ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশের হার ও সংসদ সদস্যদের মানসম্মান বোধ - স্বদেশ রায়

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ৬ জুলাই ২০১৭

পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশের হার ও সংসদ সদস্যদের মানসম্মান বোধ - স্বদেশ রায়

ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতিগণ সর্বসম্মতিক্রমে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছেন। হাইকোর্টের রায়ে এমনও বলা হয়েছিল, যেহেতু আর্টিকেল ৭০ বহাল আছে, পার্লামেন্ট মেম্বাররা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবেন না, তাই বিষয়টি সংসদের হাতে ছেড়ে দেয়া যায় না। মি. সিনহাও সুপ্রীমকোর্টে এই মামলা চলাকালে বলেছিলেন, সংবিধানে আর্টিকেল ৭০ কেন? এর অর্থ দাঁড়ায় কিছু কিছু বিচারক বলতে চান, সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে মতামত দিতে পারবেন না। যে বিচারকগণ ছাত্র জীবনে কোন প্রগতিশীল বড় ছাত্র সংগঠন করে এসেছেন তাঁরা সংসদ সদস্য অর্থাৎ রাজনীতিবিদদের সম্পর্কে এমন মন্তব্য কখনও করবেন না। তাঁরা রায় দিলে কখনও এই ধরনের চিন্তা ভাবনা ওই রায়ে থাকবে না। কারণ, তাঁরা রাজনীতিবিদদের চরিত্র জানেন। এ দেশে বার বার সামরিক শাসন আসার ফলে আমাদের মনোজগতে সামরিক কালচার এমনভাবে গেড়ে বসেছে যে, আমরা সব সময়ই রাজনীতিবিদদের হেয় করতে, মূর্খ বলতে পছন্দ করি। একথা বলে এ সমাজে পারও পাওয়া যায়। রাজনীতিবিদরা যে শুধু একাডেমিক শিক্ষায় শিক্ষিত নন, মানুষ ও সমাজকে নিয়ে কাজ করতে করতে তারা প্রাকটিক্যাল সমাজবিজ্ঞানী ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হয়ে ওঠেন এ সত্য আমরা উপলব্ধি করি না। তাঁদের ওপর গবেষণা করেই পিএইচডি ডিগ্রী পেতে হয় এই সত্যও আমরা ভুলে যাই। যাহোক, ষোড়শ সংশোধনী মামলায় কিন্তু সরকার হারেনি। হেরেছে পার্লামেন্ট। পার্লামেন্ট হেরে যাওয়ার অর্থ জনগণ হেরে যাওয়া। বিএনপি অবশ্য এর ভিতর দিয়ে জনগণের বিজয় দেখেছে। বিএনপি সেনাপতির দল আর ওই সেনাপতিকে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে সাহায্য করেছিল কিছু বিচারপতি। তাই কিছু বিচারপতির রায়ে যখন পার্লামেন্ট হেরে যাবে তখন বিএনপি তাদের জন্মসূত্রে পাওয়া রক্তের তাড়নায় তা নিয়ে উল্লাস করতেই পারে। তবে তাদের প্রতিক্রিয়া এত দ্রুত এসেছে যে, তাতে এমন মনে হওয়া বিচিত্র নয় রায় তাদের আগের থেকে জানা ছিল। আর একটি বিষয়, ঠিক ওই দিন সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলেন ফরহাদ মজহার। বিএনপি তাৎক্ষণিকভাবে জানাল মতপ্রকাশ বন্ধ করার জন্যে সরকার তাকে অপহরণ করেছে। বিষয়গুলো মোটেই কাকতালীয় নয়। আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। স্বাধীনতার পর থেকে একের পর এক ঘটনা দেখে দেখেই আমরা বড় হয়েছি। আমরা ৭৫-এর শেষের দিকের দিনগুলো দেখেছি, জিয়া ও এরশাদ আমলের প্রতিটি দিন আমাদের কাছে এখনও স্পষ্ট। আমরা সায়েম সাহেব ও সাত্তার সাহেবের আগ্রহও দেখেছি আবার তাদের অসুস্থ হওয়াও দেখেছি। ৭৩-এ সিরাজ সিকদার, মওলানা ভাসানীর কার্যক্রম দেখেছি, ৭৪-এর দুর্ভিক্ষের সময় দেশী-বিদেশী চক্রান্ত দেখেছি, ৭৫-এর গণবাহিনী দেখেছি, ৯১-এর সূক্ষ্ম কারচুপিতে বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের ভূমিকা দেখেছি, ২০০১-এ বিচারপতি লতিফুর রহমান ও বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের সিভিল ক্যু দেখেছি, তার সঙ্গে আইনজ্ঞ হিসেবে ড. কামাল ও ব্যারিস্টার ইশতিয়াকের ভূমিকা দেখেছি। এভাবে বলতে গেলে মহাভারত হয়ে যাবে। তবে এটুকু বলতে পারি, এ মুহূর্তে জনগণের এই পরাজয়ের ভিতর লতিফুর রহমান ও সাহাবুদ্দিনের সিভিল ক্যুর সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন বর্তমানে তাদের কয়েক জনের অদ্ভুত ভূমিকা দেখছি। তাদের তৈরি সংবিধান, তাদের তৈরি আইনকে তাঁরা নিজেরাই ভুল বলছেন। অথচ এরা কথায় কথায় বলেন, ৭২-এর সংবিধানে ফিরে যেতে হবে। তাই এই সব কুশীলবের ভূমিকা যেমন হিসাবে নিতে হবে, তেমনি বিএনপির দ্রুত প্রতিক্রিয়া, পাশাপাশি ফরহাদ মজহার নাটক কোনটাই বাদ দেয়ার নয়। এর সঙ্গে আরও বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে, ফরহাদ মজহারের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস্ বাংলাদেশে তিনজনকে চিঠি দেয়, সেই তিন জনের মধ্যে একজন প্রধান বিচারপতি, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নেই। দেশের সবকিছু মিলে এখন স্পষ্ট, দেশ বড় একটি ষড়যন্ত্রের কবলে। মুনতাসীর মামুন আগেই হুঁশিয়ার করেছেন, তিনি লিখেছেন, ‘প্রধান বিচারপতির কারণে মিডিয়ায় প্রধানমন্ত্রী স্পেস পাচ্ছেন না।’ মুনতাসীর মামুন তার স্বভাব সুলভ স্যাটায়ারিক ভাষায় কঠিন একটি কথা বলেছেন। তিনিও আমাদের মতো সাধারণ মানুষ। আমাদের কাছে বড় মানুষ। ক্ষমতাসীনদের কাছে হয়ত অত বড় নন, তাই তাঁর কথা খেয়াল করা হয়নি বা হচ্ছে না। তাঁর লেখার এক মাস না যেতেই এশিয়ান হিউম্যান রাইটস তার একটি প্রমাণ দিল। এই অবস্থা একদিনে ঘটেনি। আজকের এ অবস্থার জন্য সংসদ সদস্যরা, রাজনীতিবিদরাই দায়ী। তাঁরা ছাড় দিয়ে দিয়ে এখানে নিয়ে এসেছেন। মি. সিনহা প্রকাশ্য আলোচনা সভায় দেশের সকল সংসদ সদস্যকে অজ্ঞ বলেছেন। আমাদের পার্লামেন্ট মেম্বারদের তা গায়ে লাগেনি। না হয় ভয় পেয়ে পিছিয়ে এসেছেন। একমাত্র মঈনুদ্দিন খান বাদল ছাড়া কোন সংসদ সদস্য এ নিয়ে টু শব্দটি করেননি। ওপেন কোর্টে মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে ‘নামমাত্র’ বলা হয়েছে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি শুধু রাষ্ট্রের প্রধান নন, তিনি সংসদ দ্বারা নির্বাচিত। তাঁর মানসম্মান দেখার দায় সংসদের। রাষ্ট্রপতির মানসম্মানের সঙ্গে গোটা দেশ ও জাতির মানসম্মান জড়িত। কিছু রাজাকার, শান্তিবাহিনীর সদস্য ছাড়া কেউই দেশের রাষ্ট্রপতিকে কোন অসম্মানজনক কথা বলতে পারে না। অথচ রাষ্ট্রপতিকে ‘নামমাত্র’ বলা হলেও আমাদের সংসদ সদস্যরা কোন দায়বোধ দেখাননি যে, তাদের এ নিয়ে প্রতিবাদ করার দরকার আছে। তাঁরা সংসদে অনেক কিছু নিয়ে ফেটে পড়েন। অথচ এখানে তাঁরা পিছু হটেছেন। আমাদের এ্যাটর্নি জেনারেল টেলিভিশনের পর্দায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে মি. সিনহার তুলনা করেছেন। আমাদের সংসদ সদস্যরা, আমাদের আইনমন্ত্রী এ নিয়েও এ্যাটর্নি জেনারেলকে কিছুই বলার দায়বোধ দেখাননি। আর্টিকেল ৭০ আছে বলে সংসদ সদস্যদের হাত-পা বাঁধা যে বিচারপতি বলেন তার ওই রায়ে তিনি ৭২-এর সংবিধানকে একটি দুর্ঘটনা বলে উল্লেখ করেন। অর্থাৎ রায়ের ভিতর দিয়ে তিনি আমাদের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করেছেন। কারণ, ’৭২-এর সংবিধান দুর্ঘটনা হলে স্বাধীনতাও দুর্ঘটনা হয়। আমাদের সংসদ সদস্যরা সেখানেও নিশ্চুপ থেকে গেলেন। খোঁজ নিলেন না কে এই বিচারপতি! তাঁর কোন আত্মীয় এখন বাংলাদেশে কী করছে? যাহোক, লেখার শুরুতে বলেছিলাম, যে বিচারপতিরা প্রগতিশীল বড় ছাত্র সংগঠন করে এসেছেন ছাত্রজীবনে তাঁরা রাজনীতিবিদদের নিয়ে অমন মন্তব্য করবেন না যে, আর্টিকেল ৭০ আছে বলে, রাজনীতিবিদরা স্বাধীনভাবে মতামত দিতে পারবেন না। এটা বিচারপতি তাঁর নিজের মাপে রাজনীতিবিদদের মেপে অমন মন্তব্য করেছেন। তিনি কখনই ভাবতে পারেন না, একজন সংসদ সদস্য তাঁর মতামতকে উর্ধে তুলে ধরার জন্যে প্রয়োজনে বিপক্ষে ভোট দিয়ে দল থেকে পদত্যাগ করবেন, শেষ পর্যন্ত সংসদ সদস্য পদ হারাবেন। রাজনীতিবিদদের কাছে এই সংসদ সদস্য পদটি পাওয়া ও হারানো কোন বিষয় নয়। রাজনীতিকদের এই উচ্চ সীমায় কখনই ওই সব জাজদের চিন্তার জগৎ ঢুকবে না- কারণ তাঁরা তো বিচারপতি হওয়ার জন্যে ওই সব সংসদ সদস্যের বাড়ির সোফার কাপড়ের অবস্থা কি করেন তা অনেকেই জানেন। সংসদ সদস্যদের যখন অজ্ঞ বলা হয় তারা কেন ওই জ্ঞানীদের প্রকৃত অবস্থান উন্মোচন করে দেন না সংসদে? কেন তারা সেগুলো সংসদে দাঁড়িয়ে জাতির কাছে বলেন না? একজন ক্ষুদ্র সাংবাদিক হিসেবে জানি, উচ্চাসনে যাওয়ার জন্যে কে কতবার রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের পিএসের বাসায় গেছেনÑঅন্য কোথায় কোথায় গেছেন তা আর নাই বা উল্লেখ করি। এ জন্যে তাঁদের এ ধরনের চিন্তার কোন দোষ দেয়া যায় না। তাঁরা তাঁদের মাপেই রাজনীতিবিদদের মাপেন। কিন্তু সংসদ সদস্য মানসিকভাবে কতদূর যেতে পারবেন এটা যদি আজ বিচার বিভাগ নির্ধারণ করে দেয়, তাহলে তো একজন নাগরিক হিসেবে ভয় পেতে হয়, ভবিষ্যতে হয়তো কোন বিচারপতি বলবেন, ফরিদ কোন মতেই ফারহানাকে বিয়ে করতে পারবেন না। কারণ, ফারহানার মন বোঝার ক্ষমতা ফরিদের নেই। অর্থাৎ সাধারণ মানুষের প্রেম, ভালবাসা, দাম্পত্য জীবনও তাঁরা নিয়ন্ত্রণ করবেন। তাছাড়া যখন অসদাচরণের দায়ে বিচারপতি অপসারণ আইন বাতিল হয়নি, তার আগেই প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার অনুমোদন ও নির্দেশক্রমে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের প্যাডে দুদক চেয়ারম্যানকে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির দুর্নীতি তদন্ত না করার জন্য চিঠি লেখা হয়। যার স্মারক নং ৫০৬/২০১৭ এসসি (এডি) । সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তী প্রধান বিচারপতির নির্দেশক্রমে দুদককে চিঠির মাধ্যমে জানান ওই অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির বিরুদ্ধে তাঁর দুর্নীতি তদন্ত না করার জন্য। চিঠিটি হুবহু এখানে উল্লেখ করছিÑ “সূত্র : দুদক.অ.প. মা.ল/মা.ল/৯০/২০১৬/৭৫৬৯ তারিখ ০২/০৩/২০১৭ খ্রিঃ, দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রধান কার্যালয়, ১ সেগুন বাগিচা, ঢাকা ১০০০। উপর্যুক্ত বিষয় ও সূত্রের প্রেক্ষিতে নির্দেশিত হয়ে জানানো যাচ্ছে যে, মাননীয় বিচারপতি জনাব জয়নুল আবেদীন দীর্ঘকাল বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ এবং আপীল বিভাগের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্ব পালনকালীন সময় (* কালীন অর্থই সময় তবে সুপ্রীম কোর্ট থেকে যেভাবে ভুল বাংলা লেখা হয়েছে সেটাই এ লেখায় হুবহু রাখা হলো) তিনি অনেক মামলার রায় প্রদান করেন। অনেক ফৌজদারী মামলায় তাঁর প্রদত্ত রায়ে অনেক আসামির ফাঁসিও কার্যকর হয়েছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মাননীয় বিচারপতি কর্র্র্তৃক প্রদত্ত রায় সকলের ওপর বাধ্যকর। এহেন পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ আদালতের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির বিরুদ্ধে দুদক কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তাঁর প্রদত্ত রায়সমূহ প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং জনমনে বিভ্রান্তির উদ্রেক ঘটবে। ২। বর্ণিত অবস্থায়, সাবেক মাননীয় বিচারপতি জনাব জয়নুল আবেদীন-এর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের কোনরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমীচীন হবে না মর্মে সুপ্রীমকোর্ট মনে করে। ৩। বিষয়টি আপনার সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে প্রেরণ করা হলো।” বিচারপতি জয়নুল আবেদীন যে অর্থ পাচার করেছেন সে বিষয়ে দুদকের সার সংক্ষেপে স্পষ্ট বলা হয়েছে। দুদকের সার সংক্ষেপ নথিতে বলা হয়েছে গখঅজ প্রেরণের স্মারক নং ও তারিখ দুদকঃ বিঃ অনুঃ ও তদন্ত ১/১০০-২০১০/১২২১৮, তারিখ ১৬/০৬/২০০১১। যে দেশে গখঅজ প্রেরণ করা হয়েছে সে দেশের নাম : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দুদকের ওই সারসংক্ষেপের ৯ নম্বরে বলা হয়েছে। “অনানুষ্ঠানিকভাবে পত্রটির সঠিকতা যাচাই করা হয়েছে। পত্রটি স্বাক্ষরকারী জনাব অরুণাভ চক্রবর্তী মৌখিকভাবে জানিয়েছেন যে, প্রধান বিচারপতি মহোদয়ের অনুমোদন ও নির্দেশক্রমে প্রেরিত পত্রটিতে তাঁর স্বাক্ষর সঠিক রয়েছে।” দুদকের এই সারসংক্ষেপে জানা যাচ্ছে, সাবেক বিচারপতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থপাচার করেছেন। এই অপরাধের বিচার বা তদন্ত যেন না হয় সেজন্য ‘সুপ্রীম কোর্ট মনে করে’ এ কথা বলে প্রধান বিচারপতির নির্দেশে দুদককে চিঠি দেয়া হচ্ছে। চিঠিতে ‘সুপ্রীমকোর্ট মনে করে’ বলা হয়েছে বাস্তবে এটা প্রধান বিচারপতির নিজস্ব সিদ্ধান্ত না ফুলকোর্টের সিদ্ধান্ত তা পরিষ্কার করার দায় অবশ্য অন্য সকল মহামান্য বিচারপতির। উল্লিখিত চিঠি ও দুদকের সারসংক্ষেপের অংশ বিশেষ উল্লেখ করার পরে এখন দেশের মাননীয় সংসদ সদস্যদের কাছে প্রশ্ন, জনগণ কি তাদের ভোট দিয়েছে দেশের কিছু লোককে আইনের উর্ধে রাখার জন্যে? সোজা কথায় একবার যিনি বিচারপতি হবেন তিনি দেশের সকল প্রচলিত আইনের উর্ধে থাকবেন! তিনি মানি লন্ডারিং করলে দুদক তাঁর তদন্ত করতে পারবে না? তিনি যদি কাউকে খুন করেন তখন কি বলা হবে, তার দেয়া রায় প্রশ্নবিদ্ধ হবে অতএব তাকে খুনের মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে? আর এগুলো যাতে চলতে পারে এজন্যই কি সংসদের হাত থেকে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা কেড়ে নেয়া? এ প্রশ্ন কি এখন আসবে না? যে সংসদ রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করতে পারে সেই সংসদের কাছে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা থাকবে না এটাও কি জনগণের প্রতিনিধি ও জনগণের জন্য অপমানের নয়? দেশের সংসদ সদস্যদের কাছে আরও প্রশ্ন, তাদের কি দায় নেই, এই বিষয়ে কোন বিহিত করা, যিনি বা যে ব্যক্তি বিচারক হিসেবে এই অপরাধীকে বাঁচানোর জন্যে এ চিঠি লিখলেন, তিনি কি অসদাচরণের দায়ে অভিযুক্ত হবেন না? বিচারক অপসারণ করা যাবে কি যাবে না এই ধরনের মামলায় বসার ও তার রায় দেয়ার কোন নৈতিক অধিকার কি তিনি রাখেন, দুদককে ওই চিঠি দেয়ার পর? বাস্তবে তিনি বিচার করতে বসার বা রায় দেয়ার অর্থই দাঁড়ায় অপরাধীদের পক্ষ সমর্থনকারীর একজন হয়ে রায় দেয়া। জনগণ সংসদ সদস্যদের শুধু রাস্তাঘাট বানানোর জন্যে সংসদে পাঠাননি। তাদের পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশকে রক্ষা করার জন্যও সংসদে পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশের মতো ভূ-রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশকে নিয়ে সব সময়ই ষড়যন্ত্র হবে। এই ষড়যন্ত্র তাদের রুখতে হবে। বর্তমান বাস্তবতা বলছে, সংসদ ও সংসদ নেত্রী অনেক দেরি করে ফেলেছেন। তবুও এখনও কিছু সময় আছে পিপলস রিপাবলিক ও দেশের গণতন্ত্র যেন বিপদে না পড়ে তা দেখুন। আর পিছু হটে কখনই জয়লাভ করা যায় না। সাহস দিয়েই জয়লাভ করতে হয়। [email protected]
×