ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা থাকছে ২৪ ঘণ্টা, হটলাইন চালু

চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণে জনবল বৃদ্ধির তাগিদ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৪ জুলাই ২০১৭

চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণে জনবল বৃদ্ধির তাগিদ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বহুল আলোচিত চিকুনগুনিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে মশক নিধন কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে জনবল বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। সোমবার বিকেলে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরশনের মেয়র সাঈদ খোকনকে উদ্দেশে করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, চিকুনগুনিয়া প্রাণঘাতী রোগ না হলেও এর প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংস এবং সম্ভাব্য প্রজননস্থল শনাক্ত করে নির্মূল করতে হবে। মশক নিধনে সিটি কর্পোরেশনে লোকবল ঘাটতি রয়েছে। তাই দ্রুত এই সমস্যার সমাধানের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জনবল কম থাকলে দ্রুত জনবল নিয়োগের ব্যবস্থা করুন। ‘চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে গৃহীত পদক্ষেপ’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনে চিকুনগুনিয়া রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকারে সারাদেশেই ব্যাপক জনসচেনতা সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনে আরও সচেতনতামূলক কর্মসূচী গ্রহণের তাগিদ দিয়ে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বাসা-বাড়ি, ফ্ল্যাট, অট্টালিকায় যেসবস্থানে এডিস মশা নিধনে জমে থাকা পানি অপসারণে জনগণকে আরও সচেতন করতে হবে। যে দেশ জঙ্গী দমন করতে পারে, সে দেশ মশা নিধন করতে পারবে না, তা হতে পারে না। আমরা জঙ্গী দমন করতে সফল হয়েছি, এডিস মশা নিধন করতেও সফল হবো। জবাবে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন এডিস মশা নিধনে তাঁদের নিরলস প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে বলেন, আগামী ৪ থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্য চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণে আসবে। চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে কার্যক্রম চলছে। জনসচেতনতাই পারে এই রোগ প্রতিরোধ। ইতোমধ্যে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা কমে এসেছে। চিকুনগুনিয়া নিয়ে হতাশা বা আতঙ্কিত হবার কিছুই নেই। তিনি সিটি কর্পোরেশনের সীমাবন্ধতা ও লোকবলের অপ্রতুলতার কথা তুলে ধরে বলেন, দ্রুতই আরও লোকবল নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। ইতোমধ্যে শতাধিক লোককে মাস্টার রোলে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আরও দেয়া হবে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব সিরাজুল হক খান তাঁর স্ত্রীসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের চিকুনগুনিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, নিজের পরিবারের অবস্থা দেখেই বুঝতে পারি জনগণের কেমন দুর্ভোগ হচ্ছে। শুধু মন্ত্রণালয় বা সিটি কর্পোরেশন নয়, এর পাশাপাশি জনগণকেও উদ্বুদ্ধ করতে হবে এডিস মশা নিধনে। প্রয়োজনে রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও সমর্থকদেরও যদি এ কাজে মাঠে নামানো যায় তবে দ্রুতই তা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (সিডিসি) অধ্যাপক ডাঃ সানিয়া তাহমিনা। তিনি জানান, সারাদেশে চিকুনগুনিয়া পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য জন্য পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার (চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণকক্ষ) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সপ্তাহের ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা কাজ করার জন্য একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়েছে এবং জনসাধারণের যে কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে সর্বক্ষণিক হটলাইন চালু করা হয়েছে। এ সম্পর্কিত তথ্য জানতে ও জানাতে ০১৯৩৭১১০০১১, ০১৯৩৭০০০০১১ নম্বরে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে একাধিক সচেতসতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি তিনি নগরীর সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে চারপাশ পরিষ্কার রাখতে অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, লেকের পানিতে বা বড় জলাশয়ের পানিতে এডিস মশা জন্মায় না। এই মশা জন্মায় স্বচ্ছ পানিতে। তাই এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র বিনষ্ট করতে হবে। এর জন্য দরকার সবার সচেতনতা। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঢাকা শহরের ৪৭ ওয়ার্ডের ৫০ স্থানে এডিস মশার সার্ভে পরিচালনার মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া চলছে। দেশের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালের পাঁচ শতাধিক ডাক্তার, নার্স, সেকমোদের চিকুনগুনিয়া গাইড লাইনের ওপর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। ডিভিশন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ডিভিশনাল ডাইরেক্টর, সিভিল সার্জন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু প্রতিরোধ এবং এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৪৫ ওয়ার্ডে ডাক্তার, নার্স ওয়ার্ড কাউন্সিলর, ইমাম, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে অবহিতকরণ ও সচেতনতামূলক সভা পরিচালনা করা হয়েছে।
×