পালনের সময় আত্মত্যাগ করেছেন তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং স্বজনদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট তার চিরাচরিত সুনাম অক্ষুণœœ রেখে ভবিষ্যতে অধিক সফলতা অর্জনে সক্ষম হোক। আত্মবিশ্বাসী পদভারে তারা আরও সামনে এগিয়ে যাক। আওয়ামী লীগ সরকার আমলে পিজিআর সদস্যদের সংখ্যা বাড়ানো, ভাতা বাড়ানো, আবাসন সমস্যার সমাধানসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার কথা তুলে ধরেন হাসিনা। বাহিনীটির সদস্যদের দক্ষতা ও উৎকর্ষ আরও বাড়াতে প্রশিক্ষণের উপরও গুরুত্ব দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী এ সময় সশস্ত্র বাহিনী আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী করে তুলতে সরকারের পদক্ষেপের কথাও বলেন তিনি। ‘আমরা ফোর্সেস গোল ২০৩০ করে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে আরও আধুনিক ও যুগোপযোগী করার পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চাই। আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা যেন কোন ক্ষেত্রে পিছিয়ে না থাকে; সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা সশস্ত্র বাহিনীকে ঢেলে সাজাচ্ছি।’ এই প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক সময় অনেকে আমাকে প্রশ্ন করেছেন, এটা কেন দরকার, ওটা কেন দরকার, এটা হবে কেন, ওটা আনতে হবে কেন? ‘বড় বড় দেশ, উন্নত দেশ, তাদের সবই আছে। কারণ তাদের সম্পদ আছে। আমাদের হয়ত সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে। তারপরেও আমরা একটা স্বাধীন দেশ। স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে যা যা থাকা দরকার, অল্প পরিমাণেও সেটা থাকতে হবে।’ এ সময় শেখ হাসিনা জনকল্যাণে তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কথাও বলেন। ‘গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত উন্নয়ন করে যাচ্ছি, যার সুফল মানুষ পাচ্ছে।’ খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা, মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর হার কমানো, গড় আয়ু বাড়ানোসহ বিভিন্ন খাতের উন্নয়নচিত্র তুলে ধরেন তিনি। বিদ্যুত উৎপাদন বাড়ানো, বিনামূল্যে বই বিতরণ, স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়ন, গৃহহারাদের ঘর দেয়ার কথাও বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে পিজিআরের কমান্ডার ব্রিগেডিয?ার জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর হারুনও বক্তব্য রাখেন। উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক।
×